সোমবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯, ০১:১৬:১৮

বোরকা পরে অভিমানী স্ত্রীকে খুঁজতে বাড়িতে বাড়িতে স্বামী, অতঃপর গণধোলাই

বোরকা পরে অভিমানী স্ত্রীকে খুঁজতে বাড়িতে বাড়িতে স্বামী, অতঃপর গণধোলাই

মাদারীপুর: অভিমানী স্ত্রীকে খুঁজতে বোরকা পরে গণধোলাইয়ের শিকার হয়েছেন এক ব্যক্তি। মাদারীপুরের শিবচর থানায় মামলা দায়েরের পর হারুন মুন্সী (৪০) নামের ওই ব্যক্তিকে কারাগারে পাঠানো হয়। তবে এতকিছুর পরও স্ত্রীর সন্ধান পাননি হারুন।

আটকের পর হারুনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় ২০ বছর আগে মাদারীপুর সদর উপজেলার শিরখাড়া ইউনিয়নের চরঘুনচি গ্রামের হারুন মুন্সীর সঙ্গে এক বাকপ্রতিবন্ধীর স্ত্রী শান্তি বেগমের (৪৫) সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। একবছর পর শান্তির ভাগ্নির সঙ্গে হারুনের বিয়ে হয়। কিন্তু স্ত্রীর চেয়ে শান্তির ওপরই বেশি টান ছিল হারুনের। 

ফলে বিয়ের এক বছরের মাথায় হারুনের সংসার ভেঙে যায়। এর পরের বছর দুই সন্তানের মা শান্তিকে নিয়ে ঘর ছাড়েন হারুন। মুন্সীগঞ্জে গিয়ে ঘর বাধেন তারা। মা-বাবা তাদের একমাত্র ছেলের এই বিয়ে মেনে না নিলে রংমিস্ত্রীর কাজ করেই চলত হারুনের সংসার।

হারুন জানান, ২০১২ সালে মা-বাবার কথা ও মায়ের করা মামলায় জেল খাটার পর শান্তিকে তালাক দেন হারুন। এর ছয় মাসের মধ্যে আরেক নারীর সঙ্গে বিয়ে হয় তার। কিন্তু এই সংসারও বেশিদিন টেকেনি। আবার শান্তির কাছে ফিরে গিয়ে হাত-পা ধরে বিয়ে করেন হারুন। আবার মুন্সীগঞ্জে রংমিস্ত্রীর কাজ করে চলছিল সংসার। 

গত বছর শান্তির ছেলে বিদেশে যান এবং মেয়েরও বিয়ে হয়। ছেলের বিদেশ যাওয়া ও মেয়ের বিয়ের পরই বাধে বিপত্তি। ছয় মাস আগে মুন্সীগঞ্জ ছেড়ে গা ঢাকা দেন শান্তি। এদিক-ওদিক ঘোরাঘুরি করেও শান্তিকে না পেয়ে হারুন হয়ে যান পাগলপ্রায়। এরই মাঝে হারুন জানতে পারেন শান্তি শিবচরেই অবস্থান করছেন।

শান্তিকে খুঁজতে ও তিনি যাতে না পালিয়ে যেতে পারেন সেজন্য হারুন সিদ্ধান্ত নেন, বোরকা পরে শিবচরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে খুঁজবেন স্ত্রীকে। সে অনুযায়ী ঢাকার শাহাদাতপুর থেকে কেনেন বোরকা, হাত মোজাসহ মেয়ে সাজার নানান সামগ্রী।

হারুন আরও জানান, গত শনিবার সকালে ব্যাগ ভর্তি করে ওইসব সামগ্রী নিয়ে শিবচরের উদ্দেশে রওয়ানা দেন তিনি। শিমুলিয়া ঘাট থেকে লঞ্চে করে কাঠালবাড়ি ঘাটে পৌঁছানোর পর লঞ্চেই পড়ে নেন নারীর পোশাক। দুপুরে শিবচর পৌরসভার হেলিপ্যাড এলাকায় এসে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নারী কন্ঠে খোঁজা শুরু করেন স্ত্রীকে।  

সাত থেকে আটটি বাড়ি খোঁজার পর এলাকার নারীদের বিষয়টি সন্দেহ হয়। পরে মুখোশধারী হারুনের আসল রূপ বেরিয়ে আসে। পরে এলাকাবাসী তাকে গণপিটুনি দেয়। একপর্যায়ে এলাকাবাসী থানায় খবর দিলে শিবচর থানা পুলিশ হারুনকে আটক করে। পরে জিজ্ঞাসাবাদে বের হয়ে আসে বৌ-পাগল হারুনের কাহিনী। তার কাছে শান্তির সঙ্গে তার নিকাহনামাও পাওয়া যায়।

হারুন মুন্সী বলেন, ‘আমার বড় বউ দেখতে কালো হলেও ও আমার অনেক যত্ন নেয়, ভালবাসে। ওর ছেলে বিদেশ যাওয়া ও মেয়ের বিবাহ দেওয়ার পর ও পাল্টাইয়া গেছে। ছয় মাস ধইরা আমার ফোনও ধরে না। তাই বোরকা পইরা মহিলা সাইজা খুজতে আইছি, যাতে ও আমারে দেইখা না পালাইয়া যায়। আমি কাউরেতো বিরক্ত করি নাই। বোরকা পরে মহিলা কন্ঠে খুঁজতেছিলাম। সারা দিন খুঁজলে ঠিকই পাইতাম। তারা আমারে দিল না খুঁজতে। ছেলেদের জুতা পড়ায় ও কণ্ঠের কারণে ধরা খেলাম। ওরে (শান্তি) ছাড়া আমার একটুও ভালো লাগে না। পুলিশরে আমারে ছাড়তে বলে দেন।’

শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘ছদ্মবেশে হারুন ওই এলাকায় ঘরে ঘরে প্রবেশ করে। এলাকাবাসী ওকে ধরে আমাদের কাছে দিয়েছে। সে বৌকে খোঁজার কথা বলছে। তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।’

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে