সোমবার, ১১ জুন, ২০১৮, ০৮:৪৮:৩৬

রোজার কাজা কাফ্ফারা আদায়ের নিয়ম

রোজার কাজা কাফ্ফারা আদায়ের নিয়ম

হাফেজ মাওলানা মো. নাসির উদ্দিন: রমজানে রোজা ভেঙ্গে ফেললে কখনও শুধু কাজা, আবার কখনও কাজা ও কাফ্ফারা উভয়টিই ওয়াজিব হয়। কাজা বলা হয় কোনো রোজা ভেঙ্গে গেলে পরবর্তী সময়ে ঐ রোজা আদায় করে নেয়াকে। আর রোজার কাফ্ফারা হল, একটি গোলাম আজাদ করা। আর তা সম্ভব না হলে  ( যেমন বর্তমানে গোলাম-বাদির প্রচলন নেই) ধারাবাহিকভাবে ৬০টি রোজা রাখা।

মাঝখানে যদি একদিনও রোজা বাদ দেয় বা ভঙ্গ করে তাহলে আবার নতুন করে ৬০টি রোজা রাখতে হবে। তবে মহিলাদের মাসিকের কারণে যে কয়দিনের রোজা ভাঙ্গবে, সেজন্য তাদের নতুন করে ৬০টি রোজা রাখতে হবে না। আর যদি কেউ ধারাবাহিকভাবে ৬০টি রোজা রাখতে অক্ষম হয়, তাহলে ৬০ জন মিসকিনকে দুইবেলা পেটপুরে খাওয়াবে বা প্রত্যোককে এক ফিতরা পরিমাণ সদকা করে দিবে। (ফাতওয়ায়ে শামী ৩/৩৯০;আল বাহরুর রায়েক ২/৪৮৪;জাওয়াহিরুল ফিকহ ১/৪২৭)

যে সকল কারণে রোজা ভাঙ্গলে শুধু কাজা ওয়াজিব হয়:

১. কেউ ভুলে পানাহার করার পর রোজা ভেঙ্গে গেছে মনে করে পুনরায় ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার করলে তার রোজা ভেঙ্গে যাবে ও কাজা ওয়াজিব হবে। (ফাতওয়ায়ে শামী ৩/৩৭৫;ফাতওয়ায়ে আলমগীরী ১/২০৬)

২. দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা খাবার যদি ছোলা বুটের সমপরিমাণ বা অধিক হয় এবং তা গিলে ফেলে, তাহলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। আর যদি  ছোলা বুটের চেয়ে কম হয় তাহলে রোজা ভাঙ্গবে না, কিন্তু মাকরুহ হবে। উল্লেখ্য মুখ থেকে একবার বের করে পুনরায় গিলে ফেললে তা যতই ছোট বা ক্ষুদ্র হোক না কেন রোজা ভেঙ্গে যাবে এবং কাজা ওয়াজিব হবে। (ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া ১/২০২;ফাতওয়ায়ে শামী ৩/৩৯৪)

৩. খাদ্য দ্রব্য নয় এমন কোন বস্তু খেয়ে নিলে বা গিলে ফেললে রোজা ভেঙ্গে যাবে এবং কাজা ওয়াজিব হবে। যেমন লোহা,মাটি, পাথর ইত্যাদি। (ফাতওয়ায়ে আলমগীরী ১/২০২;ফাতওয়ায়ে শামী ৩/৩৭৬)

৪. লোবান বা আগর বাতি জ্বালিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে এগুলোর ধোঁয়া গ্রহন করলে রোজা ভেঙ্গে যাবে এবং কাজা ওয়াজিব হবে। উল্লেখ্য আতর, সেন্ট ইত্যাদির খোশবুতে রোজা ভাঙ্গবে না। (ফাতওয়ায়ে শামী ৩/৩৬৬-৩৬৭)

৫. দাঁত দিয়ে রক্ত বের হওয়ার পর যদি তা থুথুর সাথে গিলে ফেলে, তাহলে রক্তের পরিমাণ থুথুর সমান বা বেশি হলে রোজা ভেঙ্গে যাবে এবং কাজা ওয়াজিব হবে। কম হলে ভাঙ্গবে না। (ফাতওয়ায়ে শামী ৩/৩৬৮;ফাতওয়ায়ে আলমগীরী ১/২০৩)

৬. রাত বাকি আছে মনে করে সুবহে সাদিকের পর খানা খেলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। এভাবে দিন শেষ হয়ে গেছে মনে করে সময়ের পূর্বেই ইফতারি করলে রোজা ভেঙ্গে যাবে এবং কাজা ওয়াজিব হবে। (ফাতওয়ায়ে আলমগীরী ১/১৯৪;ফাতওয়ায়ে শামী ৩/৩০)

৭. স্ত্রী বা কোন নারীকে স্পর্শ করার দ্বারা বা চুম্বন করার দ্বারা বীর্যপাত হয়ে গেলে রোজা ভেঙ্গে যাবে এবং কাজা ওয়াজিব হবে। (ফাতওয়ায়ে আলমগীরী ১/২০৪)

যে সকল কারণে রোজা ভাঙ্গলে কাজা ও কাফ্ফারা উভয়টিই ওয়াজিব হবে-

১. রমজানের রোজা রেখে দিনের বেলায় শরীয়তের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য কোন কারণ ব্যতিত ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার করলে বা সহবাস করলে কিংবা ওষুধ সেবন করলে রোজা ভেঙ্গে যাবে এবং কাজা ও কাফ্ফারা উভয়টা ওয়াজিব হবে। (ফাতওয়ায়ে আলমগীরী ১/২০২)

২. রমজানের রোজা রেখে বিড়ি, সিগারেট বা হুক্কা খেলেও রোজা ভেঙ্গে যাবে এবং কাজা কাফ্ফারা উভটা ওয়াজিব হবে। (ফাতওয়ায়ে শামী ৩/৩৬৬)

 রোজা না রেখে কাদের জন্য ফিদয়া দেওয়া বৈধ,  দুই ব্যক্তির জন্য রোজা না রেখে রোজার পরিবর্তে ফিদয়া দেওয়ার অনুমতি আছে। এক- এমন দুর্বল ব্যক্তি যার রোজা রাখার সামর্থ্য নেই এবং পরবর্তীতে কাজা করতে পারবে এমন সম্ভাবনা নেই, এমন বৃদ্ধ ব্যক্তির জন্য রোজা না রেখে রোজার পরিবর্তে ফিদয়া দেওয়ার অনুমতি আছে। (সুরা বাকারাহ,আয়াত:১৮৪)
দুই- এমন অসুস্থ ব্যক্তি যার ভবিষ্যতে আর সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা নেই, এমন দীর্ঘ মেয়দী দুরারোগ্য কোন রোগ হলে উক্ত রোগীর জন্য রোজা না রেখে ফিদয়া দেওয়ার অনুমতি আছে। (সুরা বাকারাহ,আয়াত:১৮৪)

অতএব এই দুই শ্রেণীর লোক ব্যতীত যারা সাময়িক কারণে আপাতত রোজা রাখতে পারছেন না তারা ফিদয়া দিতে পারবে না। বরং পরবর্তিতে তা কাজা করতে হবে। 

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে