বুধবার, ১৬ মে, ২০১৮, ০৩:৩৬:৩৪

ছাত্রলীগ নেতার অপমানে স্কুল ছাত্রীর আত্মহত্যা

ছাত্রলীগ নেতার অপমানে স্কুল ছাত্রীর আত্মহত্যা

ব্রাহ্মণবাড়িয়া ডেস্ক: নিজের সম্মান বাঁচাতে ছাত্রলীগ নেতার কাছে আকুতি জানিয়েছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার মাছিহাতা ইউনিয়নের চাপুইর গ্রামে লিমা নামের একটি মেয়ে।বারবার অনুরোধ জানিয়েছে এভাবে প্রকাশ্যে অপমান না করতে। কিন্তু এই আকুতি মানতে চায়নি সেই ছাত্রলীগ নেতা। প্রকাশ্যেই করা হলো লিমাকে নির্মমভাবে অপমান। এই অপমান সইতে না পেরেই নিজের জীবন দিয়ে তার প্রতিবাদ জানালেন লিমা।

প্রেমিক আখ্যা দিয়ে পরিচিত যুবক ইয়াছিনকে নাজেহাল করা হলো। মারধর করা হলো দুজনকে। শত শত মানুষের সামনে দিয়ে লিমা ও ইয়াছিনকে টেনেহিঁচড়ে আনা হলো। লিমাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে একটি স্কুলে আটকে রাখা হলো ইয়াছিনকে! বাড়ীতে গিয়ে ফ্যানের সাথে ওড়নার ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে।

পাঁচ ভাইয়ের একমাত্র বোন জান্নাত আক্তার লিমা ওই গ্রামের আজিজুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। সৌদিপ্রবাসী নুরুল হক ভূঁইয়ার একমাত্র মেয়ে সে। রবিবার (১৩ মে) সকালে নিজ বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। ময়নাতদন্ত শেষে গত সোমবার বিকেলে লিমার লাশ দাফন করা হয়। এ ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানায় মামলা করার প্রস্তুতি চলছে।

পরিবারের লোকজন ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাছিহাতা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি উদয় খান তাঁর দুই ভাইসহ অন্যদের নিয়ে লিমা ও ইয়াছিনকে প্রকাশ্যে অপমান করেন। বেশ কয়েকবার লিমাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে ব্যর্থ হয়ে উদয় খান এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্তরা পলাতক।

মঙ্গলবার (১৫ মে) চাপুইর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বিষয়টি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা চলছে। উদয় খানের পরিবার প্রভাবশালী হওয়ায় অনেকে সাংবাদিকদের কাছে মুখ খুলতে রাজি হয়নি।

পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত রবিবার সকালে ইয়াছিন ও লিমাকে খেওয়াই এলাকায় মারধর করে উদয়সহ তাঁর লোকজন। একপর্যায়ে লিমাকে প্রচ- অপমান করে তার এক ফুফুর বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। লিমার বড় ভাই রজব আলী কান্নায় ভেঙে পড়ে অভিযোগ করেন, উদয় ও তাঁর লোকজন প্রকাশ্যে তাঁর একমাত্র বোনকে মারধর ও অপমান করায় লিমা আত্মহত্যা করেছে। লিমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছেন উদয়। তিনি ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন।

চাপুইর আজিজুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ঘটনা জেনে আমি দ্রুত স্কুলে আসি। এ বিষয়ে স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বারসহ অন্যদের সঙ্গে কথা বলি। এরই মধ্যে খবর আসে লিমা আত্মহত্যা করেছে।

লিমার মা নুরুন্নাহার বেগম বলেন, আমার মাইয়ার গাওয় হাত তুলনের অধিকার হেরার নাই। আমার মাইয়ারে হেরা অপমান করছে দেইক্কাঅই আত্মহত্যা করছে। এ ঘটনায় তিনি সাতজনকে আসামি করে মামলা করবেন বলে জানান।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার ওসি নবীর হোসেন বলেন, লিমার লাশের ময়নাতদন্ত করানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেলে বিস্তারিত জানা যাবে। আর পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এমটিনিউজ২৪.কম/এম/আই

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে