সোমবার, ১৬ জুলাই, ২০১৮, ১১:৫৬:০২

অদ্ভুত সুন্দরের দেশ ক্রোয়েশিয়া!

অদ্ভুত সুন্দরের দেশ ক্রোয়েশিয়া!

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক: এশিয়া মহাদেশের মানুষের তেমন কোনো ধারণা নেই ক্রোয়েশিয়া সম্পর্কে। তাদের এমন কোনো ঐতিহ্য বা ইতিহাস নেই যা মানুষকে মনে রাখতে সহযোগিতা করবে। তবে এবারের রাশিয়ায় ফুটবল বিশ্বকাপে রীতিমতো রূপকথার গল্প রচনা করল ক্রোয়েশিয়া। অপ্রত্যাশিত হলেও সত্য, টুর্নামেন্টজুড়ে উপহার দিল নান্দনিক ফুটবল। 

লুকা মড্রিচ-ইভান রাকিটিচদের পায়ে ফুটল শৈল্পিক ফুল। যার বদৌলতে রাশিয়া বিশ্বকাপের ফাইনালে ক্রোয়াটরা। ফ্রান্সের বিপক্ষে শিরোপা জিতুক আর না জিতুক বিজয়মাল্য তাদের প্রাপ্য! কিন্তু এ দেশ সম্পর্কে কতটা জানেন আপনি? চলুন সে দেশ সম্পর্কে কিছুটা জেনে আসি।

ক্রোয়েশিয়া ইউরোপ মহাদেশের একটি রাষ্ট্র। এটির রাজধানী জাগ্রেব। ক্রোয়েশিয়ার রাজনীতি একটি সংসদীয় প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কাঠামোতে পরিচালিত হয়। প্রধানমন্ত্রী একটি বহুদলীয় ব্যবস্থাতে সরকার প্রধান। সস্তায় বিদেশ ভ্রমণের জন্য অন্যতম সেরা ঠিকানা ক্রোয়েশিয়া। বিশেষ করে যদি আপনার সমুদ্র ভালো লাগে, তা হলে জীবনে একবার হলেও ক্রোয়েশিয়ার সৌন্দর্য দেখে আসা দরকার।

পৃথিবীর সুন্দর থেকে সুন্দরতর জায়গার খোঁজ করতে থাকেন ভ্রমণপ্রেমীরা। অজানা, অদেখা জায়গার হদিস পেতে নজর সর্বদা। ইন্টারনেটের বদৌলতে গোটা বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয়। একটা ক্লিকেই পৃথিবীর সুন্দর জায়গার একঝলক দেখতে পাওয়া যায়। আর সেই ইন্টারনেটই বলছে, ক্রোয়েশিয়া বিশ্বব্যাপী ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে অন্যতম সেরা পছন্দের ট্রাভেল ডেস্টিনেশন।

প্রায় হাজারেরও বেশি নানা আকৃতির দ্বীপ রয়েছে ক্রোয়েশিয়ার উপকূলে। জায়গাটি প্রায় ৫৬,৫৯৪ বর্গ কিলোমিটার জায়গাজুড়ে অবস্থিত। তবে এর আশপাশে শুধু পানি আর পানি। সেখানকার অপূর্ব সুন্দর দ্বীপগুলি দেখলে চোখ জুড়িয়ে যাবে। সেই সৌন্দর্যের টানে সেখানে মানুষের ভিড়ও প্রচুর।  সমুদ্রের অসাধারণ দৃশ্য দেখলে চোখ ধাঁধিয়ে যাবে।

এবারের বিশ্বকাপের শুরু থেকেই অসাধারণ খেলতে থাকা এই দেশটির দেশটির ফুটবলের অতীত ইতিহাস এবং তারা যদি ফাইনালে জয়লাভ করতো দেশে কেমন পরিবর্তন আসতে পারে সে বিষয়ে  নিয়ে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছে  দ্য ইকোনমিস্ট।  

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৭ জুলাই যেদিন রাশিয়াকে হারায় ক্রোয়েশিয়া, সেদিন সব কূটনৈতিক শিষ্টাচার ভুলে রাশিয়ান প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদেভের সামনেই আনন্দে নাচছিলেন ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট। আবেগের বাইরে প্রেসিডেন্টের এই উল্লাসের অন্য কোনো হেতু যদি কেউ খুঁজে বের করে, তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। কারণ, প্রেসিডেন্ট, তার দল সহ ক্রোয়েশিয়ার সব রাজনৈতিক দল ফুটবল-সংক্রান্ত নির্বাচনী অর্থায়ন থেকে লাভবান হয়েছে।

স্বাধীন ক্রোয়েশিয়ার প্রথম প্রেসিডেন্ট ফ্রাঞ্জো তুদজম্যান, যিনি নব্বইয়ের দশকে যুগোস্লাভিয়ার তিক্ত ভাঙন ও যুদ্ধের মধ্য দিয়ে দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তিনি বলেছিলেন, ‘ফুটবলে বিজয় একটি দেশের আত্মপরিচয়কে ততটাই রূপায়ন করে, যতটা করে যুদ্ধ।’ এটা প্রায়ই বলা হয় যে, ক্রোয়েশিয়ার স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা হয়েছিল ১৯৯০ সালের মে মাসের একটি দিন থেকে, যেদিন স্থানীয় ফুটবল ক্লাব জাগরেব ও সার্বিয়ার বেলগ্রেডের ভক্তরা সহিংস সংঘাতে লিপ্ত হন। 

এই দাবি সত্য নয়, তবে এটি সত্য যে সেদিনের ওই সংঘাতের তাৎপর্য ছিল ভীষণ তীব্র। ওই ম্যাচের দুই সপ্তাহ পর যুগোস্লাভিয়ার জাতীয় ফুটবল দল একই স্টেডিয়ামে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে এসেছিল। 

সেদিন যুগোস্লাভিয়া জাতীয় সঙ্গীত চলাকালে কেবল দুয়োধ্বনী দিয়েছিল ক্রোয়েশিয়ান সমর্থকরা। তাই বিশ্বকাপ জিতলে নিশ্চিতভাবেই আনন্দে ফেটে পড়তো পুরো দেশ। ‘ঐতিহাসিক’ শব্দটি ক্রোয়েশিয়ার ফুটবলে অতিব্যবহৃত একটি শব্দ। তবে সত্যিই যদি বিশ্বকাপ জিততো ক্রোয়েশিয়া, তাহলে এই শব্দের প্রয়োগ হবে যথার্থ। 

ক্রোয়েশিয়ার জনসংখ্যা মাত্র ৪৫ লাখ। ১৯৫০ সালে উরুগুয়ের বিশ্বকাপ জয়ের পর, এত কম জনসংখ্যার কোনো দেশ এখনো বিশ্বকাপ জেতেনি। কোনো ক্রীড়া পদক জয়ের অর্থনৈতিক প্রভাব কী হবে, তার হিসাব করাটা সহজ কাজ নয়। 

তবে এটা বলা যায় যে, ক্রোয়েশিয়া যদি বিশ্বকাপ জিততো দেশটি বিশ্বজুড়ে যেই ইতিবাচক প্রচারণা পাবে, তা বছরের পর বছর ধরে চালানো জনসংযোগ প্রচারণার চেয়েও অনেক বেশি মূল্যবান হতো।  তবে বিশ্বকাপের ফাইনালে আসার পর এখন পর্যটকদের আকর্ষণের মূল কেন্দ্র বিন্দুতে থাকবে ক্রোয়েশিয়া এ কথা বলাই যায়।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে