শুক্রবার, ০৭ মে, ২০২১, ০৩:৪৮:১৩

বাবুলের অভিনয়ে নিঃস্ব শতাধিক অটোরিকশা মালিক!

বাবুলের অভিনয়ে নিঃস্ব শতাধিক অটোরিকশা মালিক!

কয়েকটি ব্যাগ ভর্তি বাজার নিয়ে সামনের সড়কে দাঁড়িয়ে থাকেন পঞ্চাশোর্দ্ধ বাবুল মিয়া। এরপর পছন্দসই একটি সিএনজি অটো রিজার্ভ করে যেতেন নির্জন এলাকায়। যেতে যেতে চলতি পথে অটোচালকের সঙ্গে নানা রকম খোশগল্প শুরু করেন বাবুল মিয়া। তার আধাপাকা চুল, বেশভূষা আর বয়সের ভারে অসহায় আচরণ সহজেই মন গলিয়ে ফেলতো চালকের। গন্তব্যে যাওয়ার পর রাস্তা থেকে অল্প একটু দুরে তার বাড়ি দেখিয়ে বলতেন, আমারতো এতোগুলো ব্যাগ নেওয়ার শক্তি নেই। বয়সতো কম হয়নি। যদি ব্যাগগুলো নিতে একটু সহযোগিতা করতে, বড্ড উপকার হতো। তার এই বিনয় কণ্ঠের আবেদনকে না বলতে পারতেন না অটোচালক। সিএনজি অটো রেখে ব্যাগ পৌঁছে দিয়ে আসতেই দেখতেন তার আয়ের একমাত্র অবলম্বনটি সেখানে নেই। অনেক খোঁজাখুঁজি করার পর গাড়ির মালিককে জানিয়ে দেন। গাড়ির মালিক থানায় জিডি করেও খোঁজ মিলে না।

মিলবে কিভাবে, অটো নিয়ে চম্পট দিয়েছে বাবুল মিয়ার চক্রের সদস্যরা। অল্প কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে গ্যারেজে নিয়ে পরিবর্তন করে ফেলা হতো অটোরিকশার রং। আলাদা জায়গায় বিক্রি করে দেয়া হতো ব্যাটারি। অটো চালকদের সঙ্গে নিখুঁত অভিনয় করায় সন্দেহের বাইরে থাকতেন চক্রের মূলহোতা বাবুল মিয়া। তার এই অভিনয়ের ফাঁদে পা দিয়ে নিঃস্ব হয়েছে শতাধিক অটোচালক। শুধু অভিনয় নয়, রাজধানীর চারপাশে গড়ে তোলা বাবুল মিয়ার গড়ে তোলা ১৫ সদস্যের চক্রটি চালকদের অজ্ঞান করেও হাতিয়ে নিয়েছে বেশ কয়েকটি অটোরিকশা।

গত বুধবার রাজধানীর দক্ষিণখান ও নবাবগঞ্জ এলাকা থেকে বাবুলসহ এ চক্রের ৯ সদস্যকে গ্রেফতারের পর এ তথ্য জানিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলেন, মূলহোতা মো. বাবুল মিয়া, জাহিদুল হাসান শিশির, শেখ সোহাগ হোসেন মিন্টু, তৈয়বুর রহমান আকন্দ, অনিক, জামাল হোসেন, জসিম খান ওরফে টোকাই জসিম, শেখ মিলন ও জাহাঙ্গীর আলম। এসময় তাদের কাছ থেকে ৩টি অটোরিকশা, বেশ কয়েকটি ব্যাটারি ও মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।

বৃহস্পতিবার (৬ মে) তাদেরকে গ্রেফতার দেখিয়ে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠানো হলে আদালত ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন বলে জানা গেছে।

ডিবির সূত্র জানায়, চক্রের মূল হোতা বাবুল মিয়া ১৩ বছর ধরে চুরি পেশায় রয়েছেন। দক্ষিণখান ও কামরাঙ্গীরচর এবং রাজধানীর উপকণ্ঠ নবাবগঞ্জ ঘিরে গড়ে তুলেছেন ১৫ সদস্যের চোর চক্র। বয়সে ভাটা পড়ায় অভিনয় করে অটো চালকদের নির্জন এলাকায় নেওয়ার কাজ করতেন তিনি। আগেই ঠিক করে রাখা নির্জন এলাকায় যাওয়ার পর সহযোগিতার নামে তার অভিনয়ের ফাঁদে পা দিয়ে অটোরিকশা হারাতেন চালকরা। ঘটনাস্থল থেকে নকল চাবির মাধ্যমে অটোরিকশা চুরি করে নেওয়ার কাজ করতো গ্রেফতার হওয়া শিশির, তৈয়বুর ও মিন্টু। অটোরিকশার রং পরিবর্তন ও ব্যাটারি কেনার কাজ করতো জামাল। অটোরিকশা গ্যারেজে নেয়ার পর মিলন ও জাহাঙ্গীর সব ধরণের সহযোগিতা করতেন। টোকাই জসিম কখনো চুরি আবার কখনো অজ্ঞানপার্টির খপ্পরে ফেলার কাজ করতো।

অভিযানের নেতৃত্ব দেয়া ডিবির সাইবার ও স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের ওয়েব বেইজড ক্রাইম ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) আশরাফউল্লাহ বলেন, ডিএমপি এলাকায় সন্ত্রাসী ও অজ্ঞানপার্টির সদস্য গ্রেফতার ও মাদকদ্রব্য উদ্ধারে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করার সময় চক্রটির সন্ধান পাওয়া যায়। এরা মূলতো ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চুরির সংঘবদ্ধ সদস্য। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে অভিনব কায়দায় কয়েক’শ অটোরিকশা চুরিসহ হত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।-ইত্তেফাক

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে