বৃহস্পতিবার, ০৯ আগস্ট, ২০১৮, ০১:৪১:৩৩

মন্ত্রী হওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই: ইলিয়াস কাঞ্চন

মন্ত্রী হওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই: ইলিয়াস কাঞ্চন

বিনোদন ডেস্ক: ২৫ বছর ধরে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। স্বপ্ন দেখতেন, একদিন সাধারণ মানুষ তাঁর আন্দোলনে শামিল হবে। এই ইস্যুতে সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনকে নতুন জাগরণ ভাবছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া এই অভিনেতা। ইলিয়াস কাঞ্চনের সাক্ষাত্কার নিয়েছেন সুদীপ কুমার দীপ।

এখন সারা দেশের শিক্ষার্থী এবং সাধারণ মানুষের প্রাণের দাবি ‘নিরাপদ সড়ক চাই’। এত দিনের কষ্ট তাহলে সফল হলো?

২৫ বছর ধরে এ দিনটির অপেক্ষায় ছিলাম। শুরুতে সবাই আমার দাবিকে সমর্থন করেছে। এমন আন্দোলনে নিজেকে শামিল করেছি বলে অনেকেই আমাকে ভালোবেসেছে। কিন্তু শুধু দূর থেকে সমর্থন ও ভালোবাসলে কী হবে? বারবার অনুরোধ করেছি, ঘরে বসে না থেকে আপনারা রাস্তায় আসেন। যখন আমরা সশরীরে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনে রাস্তায় দাঁড়াব তখন সরকারের টনক নড়বে। এত দিন কেউ আমার ডাকে সাড়া দেয়নি।

সর্বস্তরের মানুষের যে আন্দোলন করার কথা ছিল সেটি করে দেখাল কোমলমতি শিক্ষার্থীরা...
আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কতটা সচেতন তা এই আন্দোলনের মাধ্যমে আরেকবার প্রমাণিত হলো। ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে, কত হবে তাদের বয়স! বড় জোর ১৫ থেকে ২৫ বছর। তারাই সারা দেশের মানুষকে জাগিয়ে তুলেছে। ভবিষ্যতে এই প্রজন্ম যখন দেশের হাল ধরবে, তখন সত্যিই দেশটা স্বপ্নের দেশ হবে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রদের ঘরে ফেরার নির্দেশ দিলেও আন্দোলন এখন ভিন্ন খাতে গড়িয়েছে। বিষয়টা কিভাবে দেখছেন?

বাড়াবাড়ি কোনো সময়ই ভালো নয়। তবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পরপরই বাচ্চারা ঘরে ফেরেনি। আস্থার জায়গাটাই বড় কথা। অবশ্য আন্দোলনের নামে এখন যা হচ্ছে তা আমার বোধের বাইরে।

আন্দোলনকে ঘিরে বিচ্ছিন্ন ঘটনাও কিন্তু ঘটছে। এসব বিষয়ে কতটুক খোঁজ নিয়েছেন?
আমার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যারা কাজ করছেন, তাঁরা সব খোঁজ-খবর নিচ্ছেন কোথায় কী হচ্ছে। একটা কথা পরিষ্কার করে বলতে চাই, হয়তো ঘটনা সত্যি, নয়তো গুজব। যদি সত্যি হয় তাহলে দোষীদের অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনতে হবে। আর যদি গুজব হয় তাহলে যারা গুজব রটিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

এই আন্দোলনে লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে বলে মনে করছেন?
অর্জন নিয়ে ভাবার সময় এখনো আসেনি। আপনারা কি মনে করেন শুধু আইন প্রণয়ন করলেই সব ঠিক হয়ে যাবে? ড্রাইভারদের সঠিক প্রশিক্ষণ দেওয়া, পথচারীদের রাস্তা পার হওয়ার নিয়ম-কানুন, রাস্তায় লেন তৈরি—এসব করতে হবে না? এটা এমন নয় যে, এক দিনেই সব অর্জন হয়ে যাবে? সময়সাপেক্ষ ব্যাপার এটা।

২৫ বছর ধরে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলন করে আসছেন। কখনো কি হাল ছেড়ে দেওয়ার কথা ভেবেছিলেন?
না। জানতাম, একদিন কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব। কারণ সততা নিয়ে কোনো কিছু করলে দেরিতে হলেও তার ফল পাওয়া যায়। যদি শুরুতে সবাই আমার ডাকে সাড়া দিয়ে রাস্তায় নেমে আসত তাহলে হয়তো আরো আগে সফল হতে পারতাম। এত দুর্ঘটনাও ঘটত না।  

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই আপনাকে পরিবহনমন্ত্রী করার দাবি জানিয়েছেন!
জানি না কারা এটা করছেন। তবে আমার মন্ত্রী হওয়ার ইচ্ছে নেই। জীবনে অনেকবার প্রস্তাব পেয়েছি রাজনীতি করার, এড়িয়ে গেছি। আমি শুধু বাংলাদেশের আগামী প্রজন্মের জন্য একটা ‘নিরাপদ সড়ক চাই’। আর কোনো উদ্দেশ্য বা ইচ্ছা আমার নেই।

আপনার ডাকা ৩ আগস্টের মানববন্ধনে চলচ্চিত্র তারকাদের কিন্তু দেখা যায়নি...
হা হা হা। আমিও বুঝে উঠতে পারিনি কেন তাঁরা এলেন না। যেখানে সারা দেশের মানুষ আমার সঙ্গে একমত পোষণ করে মানববন্ধনে হাজির হলো, সেখানে আমার দীর্ঘদিনের সহকর্মীরা অনুপস্থিত। অবশ্যই খারাপ লাগে। তবে আন্দোলনের প্রথম দিকে দেখেছি, ফেসবুক বা অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ কেউ একাত্মতা ঘোষণা করেন, পরে কী হলো বুঝে উঠতে পারিনি।

আন্দোলনের ভবিষ্যৎ কী বলে মনে করছেন?
‘নিরাপদ সড়ক চাই’ এখন গণমানুষের দাবি। সরকার বা বিরোধী দলের আন্দোলন বলে চালিয়ে দেওয়া আর সম্ভব নয়। অবশ্যই দেশের নীতিনির্ধারকরা একটা উপসংহারে আসবেন। কারণ এখন সড়ক দুর্ঘটনাকে আর রাজনৈতিকীকরণ করার উপায় নেই। মানুষ এখন অনেক সচেতন।

চলচ্চিত্র কি ভুলতে বসেছেন? নতুন কোনো ছবিতে দেখা যাচ্ছে না...
গত সপ্তাহেই একটি ছবির প্রস্তাব পেলাম। চরিত্রে নতুন কিছুই পেলাম না। পরিচালককে বললাম, আমাকে কেন নিতে চান? এই চরিত্রের জন্য তো ইন্ডাস্ট্রিতে অন্তত ১০ জন অভিনেতা আছেন। আসলে ক্যারিয়ারের এই সময়ে এসে পর্দায় যদি নতুন কিছু না দিতে পারি তাহলে তো সম্মান থাকে না। পারিশ্রমিকেরও একটা ব্যাপার আছে।
এমটিনিউজ২৪.কম/হাবিব/এইচআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে