বুধবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০২১, ১১:৫৮:০৫

ঝাঁকে ঝাঁকে মৃত্যু হচ্ছে পাখি, মুরগির! তৈরি হয়েছে আতঙ্ক

ঝাঁকে ঝাঁকে মৃত্যু হচ্ছে পাখি, মুরগির! তৈরি হয়েছে আতঙ্ক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: করোনাভাইরাসের প্রকোপ পুরোপুরি কমেনি। তারইমধ্যে কেরালা, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, হিমাচল প্রদেশ-সহ দেশের একাধিক রাজ্যে থাবা বসিয়েছে বার্ড ফ্লু বা অ্যাভিয়েঞ্জা ইনফ্লুয়েঞ্জা। তার ফলে ঝাঁকে ঝাঁকে মৃত্যু হচ্ছে পাখি, মুরগির। মড়ক দেখা দিচ্ছে পাখির।

বাংলায় এখনও সংক্রমণ ধরা না পড়লেও কিছুটা হলেও আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যেই মুরগির মাংস এবং ডিম বিক্রির হার কমেছে বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা। বার্ড ফ্লু সংক্রমণের চেয়ে দ্রুত গতিতে ছড়াচ্ছে তাকে কেন্দ্র করে গুজব আর আতঙ্ক। তাতেই মাথায় হাত মুরগি ব্যবসায়ীদের। কমেছে বিক্রি। কমেছে দামও। প্রতি কিলোগ্রামে দাম কমেছে গড়ে ৩০-৪০ টাকা। যদিও বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, বার্ড ফ্লু নিয়ে অযথা আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। প্রয়োজনীয় সাবধনতা অবলম্বন করলে সংক্রমণের আশঙ্কা এড়ানো যাবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ময়ূর, হাঁস, এবং মুরগি ফ্লুতে সবচেয়ে বেশি সংক্রামিত হয়। বার্ড ফ্লু ভাইরাস অ্যাভিয়েঞ্জা ইনফ্লুয়েঞ্জা মানুষের শ্বাসযন্ত্রের ক্ষতি করে।

H5N1 ভাইরাসটি এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এই ভাইরাস শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা সৃষ্টি করে। এটি সরাসরি পাখি থেকে শূকর এবং বিড়ালকে সংক্রামিত করে এবং পরে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। তবে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করে বার্ড ফ্লু সংক্রমণ সহজেই এড়ানো যায়।

মানুষও কি সংক্রমিত হতে পারেন? বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এবার যে প্রজাতির ফ্লু ভাইরাস থাবা বসিয়েছে, তা পাখিদের থেকে মানুষের দেহে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তবে ঝুঁকির মাত্রা ঢের কম। মূলত যাঁরা মুরগির খামারের ব্যবসায় যুক্ত বা যাঁরা সংক্রমিত ও মৃত পাখির সরাসরি সংস্পর্শে আসেন, তাঁদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা বিধি মেনে চললে সংক্রমণ এড়ানো যাবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) মতে, সাধারণত একজন মানুষের শরীর থেকে অপর একজনের শরীরে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে না। সেই সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ। এবার অ্যাভিয়েঞ্জা ইনফ্লুয়েঞ্জার ফলে ভারতে এখনও পর্যন্ত কোনও মানুষের সংক্রমণ হওয়ার খবর মেলেনি। তবে, ডিম বা চিকেন খেতে হলে সাবধানতা জরুরি। জেনে নিন সেগুলি কী কী-

গোলাপি না হওয়া পর্যন্ত চিকেন রান্না করুন: বার্ড ফ্লু'র আতঙ্কে ডিম বা মাংস খাওয়া বন্ধের কোনও প্রয়োজন নেই। নেই কোনও বিধিনিষেধ। শুধুমাত্র রান্নার আগে আলাদা জায়গায় ভালোভাবে কাঁচা মাংস এবং ডিম ধুয়ে নিতে হবে। তারপর তা ভালোভাবে সেদ্ধ করতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, রান্না করা খাবার থেকে বার্ড ফ্লু ছড়ানোর কোনও প্রমাণ নেই। কারণ তাপের ফলে সেই ভাইরাস মরে যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই ভাইরাসটি সংক্রামিত পাখি শ্বাসনালীতে বাস করে। তাই ফ্লু-এ আক্রান্ত প্রাণী ও পাখির কাঁচা মাংস খেলে মানুষের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়তে পারে। তাই চিকেন গোলাপি না হওয়া পর্যন্ত ভালো করে রান্না করুন। পরে সেটি পরিবেশন করুন।

সংক্রমিত পাখি থেকে দূরে থাকুন: পাখিরাই এই ফ্লু ভাইরাসের বৃহত্তম বাহক। সংক্রামিত হওয়ার পর তাদের মল এবং পালকের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়িয়ে দেয়। তাই বার্ড ফ্লু এড়াতে মৃত বা আহত পাখিদের স্পর্শ করা উচিত নয়। পাখিদের যদি ধরতেই হয়, তাহলে আগে গ্লাভস পরুন। পাখির ঝরে যাওয়ার পালক এড়িয়ে যাওয়া উচিত। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সাধারণ ফ্লু'র মতো জ্বর, কাশি, পেশিতে ব্যথা, গলাব্যথা, খাবারে অরুচির মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তবে গুরুতর সংক্রমণ হলে শ্বাসকষ্ট পর্যন্ত হতে পারে। তা থেকে একাধিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যেতে পারে।

সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে: হাঁস, মুরগি বা পশুপাখি ধরার পর ভালো করে সাবান দিয়ে দুই হাত ভালভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। হাঁস, মুরগি বা পশুপাখির ঘরে কাজ করার ক্ষেত্রে, কাপড় দিয়ে নাক ও মুখ ভালভাবে ঢেকে নিতে হবে। পশুপাখি নাড়াচাড়ার পর হাত না ধুয়ে চোখ, নাক বা মুখ স্পর্শ করা যাবে না। অসুস্থ হাঁস, মুরগি বা অন্যান্য পাখির মল সার অথবা মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। মৃত হাঁস, মুরগি এবং পাখি মাটিতে পুঁতে ফেলার সময় অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। হাঁস, মুরগি বা অন্যান্য পাখি ধরার পর যদি কেউ জ্বর, সর্দি কিংবা কাশি জাতীয় কোনো রোগে ভোগেন, তাহলে দ্রুত চিকিত্‍সকের পরামর্শ নিতে হবে এবং অবশ্যই রোগে আক্রান্ত বা মৃত হাঁস, মুরগির সংস্পর্শে আসার বিষয়টি চিকিত্‍সককে জানাতে হবে।-এই সময় 

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে