সোমবার, ১২ মার্চ, ২০১৮, ০১:২৭:১৮

অপুর কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতেন শাকিব, ভাইয়া থেকেই হন জামাই

অপুর কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতেন শাকিব, ভাইয়া থেকেই হন জামাই

বিনোদন : অবশেষে আনুষ্ঠানিকভাবে ইতি ঘটছে অপু-শাকিবের সংসারের । ১০ বছরের সংসারের এমন ইতি চায়নি কেউ । অথচ তা-ই ঘটলো যার জন্য প্রস্তুত ছিলো না তারকা দম্পতির ভক্তরা । আজকের এই বিচ্ছেদের শুরুটা কেমন ছিল তা হয়তো অনেকের অজানা । অপুর কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতেন শাকিব, ভাইয়া থেকেই জামাই হয়ে যান শাকিব।

২০০৬ সালের কথা। শাকিব খান তখন ঢালিউডের একজন অতিসাধারণ হিরো। আজকের মতো তারকাখ্যাতি ছিলো না তার। অভিনেতা ও প্রযোজক মনোয়ার হোসেন ডিপজল বড় বাজেটের একটি সিনেমা নির্মাণ করবেন। সিনেমার নাম ‘কোটি টাকার কাবিন’। যেখানে সিনেমার নায়ক হিসেবে তিনি পছন্দ করলেন শাকিব খানকে।

তার বিপরীতে ডিপজল চাইলেন নতুন কোনো নায়িকা। যেমন চাওয়া, তেমন পাওয়া। ডাক পড়ল অপু বিশ্বাসের। যতটুকু মনে পড়ে আমজাদ হোসেনের ‘কাল সকালে’ ও সুভাষ দত্তের ‘ও আমার ছেলে’তে অভিনয় করেছিলেন অপু। তবে সেটা বড় কোনো চরিত্র নয়। বগুড়াতেই থাকতেন তিনি। অভিনয়কে পেশা হিসেবে নেওয়ার ইচ্ছে তখনও জাগেনি অপুর। এরইমধ্যে মাধ্যমিকে পরীক্ষা দিলেন অপু। পরীক্ষা শেষে কিছুটা বিরতি। ঠিক সেই সময় সুযোগ আসে ‘কোটি টাকার কাবিন’ সিনেমার।

কোনো চিন্তা না করেই অপু রাজি হয়ে যান। কারণ স্বপ্নের নায়ক শাকিব খানকে পাচ্ছেন নিজের নায়ক হিসেবে। শাকিব তখন ঢালিউডের পরিচিত মুখ। তবে সুপারস্টার নয়। তার বেশ কিছু সিনেমা দেখেছেন অপু। এবার সামনা সামনি দেখার সুযোগ মিলে গেলো। এই সিনেমার সূত্র ধরেই শুটিং সেটে প্রথম দৃষ্টি বিনিময়। শাকিবকে ‘ভাইয়া’ বলে ডাকতেন অপু। ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করতেন তখন।

‘কোটি টাকার কাবিন’ সিনেমার শুটিং শুরু করলেও খুব একটা জানাশোনা হয়নি দুজনার। তাই সেটে বসে একে অপরকে লুকিয়ে দেখেন দুজন। কিন্তু ওইভাবে কোনো কথা হয় না। এভাবেই অল্প অল্প পরিচয়ে কিছুটা কাছে আসা। শাকিব অপুর কাছ থেকে ফোন নম্বর নেন। যদিও তখন শাকিব অনেকটা নার্ভাস ছিলন। এরপর অপুকেই প্রথম ফোন করেন শাকিব। তবে তার আগে এসএমএস দিয়ে জানান- ‘আমি রানা (শাকিবের ডাক নাম), ফোন রিসিভ করো। অপু লজ্জা পেলেন। সবার সামনে ফোন রিসিভ না করে ওয়াশরুমে ঢুকে পানির কল ছেড়ে দিয়ে শাকিবের সঙ্গে প্রথম কথা বললেন অপু।

এভাবে দেড় মাস ফোনো প্রেম। কোনো কোনো দিন ফোনে শাকিবের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে মায়ের কাছে ধরাও পড়েছেন অপু। শাস্তিস্বরূপ অপুকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ভারতে, বোনের বাসায়। সেখানেই থাকতে হবে, সিনেমায় আর অভিনয় করা যাবে না। কিন্তু প্রেম যে মানে না কোনো বাধা। ভারতে যাওয়ার পর অপুর প্রেম আরও গভীর হয়। রাস্তার পাশের ফোন বুথ থেকে দিনের একটা নির্দিষ্ট সময়ে শাকিবকে ফোন করতেন অপু।

প্রেমিকার ফোন পেয়ে সিনেমার শিডিউল ফাঁসিয়ে শাকিব চলে যান ভারত। তাও বিমানে নয়, বাসে চড়ে। ঢাকা থেকে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম হয়ে ভারতে প্রবেশ করেন শাকিব। দেখা করলেন প্রেমিকার সঙ্গে। ঘুরতে গেলেন দার্জিলিং। যদিও দেশে ফিরে শিডিউল ফাঁসানোর দায়ে বিপদে পড়তে হয়েছিল শাকিবকে।

এদিকে ‘কোটি টাকার কাবিন’ মুক্তি পেয়েছে। মুক্তির পরেই সুপারহিট। নতুন এ জুটির সাফল্য দেখে ডিপজল আরও চারটি সিনেমার ঘোষণা দেন। সিনেমা করলেই শাকিবের কাছাকাছি থাকতে পারবেন অপু। তাই রাজি হয়ে গেলেন। কিন্তু বাধা শুধু পরিবার। কে শোনে কার কথা! বিদ্রোহ করলেন অপু। দেশে ফিরে এসে বগুড়ার এক কলেজে ভর্তি হলেন তিনি। শাকিব তখন শুটিং ফেলে কলেজের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেন। অপুর মা শাকিবের সঙ্গে মেলামেশা পছন্দ করতেন না। একদিন শাকিবের মুখোমুখি হলেন তিনি।

শাকিব বললেন, ‘আমি আপনার মেয়েকে বিয়ে করব।’ অপুর মা বললেন, ‘আর সেদিনই আমি তোমাকে ত্যাজ্য করব।’

ভালোবাসার বন্ধন আরও মজবুত করতে শাকিব বিয়ের তারিখ নির্ধারণ করেন। সেদিন ছিলো ১৮ এপ্রিল ২০০৮। এ দিনে বিয়ে করার কারণ হচ্ছে সেদিন শাকিবের বাবা-মা বাসায় ছিলেন না। শাকিবের ফুপাতো ভাই তানভীরের মেয়ের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যাবেন। নির্ধারিত সময়ে কাজী ডেকে আনা হলো। ভালোবাসার টানে ধর্ম ত্যাগ করে অপু বিশ্বাস হয়ে গেলেন অপু ইসলাম খান।

বিয়েতে ছিলেন অপুর মেজ বোন, শাকিবের কাজিন মুনির ও প্রযোজক মামুনুজ্জামান মামুন। বিয়ের পর অপু চলে গেলেন নিজের বাসায়। বিয়ের বিষয়টা শাকিবের বাবা-মা, অপুর মা জানতেন না। ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধব ছাড়া চলচ্চিত্রেরও তেমন কেউ জানতেন না। বছরখানেক পর দুজন একসঙ্গে থাকতে শুরু করেন।

অপুর ভাষ্য, যেন কেউ সন্দেহ করতে না পারে, সেজন্য শুটিংয়ের সময় শাকিবের ধারেকাছেও থাকতাম না। শটের সময় চলে যেতাম ক্যামেরার সামনে। অনেকের সন্দেহ হয়েছে; কিন্তু কেউ নিশ্চিত হতে পারেনি। এভাবেই লুকোচুরি করে চলতে থাকে দুজনের প্রেম।
এমটিনিউজ২৪/হাবিব/এইচআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে