ইসলাম ডেস্ক : শামের ভূমি, যা বর্তমানে সিরিয়া, জর্ডান, লেবানন ও পূর্ণ ফিলিস্তিন নিয়ে গঠিত। ইতিহাসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাক্ষী এ ভূমি। হাদিসে কয়েকটি বরকতপূর্ণ ও পবিত্র ভূমির উল্লেখ আছে। তার মধ্যে সিরিয়া বা শাম অন্যতম।
এ ভূমি নবী-রসুলদের ভূমি হিসেবে পরিচিত। ভবিষ্যতের ও কিয়ামতপূর্ব বহু ঘটনার সঙ্গে এ অঞ্চলের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। রসুলুল্লাহ (স.) শামের ব্যাপারে বিভিন্ন ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, যা এ অঞ্চলের গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে দেয়।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বর্ণনা করেন, রসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, হিজরতের পর শিগগিরই আরেকটি হিজরত সংঘটিত হবে। তখন ভূপৃষ্ঠের সর্বোৎকৃষ্ট মানুষ হবে তারা, যারা ইবরাহিম (আ.)-এর হিজরতভূমি (শাম) দেশে অবস্থান করবে। আর পৃথিবীতে সর্বনিকৃষ্ট মানুষরাই বাকি থাকবে, যাদের আল্লাহ অপছন্দ করবেন। তাদের ভূমিগুলো তাদের ত্যাগ করবে আর তারা ফিতনার আগুনে পুড়বে। (আবু দাউদ ২৪৮২)
ইবনে হাওয়ালা (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, মুসলিম বাহিনী শিগগিরই কয়েকটি দলে বিভক্ত হবে—একটি শামে, একটি ইয়েমেনে এবং অন্যটি ইরাকে। ইবনে হাওয়ালা (রা.) জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রসুল, আমি যদি সে যুগ পাই, কোন দলে যোগ দেব?
রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তুমি শামের বাহিনীতে যোগ দাও, কারণ এটি আল্লাহর পছন্দনীয় ভূমি। সেখানে তিনি তার সর্বোত্তম বান্দাদের একত্র করবেন। (আবু দাউদ ২৪৮৩)
শুরাইহ ইবনে উবাইদ (রহ.) বলেন, হজরত আলী (রা.) একবার শামবাসীদের প্রতি অভিশাপ দেয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেন, আমি রসুলুল্লাহ (স.)-কে বলতে শুনেছি, শামে আবদালরা (আল্লাহর বিশেষ ওলি) অবস্থান করেন। তারা ৪০ জন থাকেন। যখন একজন মারা যান, আল্লাহ তার স্থানে আরেকজনকে নিযুক্ত করেন। তাদের বরকতে বৃষ্টি হয় এবং শত্রুর বিরুদ্ধে জয়লাভ হয়। (মুসনাদে আহমদ ৮৯৬)
মুয়াবিয়া ইবনে কুররা (রা.) বর্ণনা করেন, রসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যখন শাম ফাসাদে জড়িয়ে পড়বে, তখন তোমাদের মধ্যেও কোনো কল্যাণ থাকবে না। আমার উম্মতের একটি দল সর্বদা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে আর কিয়ামত পর্যন্ত কেউ তাদের ক্ষতি করতে পারবে না। (তিরমিজি ২১৯২)
হজরত আবুদ্দারদা (রা.) বর্ণনা করেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, মহাযুদ্ধের সময় মুসলিমদের ছাউনি হবে গোতা শহরে, যা দামেস্কের পাশে অবস্থিত। এটি শামের একটি উৎকৃষ্ট স্থান। (আবু দাউদ ৪২৯৮)
উম্মে সালামা (রা.) বর্ণনা করেন, রসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, একজন খলিফার মৃত্যুর পর মতানৈক্য দেখা দেবে। তখন একজন ব্যক্তি (ইমাম মাহদি) মদিনা থেকে মক্কায় আসবেন আর মানুষের চাপের মুখে বাইয়াত গ্রহণ করবেন। তার বিরুদ্ধে শাম থেকে একটি দল পাঠানো হবে, কিন্তু তারা বাইদা নামক স্থানে ভূমিধসে পতিত হবে। (মুসলিম ২৮৮২)
নাউওয়াস ইবনে সামআন (রা.) বর্ণনা করেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, দাজ্জাল শাম ও ইরাকের মধ্যবর্তী এলাকা থেকে বের হয়ে পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করবে। তার অনিষ্টতার পর আল্লাহ ঈসা (আ.)-কে দামেস্কের পূর্ব দিকের শুভ্র মিনারে অবতরণ করাবেন। ঈসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন শামের বাবে লুদ নামক স্থানে। (মুসলিম ২৯৩৭)
শামের ভূমি তার অতীত ও ভবিষ্যতের ঘটনা নিয়ে বরকতময় আর রহস্যময়। রসুলুল্লাহ (স.)-এর হাদিসে বর্ণিত এসব বার্তা মুসলিম উম্মাহর জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।