বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ০৪:৩৯:০৩

১৭ বছর আগে দুই হাত হারানো মেয়েটি আজ বিখ্যাত মোটিভেশনাল স্পিকার

১৭ বছর আগে দুই হাত হারানো মেয়েটি  আজ  বিখ্যাত মোটিভেশনাল স্পিকার

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : নিজের ছেঁড়া জিনস জোড়া লাগাতে গিয়েছিল ছোট্ট একটা মেয়ে। আঠা দিয়ে জোড়া লাগিয়েও দিয়েছিল জিনসের ছেঁড়া অংশগুলো। কিন্তু ভারী কিছু একটা জিনিস দিয়ে উপরে চাপ দিতে হবে তো! নইলে যে আঠা আলগা হয়ে যাবে। 

তবে আঠা লাগানো জিনসের ছেঁড়া অংশে চাপা দেওয়ার জন্য কোনও ভারী জিনিস ছিল না ওই ছোট্ট মেয়েটার কাছে। অনেক ভেবে উপায় বের করল কিশোরী। দৌড়ে গিয়েছিল বাড়ির গ্যারেজে। বাচ্চাটির ধারণা ছিল কিছু একটা ভারী জিনিস সে পেয়েই যাবে এখানে। পেয়েও ছিল কিন্তু কিশোরী জানত না যে ওই জিনিসই তার জীবনে ভ'য়'ঙ্ক'র বি'প'দ ডেকে আনতে চলেছে। 

জিনসের আঠা লাগানো ছেঁড়া জায়গা চাপা দেওয়ার জন্য যে ভারী জিনিস ওই কিশোরী হাতে করে ঘরে নিয়ে এসেছিল আসলে সেটা ছিল একটা হ্যান্ড গ্রে'নে'ড। জিনসের কাপড়ের সংস্পর্শে এসে কিশোরীর হাতেই ফেটে যায় ওই গ্রেনেড। কিশোরীকে খো'য়াতে হয় দু'হাতেরই কবজি থেকে সামনের দিকের হাতের পাতা পর্যন্ত অংশ।

এই ঘটনা আজ থেকে ১৭ বছর আগের। রাজস্থানের বিকানিরে বাড়ি ছিল মালবিকা আইয়ারের। বাড়ির গ্যারেজে সেদিন ওই গ্রেনেড হাতে নিয়ে মালবিকা টের পায়নি কী মা'রা'ত্মক ঘটনা ঘটতে চলেছে। নিমেষের মধ্যেই ঝ'লসে যায় কিশোরীর দুই হাত। শুধু হাত নয়, শরীরের অন্যান্য অংশেও গু'রুত'র চো'ট পায় মালবিকা। অনেকে তো ধরেই নিয়েছিলেন আর বাঁচবে না মেয়েটা। 

তবে সেই মেয়ে শুধু প্রাণে বাঁচেনি, বরং লড়াই করে জায়গা বানিয়েছে নিজের। আজ মালবিকা আইয়ারকে একডাকে চেনেন অনেকেই। কারণ ৩০ বছরের মালবিকা এখন মোটিভেশনাল স্পিকার। সম্প্রতি ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের হাত থেকে পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি। গতকাল ৩ ডিসেম্বর ছিল বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস। 

সেদিনই রাষ্ট্রপতির হাত থেকে মহিলাদের জন্য সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান (highest civilian honour for women) পেয়েছেন মালবিকা। আজ মালবিকা সফল। অনুপ্রেরণা দেন সমাজের এমন অনেক মানুষকে যাঁরা হয়তো বিভিন্ন পরিস্থিতির চাপে মানসিক ভাবে বি'ধ্ব'স্ত হয়ে গিয়েছেন। তবে লড়াই করে এই জায়গায় আসাটা মালবিকার জন্য মোটেও সহজ ছিল না। 

তাঁর কথায়, '১৭ বছর আগে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে শুনেছিলাম আশপাশ থেকে ফিসফিস করে কয়েকজন মহিলা বলছেন জেনারেল ওয়ার্ডের ওই নতুন মেয়েটাকে দেখেছেন? কী ল'জ্জা! জীবনটা অ'ভিশ'প্ত হয়ে গিয়েছে মেয়েটার। এভাবে বেঁচে থাকা মানেও তো একপ্রকার মরেই যাওয়া।' 

মালবিকা বলেছেন, 'মাত্র ১৩ বছর বয়সেই আমার ভিতরের আমিটা ওই মহিলাদের কথাগুলো বিশ্বাস করতে শুরু করেছিল। মেনে নিয়েছিল নিজের দুর্ভাগ্য হিসেবে। তবে আমার পরিবার এবং বন্ধুরা সবসময় আমায় পাশে ছিল। ওদের সমর্থনেই আজ এতদূর আসতে পেরেছি।'

সেদিন ওই মহিলাদের বলা সব কথাকে একদম ছক্কা হাঁকিয়ে উড়িয়ে দিয়েছেন আজকের মালবিকা। লেখকের সাহায্য নিয়ে চেন্নাই থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন তিনি। রাজ্যের মধ্যে স্থানও অধিকার করেছিলেন। এপিজে আবদুল কালাম যখন রাষ্ট্রপতি ছিলেন সেসময় রাষ্ট্রপতি ভবনেও আমন্ত্রণ পান মালবিকা। এরপর রাজধানি শহর দিল্লির অন্যতম নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সেন্ট স্টিফেন্সে অর্থনীতি নিয়ে স্নাতকের পড়াশোনা শুরু করেন তিনি।

দিল্লি স্কুল অফ সোশ্যাল ওয়ার্ক থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিও পান মালবিকা। এরপরেই মোটিভেশনাল স্পিকার হিসেবে শুরু হয় মালবিকা জার্নি। জীবনের এই নতুন অধ্যায়ে এসে তিনি ঠিক করেন সমাজের বিশেষ ভাবে সক্ষম মানুষদের প্রতি মুহূর্তে তিনি বুঝিয়ে চলেছেন যে একটু মনের জোর থাকলেই তাঁরাও দেখিয়ে দিতে পারবেন বাকিদের থেকে তাঁরা কোনও অংশে কম নন।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে