মঙ্গলবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ০৯:১৪:২৬

যে পাঁচ কারণে ইসরায়েল-আমিরাত শান্তি চু'ক্তি এতটা গুরুত্বপূর্ণ

যে পাঁচ কারণে ইসরায়েল-আমিরাত শান্তি চু'ক্তি এতটা গুরুত্বপূর্ণ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য'স্থতায় ইসরায়েল এবং সংযু'ক্ত আরব আমিরাতের উচ্চ পর্যায়ের প্রতি'নিধিদল আজ হোয়াইট হাউসে এক ঐতিহাসিক শা'ন্তিচু'ক্তিতে সই করবে। এই অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন বাহরাইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও। সেখানে বাহরাইনের পক্ষ থেকে ইসরায়েলের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক স্থাপনের ঘোষণা দেওয়া হবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত সপ্তাহে এ রকমটাই জানিয়েছেন। এই শা'ন্তিচু'ক্তি যে পাঁচটি কারণে গুরুত্বপূর্ণ, তা বিশ্লে'ষণ করেছেন বিবিসির মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক সংবাদদাতা জেরেমি বোয়েন। 

উপসাগরীয় দেশগুলো দেখছে বাণিজ্য এবং আরো অনেক কিছুর সম্ভাবনা : উ'চ্চাকা'ঙ্ক্ষী আমিরাতিদের সাহায্য করবে এই চু'ক্তি। সংযুক্ত আরব আমিরাত উপসাগরীয় অঞ্চলে নিজেদের এক সাম'রিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তাদের দেশ হয়ে উঠেছে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং পর্যটনের এক বড় কেন্দ্র। মনে হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র এই শান্তিচু'ক্তির ব্যাপারে সংযু'ক্ত আরব আমিরাতকে রাজি করিয়েছে অত্যা'ধুনিক স'মরা'স্ত্র দেওয়ার প্র'তিশ্রু'তির মাধ্যমে। অতীতে এ রকম স'মরা'স্ত্র সংযু'ক্ত আরব আমিরাতের না'গালের বাইরে ছিল, তারা শুধু এমন স'মরা'স্ত্র কেনার স্বপ্নই দেখতে পারত। এ রকম স'মরা'স্ত্রের মধ্যে আছে এফ-৩৫ যু'দ্ধবিমান এবং ইএ-১৮জি গ্রোলার ইলে'কট্রনিক যু'দ্ধবিমান। 

সংযুক্ত আরব আমিরাতের সা'মরিক বা'হি'নী এমনিতে যথেষ্ট সুস'জ্জিত। এই বাহি'নীকে তারা যু'দ্ধে পাঠিয়েছে লিবিয়া এবং ইয়েমেনে। কিন্তু তাদের সবচেয়ে সম্ভাব্য বড় শ'ত্রু কিন্তু ইরান। উপসাগরের ঠিক উ'ল্টো দিকে যে দেশটি। ইরানকে সং'যু'ক্ত আরব আমিরাত যে রকম স'ন্দে'হের চোখে দেখে, ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্রও তাই। বাহরাইনও স'ন্দে'হ করে ইরানকে। ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত ইরান দাবি করত, বাহরাইন তাদের দেশেরই অংশ। বাহরাইনের শা'সকরা সুন্নি। কিন্তু দেশটির সংখ্যাগরি'ষ্ঠ মানুষ শিয়া। কাজেই সুন্নি শা'সকরা এই শিয়াদের ইরানের সম্ভাব্য 'ফিফথ কলাম' বা 'ঘরের শ'ত্রু বিভী'ষণ' বলে ভাবেন।

এই দুটি উপসাগরীয় দেশ অবশ্য ইসরায়েলের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নিয়ে রাখঢাক কমই করে। এখন তারা ইসরায়েলের সঙ্গে খোলাখুলি বাণিজ্য করার আশায় তাকিয়ে আছে। ইসরায়েল হচ্ছে প্রযুক্তির দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে অ'গ্রসর দেশগুলোর একটি। কভিড ম'হামা'রি যখন ছিল না, তখন ইসরায়েলিরা কিন্তু ছুটি কা'টাতে প্রচুর বেড়াত। কাজেই উপসাগরীয় দেশগুলোর ম'রুভূমি, সৈকত আর শপিং মলে যেতে তারা উ'দগ্রী'ব থাকবে। কাজেই দু'তরফের জন্যই হয়তো এটি এক ভালো ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ।

মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের নিঃ'স'ঙ্গতা কমবে: সংযু'ক্ত আরব আমিরাত এবং বাহরাইনের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ব্যাপারটা ইসরায়েলের জন্য সত্যিকার অর্থেই এক বিরাট অর্জন। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তাদের ইহুদি রাষ্ট্র এবং আরব রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে 'আয়'রন ওয়াল' বা 'লৌহ প্রা'চীরের' কৌ'শলে বিশ্বাসী। ১৯২০-এর দশকে এই কৌ'শলের কথা প্রথম বলা হয়। এই কৌ'শলের মূল কথা হচ্ছে, ইসরায়েলকে এতটাই শ'ক্তিশা'লী হতে হবে, যাতে করে শেষ পর্যন্ত আরবরা বুঝতে পারবে ইসরায়েলের অ'স্তি'ত্ব স্বীকার করে নেওয়া ছাড়া আর কোনো পথ নেই। কিন্তু ইসরায়েল আবার মধ্যপ্রাচ্যে একদম একঘরে হয়ে থাকতে চায় না। 

মিসর আর জর্ডানের সঙ্গে শান্তিচু'ক্তি হয়েছে সত্যি, কিন্তু সম্পর্ক কখনোই উষ্ণ ছিল না। তবে উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের বেলায় ইসরায়েল হয়তো একটু বেশি আশাবাদী হতে পারে। কারণ জেরুজালেম আর অ'ধিকৃ'ত ফিলিস্তিন অঞ্চল থেকে এই দেশগুলো অনেক দূরে। আর ইরানের বি'রু'দ্ধে জোট আরো শ'ক্তিশা'লী করার ব্যাপারটা তো আছেই। নেতানিয়াহু মনে করেন, ইরান হচ্ছে তার দেশের এক নম্বর শ'ত্রু। মাঝেমধ্যে তিনি ইরানের নেতাদের তু'লনা করেন নাৎ'সিদের সঙ্গে। 

অন্যদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সম্ভাব্য অ'স্ত্র চু'ক্তি সম্পর্কে তার যে আ'পত্তি ছিল, তিনি আপাতত সেটা চে'পে গেছেন। তবে নেতানিয়াহু স্বদেশের রাজনীতিতে কো'ণঠা'সা হয়ে আছেন। তার বি'রু'দ্ধে দুর্নী'তির অ'ভিযো'গ উঠেছে, এই অ'ভিযো'গে তার বিচার হতে পারে। তিনি জেলে যেতে পারেন। করোনা ভাইরাস মো'কাবে'লায় তিনি শুরুটা ভালোই করেছিলেন; কিন্তু এরপর ব্যাপারটা একেবারেই তা'লগো'ল পা'কিয়ে গেল। বিরো'ধী দলগুলো এখন প্রতি সপ্তাহেই জেরুজালেমে তার বাসভবনের বাইরে তার বিরুদ্ধে বি'ক্ষো'ভ করছে। কাজেই এ রকম এক দুঃ'স'ময়ে হোয়াইট হাউসে এমন এক শা'ন্তিচু'ক্তির অনুষ্ঠান তার জন্য যেন আশীর্বাদ হয়ে এসেছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতির জন্য এক বিরাট সাফল্য : এই চু'ক্তি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্যও নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ। ট্রাম্প ইরানের বি'রু'দ্ধে সর্বোচ্চ চা'প প্রয়ো'গের কৌ'শলে বিশ্বাসী। এই শান্তিচু'ক্তি তার সেই কৌ'শলের পক্ষে সমর্থন আরো জো'রালো করবে। আর নির্বাচনের বছর এটি তার জন্য একটি দারুণ অ'স্ত্রও বটে। তিনি যে সব সময় বড়াই করে বলেন, বিশ্বে সবচেয়ে বড় 'ডিল-মেকার' হচ্ছেন তিনি, সেটা এখন আরো জো'র গলায় বলতে পারবেন।

তার যে কোনো কাজ, যেটিতে ইসরায়েলের সুবিধা হয় বা আরো সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সুবিধা হয়, সেটা আমেরিকার ইভা'নজে'লিক্যা'ল খ্রিস্টানদের খুশি করবে। এই ইভা'নজেলি'ক্যাল খ্রিস্টানরা ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থনের একটা বড় ভিত্তি। ইরানের বি'রু'দ্ধে ট্রাম্প আমেরিকার বন্ধুদের যে জোটের কথা বলেন, সেটা অনেক বেশি ভালোভাবে কাজ করবে, যদি উপসাগরীয় আরব রাষ্ট্রগুলো ইসরায়েলের সঙ্গে গো'পন সম্পর্কের খো'লস থেকে বেরিয়ে প্রকা'শ্যে খো'লাখু'লি সম্পর্ক স্থাপন করে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ত'থাক'থিত 'শতাব্দীর সেরা সমঝোতা' বলে যে শান্তিচু'ক্তির কথা বলতেন, সেটার কোনো নি'শা'না দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু ইসরায়েল এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে এই সমঝো'তা, যেটার নাম দেওয়া হয়েছে 'আব্রাহাম চুক্তি', তা মধ্যপ্রাচ্যের শক্তির ভারসাম্যে এক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনবে। ট্রাম্পের হোয়াইট হাউস স্বাভাবিকভাবেই এটিকে তাদের পররাষ্ট্রনীতির এক বিরাট অর্জন বলে বর্ণনা করছে। 

ফিলিস্তিনিরা মনে করছে, তারা বিশ্বাসঘা'তক'তার শি'কার: আবারও ফিলিস্তিনিদের হাতে ধ'রিয়ে দেওয়া হয়েছে কাঠের চামচ। আব্রাহাম চু'ক্তিকে তারা এরই মধ্যে বিশ্বা'সঘা'তক'তা বলে বর্ণনা করেছে। আরব দেশগুলোর মধ্যে বহু বছরের একটা ঐকমত্য ছিল। সেটি হচ্ছে, ইসরায়েলের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক একমাত্র ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার মাধ্যমেই হতে পারে। কিন্তু ফিলিস্তিনিরা যখন পূর্ব জেরুজালেম আর পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি দ'খ'লদা'রির মধ্যে দুঃ'স'হ দিন কা'টাচ্ছে, গাজার খোলা কারাগারে ব'ন্দি, তখন ইসরায়েল এই আরব রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে তার সম্পর্ক সুদৃঢ় করছে।

আবুধাবির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানই কার্যত সংযু'ক্ত আরব আমিরাতের শা'সক। তিনি বলেছিলেন, এই চু'ক্তির বিনিময়ে ইসরায়েলকে রাজি হতে হবে যে পশ্চিম তীরের এক বিরাট ফিলিস্তিনি এলাকা তারা নিজেদের সীমানাভুক্ত করবে না। নেতানিয়াহু অবশ্য পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনি অঞ্চল সীমানাভুক্ত করার পরিকল্পনার জন্য প্রচ'ণ্ড আন্তর্জাতিক বিরো'ধিতার মুখে পড়েছিলেন। এ কারণে তাকে মনে হচ্ছিল যেন এই পরিক'ল্পনা থেকে পিছু হ'টতে হচ্ছিল। এখন অবশ্য তিনি এই রাজনৈতিক কা'না-গ'লি থেকে বেরিয়ে আসতে যেন মুখ র'ক্ষার একটা সুযোগ পেলেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে এই চু'ক্তির সুবাদে।

তবে এই কাজ তারা কখনোই করতে পারত না সৌদি আরবের সম্মতি ছাড়া। আরব শা'ন্তিচু'ক্তি প্রণ'য়নকারী অন্যতম দেশ হচ্ছে সৌদি আরব, যাতে ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতার দাবি তোলা হয়েছিল। সৌদি বাদশাহ সালমান হচ্ছেন ইসলামের সবচেয়ে পবিত্র দুটি স্থানের জিম্মাদার। এই সুবাদে তিনি বিপুল কর্তৃত্বের অধিকারী ইসলামী দুনিয়ায়। কাজেই হঠাৎ করে তিনি ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়ে বসবেন এমন সম্ভাবনা কম। তবে তার ছেলে এবং রাজসিংহাসনের উত্তরাধিকারী, যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান হয়তো অতটা আ'পত্তি করবেন না। 

ইরানের জন্য এক নতুন মাথাব্যথা: ইরানের নেতারা এই চু'ক্তির ব্যা'পক নি'ন্দা করেছেন। এটা শুধু বা'গা'ড়ম্বর নয়। আব্রাহাম চু'ক্তি আসলেই তাদের একটা বাড়তি চা'পের মুখে ফেলবে। ইরানের বি'রু'দ্ধে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে নিষে'ধা'জ্ঞা জারি করেছেন, সেটা এমনিতেই যথেষ্ট অর্থনৈতিক সং'ক'ট তৈরি করেছে। এখন তাদের জন্য যোগ হলো এক নতুন কৌ'শ'লগত মাথাব্য'থা। ইরান থেকে ইসরায়েলের বিমানঘাঁ'টিগুলো বহুদূরে। কিন্তু সংযু'ক্ত আরব আমিরাতের বি'মা'নঘাঁ'টিগুলো উপসাগর পাড়ি দিলেই অপর তীরে। ইরানের পরমাণু স্থাপনার ওপর যদি কখনো বিমান হা'ম'লার কথা ওঠে, তখন এই বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। ইরানিদের জন্য ন'ড়াচ'ড়ার জায়গা যেন আগের চেয়ে অনেক বেশি সং'কু'চিত হয়ে এলো। সূত্র : বিবিসি বাংলা

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে