সোমবার, ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ০১:১৪:৪২

নৌকা চালিয়ে ঘন জঙ্গলের বিপদসঙ্কুল পাহাড়ি রাস্তায় দুই ঘণ্টা হেঁটে পড়াতে যান স্কুলশিক্ষিকা

নৌকা চালিয়ে ঘন জঙ্গলের বিপদসঙ্কুল পাহাড়ি রাস্তায় দুই ঘণ্টা হেঁটে পড়াতে যান স্কুলশিক্ষিকা

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : বাড়ি থেকে বেরিয়ে প্রথমে স্কুটি। তারপর বাহন জমা রেখে নদীতে একা একা নৌকা চালিয়ে যাওয়া। এরপর বিপদসঙ্কুল পাহাড়ি জঙ্গলপথে দুই ঘণ্টা ট্রেকিং। অবশেষে দেখা পান ১৪ জন শিক্ষার্থীর। 

যাদের পড়াতে রোজ এই যাত্রাপথ পাড়ি দেন ভারতের কেরালার শিক্ষিকা কে আর ঊষাকুমারী। গত বিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে এটাই প্রাত্যহিক কাজ এই শিক্ষিকার। একদিনের জন্যেও কর্মক্ষেত্রে পৌঁছাতে দেরি হয় না তার। 

প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিলে বাড়ি না ফিরে থেকে যান কোনও শিক্ষার্থীদের বাড়িতে। যাতে পরের দিন অনুপস্থিত না হতে হয়। তিরুঅনন্তপুরম জেলার অমবুরি গ্রামের বাসিন্দা এই শিক্ষিকা প্রতি সকালে সাড়ে ৭টা নাগাদ বাড়ি থেকে বার হন। 

স্কুটিতে পৌঁছান কুম্বিক্কল কাদাভু অবধি। এরপর নদীতে নৌকা চালিয়ে তিনি পৌঁছান ‘অগস্ত্যবনম’ বনাঞ্চলের কাছে। এ বার শুরু হয় ঊষাকুমারীর জঙ্গল-পাড়ি। একটি মাত্র লাঠি সম্বল করে তিনি দুই ঘণ্টা ধরে ঘন অরণ্যের মধ্যে দিয়ে হেঁটে যান পাহাড়ি পথে। 

বন্যপ্রাণীদের আক্রমণের আশঙ্কায় বিপদসঙ্কুল এই পথের পরে ঊষাকুমারী পৌঁছন নিজের কর্মক্ষেত্র, ‘অগস্ত্য একা আদ্যপক স্কুলে’। কুন্নাথুমালার ওই স্কুলে কান্নি উপজাতির শিক্ষার্থীদের জন্য ঊষাকুমারীই একমাত্র শিক্ষিকা। তিনিই তাদের যত্ন করে পড়ান গণিত, বিজ্ঞান ও ভাষা।

শুধু পড়ানোই নয়। নিজের হাতে পরিবেশন করেন মিড ডে মিল। বেতনের টাকা থেকে ব্যবস্থা করেন দুধ ও ডিমের। নিজের বেতন কোনও কারণে অনিয়মিত হলেও ছাত্র ছাত্রীদের মিড ডে মিল-এ দুধ ও ডিমের যোগান বন্ধ হতে দেননি তিনি। 

একান্তই তিনি না আসতে পারলে ব্যবস্থা করেছেন একজন কেয়ারটেকারের। ক্লাস না হলেও যাতে বন্ধ না হয় শিক্ষার্থীদের মিড ডে মিল। ঊষাকুমারীর শুরুর যাত্রাপথ ছিল আরও বন্ধুর। তিনি যখন প্রথম চাকরি শুরু করেছিলেন, ছিল না কোনও স্কুলের বিল্ডিং-ই। গাছতলায় বড় পাথরখণ্ডে বসে পড়াতেন তিনি। পরে তৈরি হয় স্কুলের বাড়ি।

এই কুর্নিশযোগ্য কাজের জন্য ঊষাকুমারী বহু স্বীকৃতি পেয়েছেন। তার মধ্যে আছে কেরালা অ্যাসোসিয়েশন ফর ননফরমাল এডুকেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট-এর ‘সাক্ষরতা পুরস্কারম’-ও। কিন্তু এই শিক্ষাব্রতী জানিয়েছেন, তার কাছে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার হবে, যখন পরবর্তী সময়ে তার স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা আরও বেশি হারে নিজেদের জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে। সেখানেই তার কৃচ্ছ্রসাধনের সার্থকতা। সূত্র : আনন্দবাজার

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে