মনে মনে যেভাবে ছক করেছিলাম আল্লাহর রহমতে লিখিত পরীক্ষা সেভাবে ই দিয়েছিলাম। পরীক্ষার সর্বশেষ লাইন টি লেখার পর মনের অজান্তেই মুখ থেকে বেরিয়ে গেল আলহামদুলিল্লাহ....
১৯ মার্চ ২০১৭ ভাইভা তারিখ। ১৮ মার্চ সদ্য তৈরি করা একটি প্যান্ট আর একটি সাদা ঝকঝকে শার্ট লন্ড্রি থেকে এনে ওয়ারড্রব এ রাখলাম। পরদিন ৭ টায় ঘুম থেকে উঠলাম। রুমমেটের যাতে ঘুম না ভাঙ্গে সে জন্য ঢিম লাইটের আলোতে পোশাক পরে নিলাম।
১০ টার অনেক আগেই পিএসসি তে পৌছে গেলাম। ৯.৩০ এ হল রুম এ নিয়ে যাওয়া হল। এবার টাই টা ভাল মত লাগাতে হবে। কিন্তু কিছুতেই শার্ট এর কলার এর সাথে টাই সেট হচ্ছে না।একজন পূর্ব পরিচিত ভাই কে বললাম টাই টা লাগিয়ে দিতে। তিনি টাই টা লাগাতে গিয়ে বললেন ভাই আপনার শার্ট তো জং পড়া। এবার আমি শার্ট এর কলারের দিকে তাকালাম। আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল।
নতুন শার্ট এর পাশে রাখা তিন বছরের পুরনো বিভিন্ন জায়গায় জং পড়া শার্টটিই ঢিম লাইটের আলোতে পড়ে এসেছি। বুঝে গেলাম ভাইভা যা হওয়ার হয়ে গেছে।অগত্যা সেই ড্রেস এ হাজির হলাম শাহ আব্দুল লতিফ স্যারের বোর্ডে।
স্যার ১ ঘন্টা দেরি করে ভাইভা শুরু করল। সবার এভারেজ সময় ৫ মিনিট। সম্ভবত ৭ নাম্বার প্রার্থী আমি ছিলাম। যারা বের হচ্ছে সবার মন খারাপ।যাকেই জিজ্ঞেস করি বলে ভাইভা ভাল হয় নি।এবার আমার পালা।কলিং বেল বাজার সাথে সাথে আস্তে করে রুমে ঢুকলাম। সালামের উত্তর দিয়ে বসতে বললেন।
বসার সাথে সাথেই লতিফ স্যারের
প্রশ্ন : কি নাম তোমার?
স্যার মো:ইব্রাহীম
প্রশ্ন :তুমি যে ইব্রাহীম এটা প্রমাণ কর?
প্রশ্ন শুনে দুই এক্সটারনাল স্যারের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন...
কিছুক্ষণ পর ১ম এক্সটারনাল বললেন প্রশ্ন টা সহজ তুমি পারবে...
এবার একটু ভরসা পেলাম.....বললাম অামি স্যার আমি ডকুমেন্ট দিয়েছি. ..
স্যার বললেন ডকুমেন্ট আমি নিচ্ছি না।
একটু সময় নিয়ে হার মেনে নিলাম।
স্যার বললেন তুমি ছবি দিয়েছো, তার পেছনে একজন বিসিএস কর্মকতা সত্যায়িত করে দিয়েছে। চিন্তা করলাম যদি বলি স্যার আমি তো বলেছি ডকুমেন্ট দিয়েছি তাহলে বেয়াদবি হয়ে যাবে।স্যারের শ্রেষ্ঠত্ব মেনে নিলাম। স্যারের হাত থেকে বাচানোর জন্য ২য় এক্সটারনাল টেনে নিলেন।
আচ্ছা বল প্রশাসন কেন ১ম পছন্দ?
মনের মাধুরী মিশিয়ে বলা শুরু করলাম... কিন্তু গুছাতে পারলাম না।১ম এক্সটারনাল আবার জিজ্ঞেস করলেন প্রশাসন এর হায়ারারকি বল? শুরু না করতে ই লতিফ স্যার আবার টেনে নিলেন। শুরু করলেন সাবজেক্ট এর প্রশ্ন। স্যারের করা কোন প্রশ্ন এর ই আমি সন্তোষ জনক উত্তর করতে পারি নি।শেষ প্রশ্ন এরাবিক নিউমেরিক নাম্বার গুলো লিখ।শেষ বারের মত হার মেনে নিলাম।
তোমার সময় শেষ। আসতে পার।দরজার কাছে আসতেই আবার ডাকলেন। মাথা নিচু করে টেবিলের কাছে যেতেই বললেন যা জিজ্ঞেস করছি বাইরে গিয়ে বলবা? বিনয়ের সাথে বললাম জি না স্যার।মাথা নিচু করে চোখের পানি কোন মতে আটকে রেখে বেরিয়ে আসলাম। মনে মনে শুধু বললাম আল্লাহ তুমি ইচ্ছা করলে সব ই পার।
Mohammad Ibrahim
৩৬ তম বিসিএস...
প্রশাসন ক্যাডার এ সুপারিশ প্রাপ্ত।