বুধবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ০৩:৫৩:০২

অটোচালক থেকে ভারতের সেরা কৌতুক অভিনেতা

অটোচালক থেকে ভারতের সেরা কৌতুক অভিনেতা

বিনোদন ডেস্ক: ৫৮ বছর বয়সে না ফেরার দেশে চলে গেলেন বলিউডের জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতা রাজু শ্রীবাস্তব। গত প্রায় দেড় মাস ধরে দিল্লির এমসে ভর্তি ছিলেন রাজু। মঙ্গলবার সকালে এই হাসপাতালেই তার মৃত্যু হয়। 

গত ১০ আগস্ট জিমে শরীরচর্চা করার সময় হঠাৎই বুকে ব্যথা নিয়ে দিল্লি এমসে ভর্তি হন রাজু। এরপর থেকে ধীরে ধীরে রাজুর শারীরিক অবস্থা আরও জটিল হয়। মস্তিষ্কও কাজ করা বন্ধ করে। পরে অবস্থার উন্নতি হলেও ১ সেপ্টেম্বর থেকে আবার ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয় রাজুকে।

উন্নতির শিখরে থাকা এই শিল্পী কৌতুকরসের জন্য সহজেই জায়গা করে নিয়েছিলেন দেশবাসীর মনে। অনেকেই লোক হাসিয়ে রাজুকে ভারতের সেরা কৌতুকশিল্পী হয়ে উঠতে দেখেছেন। কিন্তু কোন পথে চলে তার জীবনে এই সাফল্য আসে, তা অনেকেরই অজানা।

১৯৬৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর উত্তরপ্রদেশের কানপুরে এক মধ্যবিত্ত পরিবারে রাজুর জন্ম। আসল নাম সত্যপ্রকাশ শ্রীবাস্তব। রাজুর বাবা রমেশচন্দ্র শ্রীবাস্তব ছিলেন কবি। তবে রমেশ বেশি পরিচিত ছিলেন ‘বলাই কাকা’ নামে। ছোট থেকেই তারকাদের গলা নকল করতে ভালবাসতেন রাজু। 

তার এই প্রতিভার জন্য নিজের এলাকায় জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলেন তিনি। সেখান থেকেই তার কৌতুকশিল্পী হওয়ার ইচ্ছা জাগে। কানপুরে পড়ে থাকলে তার প্রতিভা যথাযোগ্য সম্মান পাবে না, এই ভাবনা থেকে মুম্বাই যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন রাজু। দুই চোখে অনেক স্বপ্ন নিয়ে মুম্বাই পাড়ি দেন তিনি।

স্বপ্ননগরীতে পা দেওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই রাজুর বাড়ি থেকে আনা টাকা ফুরিয়ে যায়। চরম অভাব-অনটনের মুখে পড়েন রাজু। বুঝতে পারেন, তার পথচলা খুব একটা সহজ হবে না। ভারতের শ্রেষ্ঠ কৌতুক অভিনেতা হওয়ার যে স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন তা ধীরে ধীরে ঝাপসা হতে শুরু করে।

খরচ চালাতে নিরুপায় হয়ে অটোর স্টিয়ারিং ধরেন রাজু। তবে কৌতুকশিল্পী হওয়ার স্বপ্ন দেখা তখনও ছাড়েননি। ছোটখাটো অনুষ্ঠানে কৌতুক পরিবেশন করতে শুরু করেন তিনি। সমস্ত বাধা কাটিয়ে কৌতুকশিল্পী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে চলেন রাজু। হঠাৎই এক দিন অটোচালক রাজুর সুযোগ জোটে এক হাস্যকৌতুকানুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।

অটোচালক থেকে হয়ে উঠেন ভারতের সেরা কৌতুক অভিনেতা। ডিডি ন্যাশনালের বিখ্যাত কৌতুকানুষ্ঠান ‘টি টাইম মনোরঞ্জন’ থেকে শুরু করে ‘দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান লাফটার চ্যালেঞ্জ’, দর্শকের মধ্যে বিশেষ ভাবে পরিচিত হন রাজু। প্রতিভার জোরে খুব তাড়তাড়ি ভারতবাসীর ঘরের ছেলে হয়ে ওঠেন।

‘দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান লাফটার চ্যালেঞ্জ’-এ তিনি সামনে আনেন তার অন্যতম জনপ্রিয় চরিত্র ‘গজধর ভাইয়া’কে। রাজুর মতোই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে তার সৃষ্ট চরিত্রটি। ‘দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান লাফটার চ্যালেঞ্জ’ বাদেও টেলিভিশনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন রাজু। 

২০০৯ সালে বিতর্কিত রিয়্যালিটি শো ‘বিগ বস’-এর তিন নম্বর সিজনে তিনি অংশ নিয়েছিলেন। ২০১৩ সালে স্ত্রীকে নিয়ে যোগ দেন ‘নাচ বলিয়ে সিজন ৬’-এ। ‘দ্য ইন্ডিয়ান মজাক লিগ’-এও অংশ নেন তিনি। জনপ্রিয় কৌতুকানুষ্ঠান ‘কমেডি নাইটস উইথ কপিল’-এও অতিথি হিসাবে রাজু হাজির হয়েছিলেন কয়েক বার।

কৌতুকশিল্পী হিসাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠার আগে অনেক বলিউড সিনেমাতেও অভিনয় করেছিলেন রাজু। এমনকি, ‘ম্যায়নে প্যায়ার কিয়া’ এবং ‘বাজিগর’-এর মতো সফল বলি সিনেমাতেও অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে তাকে। রাজু জানিয়েছিলেন, জীবনের প্রাথমিক পর্যায়ে কৌতুক অভিনেতা হিসাবে কাজ করে পারিশ্রমিক হিসাবে তিনি পেতেন মাত্র ৫০ টাকা।

২০১০ সালে পাকিস্তান থেকে ফোন করে প্রা'ণনা'শের হু'ম'কিও দেওয়া হয়েছিল রাজুকে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পাকিস্তান এবং আ'ন্ডা'রওয়া'র্ল্ড ড'ন দাউদ ইব্রাহিমকে নিয়ে কৌতুক পরিবেশন করার জন্য তিনি এই হু'ম'কি পেয়েছিলেন। এক সময়ে রাজু রাজনীতিতেও পা দিয়েছিলেন। 

২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে সমাজবাদী পার্টির হয়ে কানপুর থেকে প্রার্থী হন তিনি। কিন্তু তিনি দলের স্থানীয় ইউনিট থেকে যথেষ্ট সমর্থন পাচ্ছেন না, এই অভিযোগ তুলে ওই বছরের ১১ মার্চ প্রার্থিপদ প্রত্যাহার করে নেন। এরপরে, ১৯ মার্চ বিজেপিতে যোগ দেন রাজু।

পরবর্তীতে ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’-এর অংশ হিসাবে রাজুর নাম মনোনীত করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এর পর থেকে দেশের বিভিন্ন শহরে ঘুরে তিনি পরিচ্ছন্ন ভারত গড়ার প্রচার চালিয়েছিলেন। ১৯৯৩ সালে বিয়ে করেন রাজু। অন্তরা এবং আয়ুষ্মান নামে শ্রীবাস্তব দম্পতির দুই সন্তান আছে।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে