মঙ্গলবার, ১৩ মার্চ, ২০১৮, ০৬:৪৬:৪৯

এক ঝাঁক হাঁস উড়ে এসে আছড়ে পরে, তারপর ১৫৫ জন যাত্রীকে যেভাবে বাচাঁলেন পাইলট

এক ঝাঁক হাঁস উড়ে এসে আছড়ে পরে, তারপর ১৫৫ জন যাত্রীকে যেভাবে বাচাঁলেন পাইলট

বলা হয়ে থাকে বিমান দুর্ঘটনার ৮০ শতাংশই ঘটে পাইলটের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে। কথাটির সত্যতা নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। বিভিন্ন কারণেই বিমান দুর্ঘটনাতে পরতে পারে। এমন অনেক নজির রয়েছে যখন শুধুমাত্র পাইলটের পারদর্শিতার কারণেই বিমান দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফিরেছেন শত শত যাত্রী।

১৯৮২ সালের ২৪ জুন। ব্রিটিশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট হিথ্রো থেকে অকল্যান্ড যাচ্ছিল। তখন মাউন্ট গালুংগং এর সক্রিয় আগ্নেয়গিরি তার অবস্থান জানান দিচ্ছিল। বিমানটি জাকার্তার কাছে এসে আগ্নেয়গিরির ছাইয়ের কুণ্ডলীর কবলে পড়ে। বিমানের চারটি ইঞ্জিনই বিকল হয়ে যায়! বিমানের ক্যাপটেন এরিক মুডি মাইক্রোফোনে বললেন, ‘ ভদ্র মহিলা ও মহোদয়গণ আমি আপনাদের ক্যাপটেন বলছি। আমাদের একটি ছোট সমস্যা হয়েছে। চারটি ইঞ্জিনই বিকল হয়ে পড়েছে। আমরা এগুলোকে চালু করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’

তখন যাত্রীরা তাদের প্রিয়জনদের উদ্দেশ্যে বার্তা লিখতে শুরু করলেন। আর ক্যাপটেন মুডি হিসেব করে দেখলেন তাঁরা ৯১ মাইল পর্যন্ত খাড়া ভাবে নামতে পারবেন। ১৩ হাজার ৫০০ ফিট খাড়াভাবে নামার পড় ইঞ্জিনগুলো আবার কাজ করতে শুরু করে। এ যাত্রায় অল্পের জন্য রক্ষা পেল   জুন। ব্রিটিশ এয়ারলাইন্সের ওই বিমানে থাকা সকল যাত্রী।

১৯৯০ সালের ১০জুন ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের ফ্লাইট ৫৩৯০ মালাগার উদ্দেশ্যে ৮১জন যাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু করল। পাইলটরা তখনো জানতো না বিমানের সামনের উইন্ডস্ক্রিন প্যানেলটি ত্রুটিপূর্ণ। ১৭ হাজার ফিট উপড়ে উড়ন্ত বিমানেই খুলে এলো উইন্ডস্ক্রিন। পাইলট উইন্ডস্ক্রিন দিয়ে অর্ধেক বেরিয়ে এলেন। আর তাঁর বাকি অর্ধেক ভেতরে। কেবিন ক্রুরা তাকে প্রাণপণে টেনে ধরেছেন। এসময় ৩০০ মাইল প্রতি ঘণ্টা বেগে বিমানে বাতাস ধুকতে শুরু করে। কোপাইলট আটকিসন বাতাসের শব্দে কন্ট্রোল রুমের নির্দেশনা শুনতে পারছিলেন না। নিজ পারদর্শিতায় বিমান রানওয়েতে সাউথহ্যাম্পটনে অবতরণ করলেন। পাইলট ততক্ষণে বাতাসের শীতল স্পর্শে অনেকটাই জমে গেছেন আর একটি হাত ভেঙ্গেছে।

সাম্প্রতিক সময়ে বিমানের হাডসন নদীতে অবতরণের ঘটনাটি বেশ পরিচিত। ২০০৯ সালের ১৫ই জানুয়ারি। ইউএস এয়ারওয়েসের ১৫৪৯ ফ্লাইটটিতে এক ঝাঁক কানাডার হাঁস উড়ে এসে আছড়ে পরে। এতেই বিকল হয়ে যায় বিমান। বিমানটিতে তখন ১৫৫ জন যাত্রী ছিল। ওই বিমানের পাইলট সুলেনবারজার বলেছিলেন পানিতে কীভাবে অবতরণ করতে হয় শুধু শ্রেণীকক্ষেই পাঠ্য পুস্তকে পরেছিলেন। হাডসন নদীতে সফল ভাবে বিমানটি অবতরণ করতে সক্ষম হন পাইলট সুলেনবারজার। তিনি সকল যাত্রীকে প্লেন থেকে নিরাপদে বের করে নিজে উদ্ধারকারী জাহাজে উঠে আসেন।

১৯৭২ সালের ১২ জুন। মার্কিন এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ৯৬ লস এঞ্জেলস থেকে নিউইয়র্কের উদ্দেশ্যে উড্ডয়ন করে। ডেট্রয়েটে বিরতির পর আবার উড্ডয়ন করলে আকাশেই এই ফ্লাইটের কার্গোর সামনের দরজা উড়ন্ত অবস্থায় ভেঙ্গে পড়ে। বিমনাটি এসময় মাত্র ১৪ হাজার ফিট লিমিটের নিচে নেমে আসে। এতে একটি ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। এসময় বিমানের ক্যাপটেইন ব্রাইস ম্যাককোমমিক ঘটনার ভয়াবহতা বুঝতে পেরে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন। ঘোষণার পর বিমানের যাত্রীরা সিটবেল্ট বেঁধে অক্সিজেন মাস্ক পড়েন। এর পর তিনি ডেট্রয়েটে অবতরণ করতে সফল হন।

১৯৮৩ সালের ২৩ জুলাই কানাডার ফ্লাইট ১৪৩ গিমিলি গ্লাইডার এর ফুয়েল শেষ হয়ে যায়। পাইলট এত জোরেই ল্যান্ড করেন যে বিমানের টায়র দুটি একরকম উড়ে যায়। তাঁর পরও শুধু মাত্র বৈমানিকের দক্ষতায় সেবার গ্লাইডারের আরোহীরা সবাই বেঁচে যান।

এছাড়া আলোহা ফ্লাইট ২৪৩, ক্যাটপ্যাসিফিক ফ্লাইট ৭৮০ও শুধুমাত্র বৈমানিকের পারদর্শিতা ও সঠিক সিদ্ধান্তে সফল অবতরণ করে। ২০১২ সালের ৪ নভেম্বর সুপারজাম্বো কুন্তাস ফ্লাইট ৪৬৯ জন যাত্রী নিয়ে উড্ডয়ন করে। এসময় ফ্লাইটে দুটো ইঞ্জিনে বিস্ফোরণ হয়। এসময় বিমানের একটি পাখা ক্ষতিগ্রস্ত হলে জ্বালানির ট্যাংকে আগুন ধরে যায়। এই অবস্থায় জাম্বোজেট এ-৩৮০ সঙ্গে ৪৬৯ জন যাত্রী নিয়ে সফল অবতরণ করেন বৈমানিক রিচার্ড চ্যাম্পিয়ন ডে ক্রিস্পেগনি। অবতরণের সময় বিমানের চারটি চাকাই উড়ে গিয়েছিল।
এমটি নিউজ/এপি/ডিসি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে