মঙ্গলবার, ২৭ জুলাই, ২০২১, ০৪:২৮:৫৫

হিন্দু ছেলের সঙ্গে প্রেম! বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত ব্রিটিশ অভিনেত্রীকে খুন করতে যান বাবা ও ভাই!

হিন্দু ছেলের সঙ্গে প্রেম! বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত ব্রিটিশ অভিনেত্রীকে খুন করতে যান বাবা ও ভাই!

বিনোদন ডেস্ক : আফসান নুর আজাদ। ৩২ বছরের এক ব্রিটিশ অভিনেত্রী এবং মডেল। 'হ্যারি পটার'-এর পদ্ম পাটিল। 'হ্যারি পটার'-এর প্রতিটি সিরিজেই আফসানকে দেখা গিয়েছিল। সম্প্রতি তিনি একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দিলেন। ইন্সটাগ্রামে নিজেই সে কথা জানালেন মঙ্গলবার। 

'হ্যারি পটার'-এর মতো সফল ছবিতে অভিনয় করে যত না পরিচিতি পেয়েছিলেন তিনি, তার চেয়ে অনেক বেশি চর্চা হয়েছিল তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে। আসলে পর্দায় যতটা প্রাণবন্ত লেগেছিল আফসানকে, তার বাস্তব জীবন কিন্তু তেমনটি ছিল না। ব্যক্তিগত জীবনে আফসান কট্টরপন্থী ভাবধারার শিকার হয়েছিলেন। 

হিন্দু ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলায় পরিবারের সম্মান রক্ষার্থে তাকে তার বাবা-ভাই খুন পর্যন্ত করতে গিয়েছিলেন! আফসানার জন্ম ম্যাঞ্চেস্টারে হলেও তার পূর্বপুরুষ বাংলাদেশের বাসিন্দা। আফসান আসলে এক বাংলাদেশি মুসলিম পরিবারের মেয়ে। সেটা ২০১১। আফসান তখন ২২। 'হ্যারি পটার'-এর সৌজন্যে তখন তিনি অত্যন্ত পরিচিত মুখ। 'হ্যারি পটার'-এর শেষ সিরিজও মুক্তি পেয়ে গিয়েছে।

সে দিন বাড়িতেই ছিলেন আফসান। দোতলায় শৌচাগারে গোসল করতে ঢুকেছিলেন। মোবাইল ফোনে লুকিয়ে প্রেমিকের সঙ্গে কথা বলছিলেন তিনি। তখনই শুনতে পেয়ে যান তার ভাই আশরাফ। শৌচাগারের দরজা ভেঙে তার চুল ধরে চেনে হিঁচড়ে বাইরে বার করে আনেন তাকে। তারপর দেওয়ালে কয়েক বার মাথা ঠুকে টানতে টানতে নীচের তলায় বাবার ঘরে নিয়ে যান। বাবা তখন বিছানায় বসে ছিলেন। সেই খাটে মাথা ঠুকে ফেলে দেন আফসানকে।

মেয়ের 'কীর্তি' জানার পর ছেলেকে প্রতিহত করার বিন্দুমাত্র চেষ্টা করেননি বাবা বরং উল্টো ছেলেকে নির্দেশ দেন মেয়েকে খুন করে ফেলার। তত ক্ষণে আফসানের চিৎকার শুনে ঘরে ছুটে এসেছেন তার ভাবী এবং মাও। আশ্চর্যের বিষয় ছিল, তারাও কেউ আফসানের পাশে দাঁড়াননি। আফসানের সারা গায়ে-মুখে কালশিটে পড়ে গিয়েছিল। চোখ, ঠোঁটের চারপাশ ফুলে উঠেছিল। সেই অবস্থাতেই তাকে দোতলার একটি ঘরে বন্দি করে রেখে তার প্রেমিকের খোঁজে বেরিয়ে যান দাদা। 

মা-ভাবীও আফসানকে হুমকি দিয়ে যান। আফসানের সামনে তখন দু'টি শর্ত রাখেন তারা। হয় তাকে বাংলাদেশে নিয়ে গিয়ে পরিবারের পছন্দ মতো কোনও পাত্রকে বিয়ে করতে হবে তা না হলে পরিবারের সম্মান রক্ষার্থে তাকে খুন করা হবে। অত্যন্ত ভয় পেয়েছিলেন আফসান। কী করবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না। ঘর যেখানে সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়, সেই ঘরই তাকে মৃত্যুভয়ে জর্জরিত করে তুলেছিল। 

সুযোগ বুঝে দোতলার ঘর থেকে ঝাঁপ দিয়ে পালিয়ে যান। তারপর সোজা থানায় গিয়ে গার্হস্থ্য হিংসার অভিযোগ দায়ের করেছিলেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নেয় পুলিশও। ভাই ও বাবাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে বাবা জামিনে ছাড়া পেয়ে যান কিন্তু ভাইয়ের ৬ মাসের জন্য জেল হয়। আফসান যদিও সকললেই ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। নিজে চিঠি লিখে ভাইয়ের মুক্তি চেয়েছিলেন বিচারকের কাছে। তার চিঠির বয়ান ছিল, ভাইকে তিনি ক্ষমা করে দিয়েছেন তাই তাকে ছেড়ে দেওয়া হোক। যদিও বিচারক অপরাধের গুরুত্ব বুঝে ভাইর শাস্তি নাকচ করেননি। তারপর অনেকগুলো বছর কেটে গিয়েছে। 

পরিবারের সঙ্গে থেকেছেন আফসান। পরিবার তার সঙ্গে কী ব্যবহার করত? এরপরও কোনও দিন হিংসার শিকার হতে হয়েছিল কি না, সে সব নিয়ে আর কখনও মুখ খুললে দেখা যায়নি আফসানকে। তার সেই প্রেমিকেরই বা কী হল, তাও জানা যায়নি। আফসান নিজে একজন মডেল এবং অভিনেত্রী। 'হ্যারি পটার' আর কোনও ছবি তিনি করেননি। তবে টুকটাক মডেলিং করে থাকেন। ২০১৮ সালে পরিবারের সম্মতিতে নাবিল কাজি নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে তার বিয়ে হয়। 

তাদের বিয়েতে হ্যারি পটার সিরিজের একাধিক অভিনেতা হাজির ছিলেন। বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ির একাধিক ছবি ইনস্টাগ্রামে অনুরাগীদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে শুরু করেন আফসান। এপ্রিলে একটি পোস্ট করে তিনি সমস্ত অনুরাগীদের সন্তানসম্ভবা হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। সম্প্রতি একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দিলেন। সূত্র : এবিপি ও এনডিটিভি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে