মঙ্গলবার, ১৭ মার্চ, ২০২০, ০১:৫৫:০৩

জেনে নিন, শরীরের ভেতর কি ভাবে ঢুকে কোন কোন পথে আ'ক্রমণ চালায় করোনা?

জেনে নিন, শরীরের ভেতর কি ভাবে ঢুকে কোন কোন পথে আ'ক্রমণ চালায় করোনা?

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : বিশ্বজুড়েই ত্রা'স সৃষ্টি করেছে করোনা গ্রুপের কোভিড-১৯ ভাইরাস। সরকারের তরফ থেকে এই ভাইরাস রো'ধে নানা স'ত'র্কতামূলক প্রচার চলছে। তারপরেও এই ভাইরাস সম্পর্কে ও ভাইরাস থেকে তৈরি হওয়া অসুখ নিয়ে এখনও নানা বিভ্রা'ন্তি রয়েছে। এই ভাইরাস মানুষের শরীরে প্রবেশ করে কী কী কার্যকলাপ ঘটায়, কোন কোন অংশে থা'বা বসায় তা নিয়েও রয়েছে ধোঁ'য়াশা।

তবে শরীরের ভিতর এর কারিকুরি কী, তা বোঝার আগে শরীরে এই ভাইরাস কী ভাবে প্রবেশ করে তা জানা দরকার। ন্যাশভিল-এর ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল সেন্টারের সং'ক্রা'মক রোগ বিশেষজ্ঞ উইলিয়াম শ্যাফনারের মতে, রো'গাক্রা'ন্ত মানুষের হাঁচি-কাশির ড্রপলেট বায়ুতে ঘুরে বেড়ায়। রোগীর কাছাকাছি থাকা সুস্থ মানুষের নাক, মুখ ও চোখের মাধ্যমে তার শরীরে প্রবেশ করে এই ড্রপলেট। 

শরীরে এসেই ভাইরাসের অণুগুলো দ্রুত নাসাপথের পিছন দিকে বা গলার ভিতরের দিকে মিউকাস মেমব্রেনের ভিতরে গিয়ে সেখানকার কোষে হা'না দেয়। সেই কো'ষই তখন হয়ে যায় গ্রাহক বা রিসেপ্টর কোষ। করোনা ভাইরাসের দেহতল থেকে উঠে আসা বা স্পাইকের আকারে অবস্থান করা প্রোটিনকণাগুলো কোষের আস্তরণকে আঁকড়ে ধরে ভাইরাসের জিনগত উপাদানকে সুস্থ মানুষটির দেহকোষে প্রবেশ করতে সাহায্য করে। 

ভাইরাসের এই জিনগত উপাদানগুলি কোষের বি'পাক ক্ষ'মতার উপর একপ্রকার দখল নিয়ে কোষকে নির্দে'শ দেয় 'ভুলভাল' কাজ করার জন্য। 'ভুলভাল' কাজ মানে? কোষকে নিয়ন্ত্রণ করেই সে তাকে দিয়ে সেই ভাইরাসের বৃদ্ধি ও বেড়ে ওঠায় সাহায্য করতে কোষকে বাধ্য করে। শরীরে ঢুকে শ্বা'সজ'নিত সম'স্যা কী ভাবে ঘটায়?

কোষ যখন বাধ্য হয়ে ভাইরাসের বৃদ্ধি ও ফুলেফেঁপে ওঠার কাজে মন দেয়, তখন বেড়ে যাওয়া ভাইরাস অণুগুলি ফেটে গিয়ে গ্রাহক কোষের চারপাশে থাকা অন্যান্য কোষগুলিকেও আ'ক্রমণ করে। এরই উপসর্গ হিসেবে গলাব্যথা ও শুকনো কাশি শুরু হয়। এর পর দ্রুত এই ভাইরাস ব্রঙ্কিওল টিউবে ছড়িয়ে পড়ে।

আরও পড়ুন : যে দুই রোগ থাকলে করোনায় মৃত্যুর ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি 

যখন বাড়তে বা়ড়তে সেই ভাইরাস ফুসফুসে এসে পৌঁছয়, তখন ফুসফুসের মিউকাস মেমব্রেনে প্রদাহ তৈরি হয়। এটি অ্যালভিওলাই ও ফুসফুসের থলিগুলির ক্ষ'তি করে। ফলে এদের পক্ষে সারা শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ করা ও কার্বন ডাই অক্সাইড অ'পসা'রণ করার কাজটাও খুব ক'ঠিন হয়ে পড়ে। ফুসফুসে ঢুকে কোন পথে ছড়ায় ভাইরাস?

শিকাগো স্কুল অব মেডিসিনের প্যাথোলজি বিভাগের অধ্যাপক সু-ইউয়ান জিয়াও চিনের করোনা-আক্রা'ন্ত রোগীদের রিপার্ট পরীক্ষা করেন। তার মতে, ফুসফুসের দুই পা‌শের পেরিফেরিয়াল অঞ্চলে আ'ক্র'মণ করে উপরের শ্বা'সানালী ও ট্রা'কিয়ার দিকে ছড়িয়ে পড়ে ভাইরাস।

আইকাহান স্কুল অব মেডিসিনের গবেষকরা সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখিয়েছেন, চিনে অনেক রোগীর প্রাথমিক পর্যায়ে সিটি স্ক্যা'ন করানো হয়েছিল। সিটি স্ক্যানে দেখা যায়, রো'গের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে ফুস'ফুসের অংশগুলিতে এক ধরনের ধোঁ'য়াশার ওড়না। এমন ছাপ বিভিন্ন ধরনের ভাই'রাল শ্বাস-প্রশ্বাসের সং'ক্র'মণের জন্যই হয়। অসু'স্থতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই অস্ব'চ্ছ অঞ্চলগুলি ছড়িয়ে পড়ে ও ঘন হতে থাকে।

শুধু কি ফুসফুসেই হা'মলা চালায় এই ভাইরাস? গবেষক কম্পটন ফিলিপের মতে, তেমন সরলীকরণ করলে ভুল হবে। মিউকাস মেমব্রেনের পথ ধরেই এই ভাইরাস ছড়ায়। তাই নাক-মুখ দিয়ে ঢুকে তা মিউকাস মেমব্রেন ধরে এগোতে এগোতে পায়ু'দ্বার পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে। পথে যে কোনও অংশেই চালাতে পারে করোনা-স'ন্ত্রা'স। গ্যাস্ট্রো'ইনটেস্টা'ইনাল সিস্টেমেও এই ভাই'রাস হানা দেয়। 

তখন জ্বর-সর্দি-কাশির সঙ্গে ডায়েরিয়া বা ব'দহ'জমের সম'স্যা দেখা দেয়। র'ক্তবাহেও প্রবেশ করতে পারে এই জীবাণু। করোনাভাই'রাস রো'গীর আরএনএ ​​এবং মলের নমুনাতেও ধ'রা পড়েছে। তবে সং'ক্রাম'ক এই ভাইরাসকে র'ক্ত বা মল ধরে রাখতে পারে কি না তা নিয়ে এখনও কোনও স্পষ্ট ধারণায় পৌঁছতে পারেননি চিকিৎসকেরা। এ ছাড়াও এই ভাই'রাসের হা'নার প্রকো'পে অস্থি'ম'জ্জা এবং লিভারের মতো অঙ্গগুলিও ফুলে উঠতে পারে। 

আরও পড়ুন : করোনার সেবা দিতে দিতেই ইতালির চিকিৎসকের মৃত্যু!

শরীরে এই ভাইরাস ছড়়িয়ে যাওয়া মাত্র শরীরের রো'গ প্র'তিরো'ধ ক্ষ'মতা এর সঙ্গে ল'ড়াই শুরু করে। ফলে এর বি'রু'দ্ধে লড়তে গিয়ে প্রদাহযুক্ত অঞ্চলগুলির কিছুটা ক্ষ'তি করে। ফলে শারীরিক ক্ষ'তি যে কেবল ভাইরাসের কারণেই হয়, এমন নয়। ক্ষ'তি কিছুটা হয় নিজের প্রতিরো'ধ ব্যবস্থা দ্বারাও। মস্তিষ্কেও কি প্রভাব ফেলে এই ভাইরাস?

এই ভাইরাসের মস্তিষ্কে প্র'ভা'ব ফেলা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা এখনও নি'শ্চিত নন। এর আগে, সার্সের বেলায় বিজ্ঞানীরা প্রমাণ পেয়েছিলেন যে সার্স ভাই'রাস কিছু রো'গীর মস্তি'ষ্কেও অনুপ্রবেশ করতে পারত। তবে সার্স ও কোভিড-১৯-এর চরিত্রগত বেশ মিল থাকায় জার্নাল অব মেডিক্যাল ভায়ারো'লজির গবেষকরা গত মাসে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে যুক্তি দিয়েছিলেন যে করোনা ভাইরাস কিছু কিছু স্না'য়ুকো'ষ সং'ক্রা'মিত করতে পারে। সুতরাং এর সং'ক্র'মণ অঞ্চল নিয়ে এখনই নি'শ্চিত হয়ে কিছু ধরে না নেওয়াই ভাল বলে বিশেষ'জ্ঞদের মত।

এই ভাইরাসের প্রকো’পে কেউ কেউ খুবই অসুস্থ বোধ করেন, কেউ কেউ আবার অতটাও নয়, কেন? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনও ব্যক্তির প্রতিরো'ধ ক্ষ'মতা কতটা শ'ক্তিশালী বা দু'র্বল, তার উপর নির্ভর করে এই অসুখ কার শরীরে কতটা থা'বা বসাবে। বয়স্ক ব্যক্তি বা ডায়াবিটিস, নিউমোনিয়া, উচ্চ র'ক্তচা'প ও অন্য কোনও দীর্ঘ'স্থায়ী অসু'স্থতার সম'স্যায় ভু'গলে রোগের লক্ষণ গু'রুতর ভাবে প্রকাশ পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।

এই রোগে আক্রা'ন্ত হলে রোগীর শরীরে কী কী ল'ক্ষণ দেখা দিতে পারে? বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সুমিত সেনগুপ্তের মতে, এই ভাইরাস শরীরে ঢোকার পর প্রায় এক সপ্তাহ ধরে স্থিতিশীল থাকতে পারে। অর্থাৎ, শরীরে প্রবেশ করার পর এক সপ্তাহ ঘাপটি মেরে সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে। তারপর হঠাৎই জ্বর-সর্দি-কাশি বা নিউমোনিয়ার লক্ষণ প্রকাশ পেতে শুরু করে।

সুস্থ হয়ে ওঠার কিছু দিন পরে ফের এই ল'ক্ষণ দেখা দিতে পারে। কাজেই সুস্থ হয়ে উঠলেই ভ'য় নেই আর, এমন ধরা ঠিক নয়। জ্বর-সর্দি-কাশির সঙ্গে ট্র্যা'কিয়া ও শ্বা'সনালীতে সং'ক্র'মণের জন্য শ্বা'সক'ষ্টও শুরু হয়। পেটের অসুখও দেখা দিতে পারে যদি এই ভাইরাস গ্যাস্ট্রো'ইনটেস্টা'ইনাল সিস্টেমকেও আ'ক্রমণ করে বসে। সুতরাং, এই ভাইরাসকে গুরুত্ব দিতে হবে। 

এর হাত থেকে বাঁচতে বার বার সাবান বা ৬০ শতাংশ অ্যা'লকো'হল রয়েছে এমন স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধোওয়া খুব জ'রুরি। শরীরের প্র'তিরো'ধ ক্ষ'মতা বাড়াতে পাতে স্বাস্থ্যকর খাওয়া-দাওয়া রাখা এবং ধূ'মপান ও ম'দ্যপান ব'ন্ধ করে শরীরে অন্য অসু'খের হা'না আ'টকানোটাও জ'রুরি। শরীর যত রো'গমু'ক্ত থাকবে, ততই রো'গ প্র'তিরো'ধ ক্ষ'মতা বাড়বে। সূত্র : আনন্দবাজার

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে