সোমবার, ২৭ জুন, ২০২২, ০৫:২৬:২৭

রুমে এসি পর্যন্ত নেই! তারপরও কেন জি-৭ রাষ্টপ্রধানদের পছন্দ এই হোটেল

রুমে এসি পর্যন্ত নেই! তারপরও কেন জি-৭ রাষ্টপ্রধানদের পছন্দ এই হোটেল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বরফে ঢাকা পাহাড়ের নীচে সবুজ সমারোহের মাঝে দাঁড়িয়ে জার্মানির হোটেল স্লস এলমাও। জার্মান শহর মিউনিখ থেকে খুব বেশি দূর নয় এই হোটেল। তবে শহরের ভিড় নেই এখানে। রুমে এসি পর্যন্ত নেই! তারপরও কেন জি-৭ রাষ্টপ্রধানদের পছন্দ এই হোটেল।

বাভেরিয়ান আল্পস পাহাড়ের পায়ের কাছে একটি উপত্যকার মতো এলাকা ক্রুন। সেখানেই পাহাড় ঘেরা এলাকায় দুর্গের মতো দাঁড়িয়ে আছে স্লস এলমাও। যেখানে দুইদিন পরই পা রাখবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ ১২ দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা।

২০২২ সালের জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে স্লস এলমাওয়ে। জি-৭ আসলে বিশ্বের ধনীতম সাতটি দেশের সম্মেলন। যার সদস্য দেশগুলি যথাক্রমে কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইটালি, জাপান, ব্রিটেন এবং আমেরিকা। তবে এই দেশগুলির পাশাপাশি প্রত্যেক বারই কিছু দেশকে অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ করা হয় জি-৭ সম্মেলনে। 

এ বার সেই তালিকায় রয়েছে ভারত, আর্জেন্টিনা, ইন্দোনেশিয়া, সেনেগাল এবং দক্ষিণ আফ্রিকা। অর্থাৎ মোট ১২ জন রাষ্ট্রনেতাকে স্বাগত জানাবে স্লস এলমাও। তবে এই হোটেলে এঁরা কেউই বিশেষ আপ্যায়ন পাবেন না। এই হোটেলে মোদি হোন বাইডেন সবাই সমান। প্রত্যেকের জন্যই একরকম সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা।

মোট ১২৩টি ঘর রয়েছে এই হোটেলে। রয়েছে ৪৭টি বিশেষ সুইটও। হোটেল চত্বরের মধ্যে আরও একটি হোটেল তৈরি করা হয়েছিল শুধু এই সুইটগুলির জন্য। নাম দেওয়া হয়েছিল স্লস এলমাও রিট্রিট। এই সব সুইটের প্রত্যেকটি হুবহু এক রকম। আসবাব থেকে শুরু করে সুযোগ-সুবিধা কিচ্ছুটি আলাদা করার উপায় নেই।

এ ছাড়াও বেশ কিছু অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য রয়েছে এই হোটেলের। যার মধ্যে একটি হল এই হোটেলে এসির ব্যবস্থা নেই। জানলার কাচ সরালেই আল্পসের ঠান্ডা হাওয়া ঢুকবে ঘরে। তবে রাষ্ট্রনেতাদের কাঁপুনি ধরাবে না। ওই ঠান্ডাকে সহনীয় করে তোলার আধুনিকতম ব্যবস্থা রয়েছে স্লস হোটেলের ঘরে।

হোটেলে প্লাস্টিক ব্যবহারের অনুমতিও নেই। চকোলেট থেকে কুকিজ, অতিথিদের সবই দেওয়া হয় কাচের বাক্স বা কাচের বোতলে। এমনকি হোটেলে ব্যবহারের জন্য দেওয়া রূপটানের জিনিসও ভর্তি করা হয় পোর্সেলিনের বোতলে। সেই সব ব্যবহৃত বোতল বা বাক্স জার্মানির যে কোনও বাজারে চাইলে বদলে নেওয়াও যায়।

১০০ বছরের বেশি বয়স এই হোটেলের। তৈরি করেছিলেন জোয়ানেস মুলার নামে এক স্থপতি। বর্তমানে মুলারের নাতি দিয়েতমার মুলার এলমাওই স্লস এলমাও-এর মালিক। রাষ্ট্রনেতাদের কথা মাথায় রেখে হুবহু এক ধরনের সুইট বানানোর বুদ্ধিটা দিয়েতমারেরই। 

হোটেলটিকে আন্তর্জাতিক শীর্ষ সম্মেলনের জন্য আদর্শ হোটেল বানাতে চেয়েছিলেন তিনি। যাতে সম্মেলনে যোগ দিতে হোটেলে এসে কোনও রাষ্ট্রনেতা নিজেদের একটুও কম বা বেশি সুবিধাপ্রাপ্ত বলে না মনে করেন। স্লস হোটেলে উন্নয়নশীল দেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রী যে সুযোগ- সুবিধা পাবেন, প্রথম বিশ্বের শক্তিশালী দেশ জো বাইডেনও একই সুবিধা পাবেন।

প্রত্যেকের জন্যই বরাদ্দ হবে পাঁচ ঘর বিশিষ্ট এক একটি সুইট। ১২০ বর্গফুটের ওই সুইটে রয়েছে লম্বা বারান্দা লাগোয়া একটি বড় শয়নকক্ষ, একটি মাঝারি শয়নকক্ষ, একটি বসার ঘর। ছোটদের থাকার ঘর এবং একটি ২৪ বর্গফুটের বিশাল স্নানঘর।

প্রতিটি পাঁচঘরের সুইট এমন ভাবে সাজানো যাতে প্রত্যেকটি ঘর থেকেই দেখা যায় আল্পস পাহাড়, ছবির মতো উপত্যকা আর পাইনের জঙ্গল। তবে রাষ্ট্রনেতাদের খাওয়াদাওয়া এবং সুইমিং পুলে স্নান করার জায়গাটি এক। স্নান করতে করতে বা খেতে খেতে রাষ্ট্রনেতাদের অ'ন্তর'ঙ্গ হওয়ার সুযোগ রয়েছে এই হোটেলে।

সাত বছর আগে ২০১৫ সালের জি-৭ সম্মেলনেরও আয়োজন হয়েছিল এই হোটেলেই। সে বার স্লসে এসেছিলেন আমেরিকার তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা। আল্পসের পাদদেশে সবুজ ঘাসের উপর কাঠের বেঞ্চে বসা ওবামার ছবি দেখে অবাক হয়েছিলেন অনেকেই। ওবামা কাঠের বেঞ্চে আয়েশ করে বসে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মের্কেলের সঙ্গে খোশগল্প করছিলেন।

এর আগে আর কোনও জি-৭ সম্মেলনে নেতাদের এমন আয়েশ করতে দেখা যায়নি। যেখানে এই ধরনের সম্মেলনে গুরুগম্ভীর আলোচনার পর দেশের পতাকার সামনে গম্ভীর ভাবে দাঁড়িয়ে ছবি তোলেন নেতারা, তেমন কোনও ছবি দেখা যায়নি ২০১৫ সালে। রাষ্ট্রনেতারা স্লসের লাগোয়া সবুজ ঘাসের উপত্যকায় সাদা বুনোফুলের সামনে দাঁড়িয়ে তুলেছিলেন ছবি। সূত্র: আনন্দবাজার

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে