রবিবার, ১১ আগস্ট, ২০১৯, ১২:১১:০৬

রিক্সা চালিয়ে পড়ালেখার পাশাপাশি সংসার চালায় ১৫ বছরের এতিম শিশু

 রিক্সা চালিয়ে পড়ালেখার পাশাপাশি সংসার চালায় ১৫ বছরের এতিম শিশু

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : যে বয়সে স্কুলে সবুজ মাঠে ফুটবল খেলার কথা বা বাড়ির পাশের খোলা মাঠে ক্রিকেট বল নিয়ে ছুটে চলার কথা, কানামাছি ভোঁ ভোঁ, গোল্লাছুট, ইত্যাদি খেলা করার কথা সে বয়সে দারিদ্রতার কারনে হাতে নিতে হয়েছে রিক্সা।কিন্তু সেই রিক্সাও থামিয়ে রাখতে পারেনি তার নিয়মিত স্কুলে যাওয়া থেকে বিরত রাখতে, রিক্সা চালানোর পাশাপাশি নিয়মিত স্কুলে যাচ্ছে সে । এক বেলা স্কুল আর এক বেলা আমতলী পৌর শহরে রিক্সা চালিয়ে পড়াশুনার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে বরগুনার আমতলী উপজে’লার সদর ইউনিয়নের মো. রাকিব নামের এক এতিম শি’শু। সে লোচা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর ছাত্র। নিজের খাতা-কলম, বই-পুস্তক ও জামা-কাপড় অন্যান্য খরচ যোগান দিতে খন্ডকালীন রিক্সা- চালিয়ে অর্থ উপাজন করে।

বিভিন্ন তথ্যে জানা যায় রাকিব, বরগুনা সদর উপজে’লার বুড়িরচর গ্রামের মো. জাহাঙ্গির হোসেনের পুত্র । জন্মের সময় রাকিবের মা হেলেনার মৃ’ত্যু হয় জাহাঙ্গির ও অসহায় দরিদ্র হওয়ায় জাহাঙ্গিরের বোন আফরোজা এই অসহায় এতিম বাচ্চাটিকে লালন পালন করতে নিয়ে আসেন তার স্বামীর বাড়ি আমতলী উপজে’লার সদর ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের লোচা গ্রামে।

আফরোজা জানান, জন্মের পরই ওর মা মা’রা যায়, তার পর আমি তাকে লালন পালন করে বড় করেছি। এবং বাড়ির পার্শ্ববর্তী লোচা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করি স্কুলে রাকিব ১ম থেকে ৫ম শ্রেণীতে প্রতি পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করায় রাকিবকে লোচা সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি করে দিয়েছি ও এখন ৮ ম শ্রেণীতে পড়ছে।

রাকিবের পালক বাবা মো. ফোরকান খান বলেন , আমি গরীর মানুষ নুন আনতে পান্তা ফুরায় কোনো বেলা খেতে পারি কোনো বেলা খেতে পারিনা। আমি রিক্সা চালিয়ে রাকিবের পড়ালেখা চালাই।এখন আমি অ’সুস্থ অবস্থায় ঘরে পড়ে আছি এজন্য রাকিব স্কুল থেকে এসে বিকাল বেলা রিক্সা চালিয়ে নিজের পড়ালেখার খরচ যোগাড় করে।

সহায়-সম্বলহীন রাকিবের ফুফু পালক মা আফরোজা ও পালক বাবা ফোরকান খান আরো বলেন রিক্সা চালিয়ে যা আয় হয় তা দিয়ে সংসার ঠিক মতো চলে না। তার উপর রাকিবের লেখাপড়া করানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে আমা’র পুত্র রবিউলের পড়ালেখাও বন্ধ করে দিয়েছি। রাকিব নিজে রিক্সা চালিয়ে পড়ালেখার খরচ যোগাড় করে পড়ছে।

রিক্সা চালানো অবস্হায় কথা হলে, মো. রাকিবের সাথে সে বলল জন্মের পর মাকে দেখি নাই ফুফু আমাকে বড় করেছে। আমা’র স্কুলে কাগজ পত্রে আমা’র পিতার নাম আমা’র পালক বাবা ফোরকান খান ও মাতা আফরোজা বেগম লেখাইছি।আমা’র পড়ালেখা করতে যতটুকু শ্রম দেয়ার তা দিয়ে যামু। এসব কথা যেন নির্বিঘ্নে ছলছল চোখে বলে মিষ্টি হাসি দিল মো.রাকিব (১৫)।

রাকিব আরো বলে লেখা-পড়া শিখে ভবিষ্যতে মানুষের মত মানুষ হতে চাই । এ স্বপ্ন নিয়েই রিক্সা চালিয়ে হলেও পড়ালেখা করে নিজের পালক বাবা ও মায়ের সকল দুঃখ দূর করবো। সে আরও জানায়- প্রতিদিন ঠিক মতো রিক্সা চালাতে পারলে ২শ থেকে ৩ শ টাকা আয় হয়। সে টাকা দিয়ে স্কুলের খরচ বহন করে যা থাকে সে টাকা পালক বাবা মায়ের সংসারে দিয়ে দিয়।

এ ব্যাপারে লোচা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক মো. মান্নান মাসুদ বলেন ,রাকিব মেধাবী ছাত্র সে নিয়মিত স্কুলে আসে এবং পড়ালেখায় ও অনেক ভাল।আমতলী উপজে’লা নির্বাহী অফিসার মো. সরোয়ার হোসেন বলেন রাকিব রিক্সা চালিয়ে নিজে পড়া লেখার খরচের জন্য অর্থ উপার্জন করে এতে আমি অ’ভিভুত। তাকে সরকারি ভাবে সহযোগিতা করা হবে।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে