মঙ্গলবার, ১৮ মে, ২০২১, ০৭:৫০:২৪

এই ফিলিস্তিন ইস্যু সারা বিশ্বের মুসলিমদের এক করে তুলতে পারে।

এই ফিলিস্তিন ইস্যু সারা বিশ্বের মুসলিমদের এক করে তুলতে পারে।

ইসরাইলি আক্রমণে প্রায় ২০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। ইসরাইলে মারা গেছে ১০ জন। ভবন বা স্থাপনা ধ্বংসের ব্যাপারেও একই অনুপাত দেখা যাবে। তবে সবচেয়ে বড় কথা, অ্যাডভান্স টেকনোলজির বিরুদ্ধে হামাস এখন পর্যন্ত রেসিস্ট করে আসছে। অনেকেই অতিমাত্রায় লিবারেল সাজতে গিয়ে বলেন 'হামাস কেন রকেট মারে। যদি না মারত, তাইলে তো ইসরাইল কিছু বলত না।' ওই ভাইদের জানিয়ে রাখি, হামাস যখন রকেট না মারে, তখনো হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় জায়োনিস্টদের সেনারা। তাদের বাড়িঘর দখল করে নেয়। বাচ্চাদেরকে আঘাত করে। সে যাই হোক। এবারের যুদ্ধে হামাসের বেশ কিছু সাফল্য রয়েছে। খোলা চোখে ফিলিস্তিনিদের মৃত্যু আমাদেরকে আন্দোলিত করলেও আমাদের ইতিবাচক দিকগুলোও বিশ্লেষণ করা উচিৎ। ভিয়েতনাম যুদ্ধে আমেরিকার ৫৭ হাজারের মতো সেনা নিহত হয়। যেখানে ভিয়েতনামিজ মারা যায় ১০ লাখেরও উপরে। যুদ্ধে কিন্তু ভিয়েতনামই জয়ী। আফগান-রাশান যুদ্ধে রাশানদের চেয়ে তালিবানের ক্ষয়ক্ষতি বেশি হলেও যুদ্ধে তালিবানই জিতে। একইকথা খাটে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারেও। আমাদের ক্ষয়ক্ষতি বেশি হলেও আমরা জিতেছি। যুদ্ধে ক্ষয়ক্ষতির চেয়েও যুদ্ধে কে জিতেছে- সেটা বুঝতে দেখতে হবে কার উদ্দেশ্য হাসিল হয়েছে। আফগানিস্তানের ৫০ ভাগের মতো এলাকা এখন তালিবানের নিয়ন্ত্রণ আছে। আমেরিকা চলে যাওয়া মাত্রই বাকিটাও দখল করে নেবে। ফলে আমেরিকা যতই বলুক যে তারা জয়ী হয়েছে, আসলে তালেবানই জিতেছে। কারণ, তাদেরকে ক্ষমতা থেকে সরাতে পারেনি। হামাসের এবারের অর্জন- ১. আয়রন ডোমকে একটু বাজিয়ে দেখা হলো। যদি একসাথে অনেক বেশি রকেট বা মিসাইল ছোড়া হয় তবে সেগুলো আয়রন ডোম যথাযথভাবে শনাক্ত করতে পারে না। হামাসের তিন হাজারের বেশি রকেটের মধ্যে শনাক্ত করতে পেরেছে ৬০ ভাগের মতো। আয়রন ডোমের এ দুর্বলতা জানা গেল। ২. এত দিন একচেটিয়া পশ্চিমা ভাষ্য মানুষ গোগ্রাসে গিলত। সিএনএন, নিউ ইয়র্ক টাইমস, গার্ডিয়ান, রয়টার্স ইত্যাদির কথা বিশ্বাস করত। আল জাজিরা, টিআরটি, আনাদলু এজেন্সি সবাইকে একদম ন্যাংটা করে দিয়েছে। ফলে প্রথম দিকে ইসরাইলের নাম না নিলেও এখন মোটামুটি পশ্চাত্যের সব মিডিয়াই ইসরাইলের নাম নিচ্ছে। মিডিয়া যুদ্ধে হেরে যাওয়ার ফলেই মূলত আল জাজিরার বিল্ডিং ধসিয়ে দেয় ইসরাইল। এপি না থাকলে হয়তো আল জাজিরার টিমকে মেরে ফেলতেও দ্বিধা করতো না। ৩. ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। কিন্তু এ যুদ্ধে মাহমুদ আব্বাসের খুব একটা গুরুত্ব নেই। জো বাইডেন মাহমুদ আব্বাসকে কল দিলেও তিনিও জানেন যে এ যুদ্ধ আবু মাজেন থামাতে পারবে না। হামাসের গুরুত্ব ফিলিস্তিনে তো বটে, মুসলিম অমুসলিম সব রাষ্ট্রের কাছেই বৃদ্ধি পাবে। ৪. এবারের যুদ্ধে অভূতপূর্ব সমর্থন পেয়েছে ফিলিস্তিন। আইরিশ এমপি, অস্ট্রিয়ান এমপি, মার্ক রাফালো, ইমরান খান, খোমেনি, এরদোগান, শেখ হাসিনাসহ বেশিরভাগ বিশ্বনেতারাই এর পক্ষে ছিলেন। লন্ডন, যুক্তরাষ্ট্র, প্যারিস, তুরস্ক, কাতারসহ মোটামুটি সব দেশেই ক্ষুদ্র বা বৃহৎ র‌্যালি হয়েছে। ফিলিস্তিন ও হামাসের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর পাশাপাশি যোদ্ধাদের মোটিভেট করতেও ভূমিকা রাখবে। ৫. পশ্চিমারা হামাসকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে দাঁড় করানোর যে প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে সেটা মুখ থুবড়ে পড়েছে। সারা বিশ্ব দেখেছে সন্ত্রাসী কারা। ৬. সবচেয়ে বড় অর্জন হচ্ছে হামাসসহ প্রতিটা মুসলিম বিশ্বের কাছে পরিষ্কার হয়েছে, কারা মুসলমানদের বন্ধু আর কারা শত্রু। মানবতার বুলি আওড়িয়ে কারা নিরপরাধ শিশুদের হত্যায় উৎসাহ দেয়। প্রতিটা রাষ্ট্রকে দেখতে হবে ফিলিস্তিনিদের চোখ দিয়ে। তারা যাদেরকে ভালো বলবে, তারা ভালো আর যাদেরকে খারাপ বলবে তারা খারাপ। সেভাবেই সম্পর্ক পুনর্গঠন হবে। ৭.ইসরাইলকে যতটা অপরাজেয় বা অপ্রতিরোধ্য হিসেবে দেখানো হয় আসলে তারা ততটা না। তারা প্রচণ্ড ভীতু একটা দেশ। ভালো রেঞ্জের কিছু মিসাইল হলেই ইসরাইলকে থামানো সম্ভব। ৮. হামাসকে টেকনোলজি দিয়ে সাহায্য করেছে ইরান, গোয়েন্দা টিম দিয়ে সাহায্য করছে আরো কয়েকটা মুসলিম দেশ। ট্রেনিং দিচ্ছে সিরিয়ায়। ফলে এ দেশগুলোর মাঝে ফিলিস্তিনির কারণে একটা সংযোগ তৈরি হবে। এক হয়ে গাজা উদ্ধারে সর্বাত্মক সহায়তা করতে পারে যেভাবে আজারবাইজানকে করেছে তুরস্ক। ৯. এখন থেকে হয়তো মুসলিম শিশুরা ফিলিস্তিনি শিশুদের মতো সাহসী হতে চাইবে। হয়তো এই ফিলিস্তিন ইস্যু সারা বিশ্বের মুসলিমদের এক করে তুলতে পারে। হয়তো ফিলিস্তিনের বিজয় আমরাই দেখে যেতে পারবো ইনশাআল্লাহ্

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে