বিনোদন ডেস্ক : অনেক আলোচিত চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তারের পর জামিনে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। শনিবার সন্ধ্যায় গাজীপুর সদরের তেলিপাড়া এলাকায় নিজের রেস্টুরেন্ট ফারিসতার সামনে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। এ সময় মাহিয়া মাহি অভিযোগ করে বলেন, গ্রেপ্তার পর থেকে পুলিশ নানাভাবে আমাকে মানষিকভাবে এবং শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছে।
আমি প্রেগন্যান্ট বলার পরেও পানি খেতে চাইলে প্রায় একঘণ্টাও পানি দেয়নি। তবে কারাগারের ভেতরে জেলারসহ অন্যান্যরা খুব মানবিক ছিলেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিয়ে লাইভ করার বিষয়টি উচিৎ হয়নি জানিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে মাহি বলেন, দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার কারণেই এমনটা করেছি।
আমি শুধু একজনের (গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোল্ল্যা নজরুল ইসলাম) বিরুদ্ধে কথা বলেছি, পুরো পুলিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে কথা বলিনি। আমি পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে যাইনি। বিমানবন্দরে গ্রেপ্তারের সময়ের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে এই চিত্রনায়িকা বলেন, সে সময় পুলিশ সদস্যদের জানিয়েছিলাম শ্বাসকষ্ট হচ্ছে।
কিন্তু তারপরও পুলিশ সদস্যরা আমাকে বলেছেন, এভাবেই যেতে হবে। স্বামীকে নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে মাহি বলেন, ‘আমি একজন অন্তঃসত্ত্বা নারী হয়েও মানবিকাতাটুকু পাইনি। আমার স্বামীর বিরুদ্ধেও মামলাটা আছে। সে এলে আসলে তার সঙ্গে কী করা হবে? আমি আমার স্বামীর নিরাপত্তা নিয়ে খুবই শঙ্কিত।’
দিনভর ঘটে যাওয়া ঘটনার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ‘আমাকে যখন আদালতে নেওয়া হয়েছে। আমি আসলে জানিনা... আদালতে ঢোকার পরে বিচারকতো আমাকে নূন্যতম একটা কথা জিজ্ঞাসা করবেন যে, আমি কেন এটা করেছি বা কিছু একটা। আমার আত্মপক্ষ সমর্থনের একটা সুযোগতো দেবেন। বিচারক শুধু চেয়ারে বসলেন আর উঠলেন।
শুধু বলা হলো, মাহিয়া মাহি উপস্থিত হয়েছেন। কোর্ট শুরু করা হলো। আবার সঙ্গে সঙ্গে বলা হলো, মাহিয়া মাহি কারাগারে যাচ্ছেন, কোর্ট মূলতবি ঘোষণা করা হলো। ওনাকে কারাগারে পাঠাও। এটা কী ধরনের বিচার?’
মাহি অভিযোগ করেন, আমি যখন আদালতে ছিলাম, তখন বারবার পুলিশ বলছিল, ওনাকে রিমান্ডে নিতে হবে। আমি একজন ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা, আমার বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনে মামলা হয়েছে। আমাকে রিমান্ডে নিয়ে তারা কী বের করবে? এমন পরিস্থিতিতে আমি আমার স্বামীকে নিয়ে ভীত। আমাকে যেমন মানসিক, শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে।
যে সে দেশে আসলে তাকেও রিমান্ডে নেওয়া হবে, তাকেও নির্যাতন করা হবে। এর আগে সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটের দিকে তিনি গাজীপুর জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পান। মাহি কারামুক্ত হচ্ছেন এমন খবরে বিকেল থেকেই জেলা কারাগারের সামনে এসে ভিড় করন বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মীরা। সেইসঙ্গে মাহিয়া মাহির ভক্ত ও সমর্থকসহ সাধারণ মানুষ কারা ফটকের সামনে এসে ভিড় করেন।
এ ছাড়াও তার স্বামী রকিব সরকারের রাজনৈতিক সমর্থকরাও এসেছেন কারা ফটকে। অনেকে ফুলের মালা নিয়ে মাহিয়া মাহিকে বরণের জন্য কারাফটকে আসেন। গাজীপুর জেলা কারাগারের জেল সুপার মো. আনোয়ারুল করিম বলেন, মাহিয়া মাহির জামিনের কাগজপত্র সন্ধ্যায় কারাগারে পৌঁছায়।
পরে তা যাচাই-বাছাই করে সত্যতা পাওয়া গেলে সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটের দিকে তাকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। কারাগারের গেটে উপস্থিত মানুষদের ভিড় ঠেলে সন্ধ্যা ৭টা ৫০ মিনিটের দিকে গাড়িতে করে মাহিয়া মাহি কারাগার এলাকা ত্যাগ করেন।
শনিবার বিকেলে গাজীপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক ইকবাল হোসেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও এক ব্যবসায়ীর করা জমি দখলের মামলায় মাহিয়া মাহির জামিন মঞ্জুর করেন। জামিন শুনানিতে অংশ নেন মাহিয়া মাহির পারিবারিক আইনজীবী রিপন চন্দ্র সরকার। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী আনোয়ার সাদত সরকার ও আইনজীবী কামরুল হাসান।