শনিবার, ০৬ মার্চ, ২০২১, ১১:২৫:১১

বিজেপির ভয়ে উল্লেখযোগ্য হারে মুসলমান প্রার্থী কমালেন মমতা ব্যানার্জী!

বিজেপির ভয়ে উল্লেখযোগ্য হারে মুসলমান প্রার্থী কমালেন মমতা ব্যানার্জী!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : তৃণমূল কংগ্রেস সংখ্যালঘু মুসলমানদের তোষণ করে চলে। এই অভিযোগ বহুদিন ধরেই করছেন রাজ্য তথা বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডারা বারবার রাজ্যে এসে এই ইস্যুতে তৃণমূলকে ব্যাপক আক্রমণ করছেন। 

যদিও তৃণমূল সবসময় এই অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে। কিন্তু তাদের গা থেকে তকমাটা যায়নি। এই অবস্থায় শুক্রবার তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জী যে পূর্ণাঙ্গ প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করলেন, সেখানে লক্ষ্যণীয়ভাবে দেখা গেল সংখ্যালঘু মুসলমান প্রার্থীর সংখ্যা গতবারের চেয়ে অনেকটাই কমেছে। গতবার ৫৭ জন সংখ্যালঘু প্রার্থী দিয়েছিল তৃণমূল। এবার সেটা কমে হয়েছে ৪২। অর্থাত্‍ ২৬ শতাংশের বেশি হারে সংখ্যালঘু প্রার্থী কম দিয়েছেন মমতা। সংখ্যার নিরিখে গতবারের চেয়ে ১৫ জন কম রয়েছেন।

স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টি নিয়ে কাটাছেঁড়া শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। মূলত হিন্দু ভোট নিয়ে রাজনীতি করে বিজেপি। সেখানে তৃণমূল যত বেশি সংখ্যালঘু প্রার্থী দাঁড় করাবে, তত গেরুয়া শিবির সুবিধা পাবে। তত বেশি তারা বিষয়টি নিয়ে ধর্মীয় মেরুকরণের সুযোগ পেয়ে যাবে। বলাবাহুল্য সেদিকে নজর দিয়েই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। তাই দেখা গিয়েছে নলহাটিতে বিপুল সংখ্যক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ থাকা সত্ত্বেও, সেখানকার বিধায়ক মইনুদ্দিন শামসকে এবার প্রার্থী করেনি তৃণমূল। 

এরকম বেশ কয়েকটি জায়গায় প্রার্থী পরিবর্তন করেছেন মমতা। প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে এটা তৃণমূলের পক্ষে মাস্টারস্ট্রোক হবে বলে মনে করছেন জোড়াফুল শিবিরের শীর্ষ নেতৃত্ব। তবে এই সিদ্ধান্ত নিলেও তৃণমূলকে বিষয়টি নিয়ে প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে পড়তে হয়েছে আজকেই। নলহাটিতে টিকিট না পেয়ে ক্ষুব্ধ মইনুদ্দিন শামস নজিরবিহীন আক্রমণ করেছেন বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে।

তিনি বলেন, "আমি টুপি পরা মুসলমান। তাই বালি, পাথর, কয়লা চুরি মেনে নিতে পারিনি। অনুব্রত মণ্ডলের হাতে দুর্নীতি করে, চুরি করে টাকা তুলে দিতে পারিনি বলেই আমাকে প্রার্থী করা হয়নি।" একথা বলার পাশাপাশি তিনি তৃণমূল ছাড়ছেন বলেও জানিয়ে দিয়েছেন। অর্থাত্‍ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একাংশ বিষয়টি যে একেবারেই ভাল চোখে দেখছে না, সেটাও পরিষ্কার। তৃণমূলের এই সিদ্ধান্তে এটা পরিষ্কার হয়ে গেল যে, বিজেপি তাদের ঘাড়ের ওপর কতটা নিঃশ্বাস ফেলছে, সেটা তারা প্রকাশ করে ফেলল এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে।

তৃণমূল বিশেষ কোনও ধর্মীয় সম্প্রদায়কে শুধু প্রাধান্য দেয় না, তাদের চোখে সব ধর্মের মানুষই সমান। এই বার্তা ভোটারদের দিতে চেয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সিংহভাগ ভোট পাওয়ার ব্যাপারে তারা অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে অন্য দলগুলির চেয়ে। রাজ্যে কমবেশি প্রায় ১০০টি কেন্দ্রে জয় পরাজয় সংখ্যালঘু ভোটের উপর অনেকটাই নির্ভর করে। কিন্তু এটাও ঠিক তৃণমূল যতবেশি সংখ্যালঘু প্রার্থী দেবে, উল্টোদিকে ততবেশি ধর্মীয় মেরুকরণের সুবিধা পাবে বিজেপি। সেই লক্ষ্যেই এবার তৃণমূল গতবারের চেয়ে অনেকটাই কম আসনে সংখ্যালঘু প্রার্থী দিয়েছে। বিজেপিকে নির্বাচনের আগে কোনও ক্ষেত্রেই যে তৃণমূল সুবিধা করে দিতে চায় না, দলনেত্রীর এই সিদ্ধান্তে সেটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। 

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে