সোমবার, ১৮ মার্চ, ২০১৯, ০৫:১১:০১

ভয় পেয়ে নবজাতককে ট্রাঙ্কে লুকিয়ে রেখেছিলেন ওই ছাত্রী

ভয় পেয়ে নবজাতককে ট্রাঙ্কে লুকিয়ে রেখেছিলেন ওই ছাত্রী

ঢাকা : জন্ম নেওয়ার পরপরই নবজাতককে ট্রাঙ্কে লুকিয়ে রেখেছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা হলের এক ছাত্রী। পরে কান্নার শব্দে সেই নবজাতককে উদ্ধার করা গেলেও শেষ রক্ষা হয়নি। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নবজাতকের মৃত্যু হয়।

এ বিষয় নিয়েই মুখ খুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রী। ওই ছাত্রীর দাবি, সন্তান জন্ম দেওয়ার পর ‘ভয় পেয়ে’ নবজাতককে ট্রাঙ্কে লুকিয়ে রেখেছিলেন তিনি।

এদিকে সন্তান জন্ম দেওয়া ওই ছাত্রীকে নিজের স্ত্রী হিসেবে দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রনি মোল্লা নামে এক ছাত্র। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ৪৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও শহীদ সালাম বরকত হলের আবাসিক ছাত্র।

রনি নিজেকে মৃত নবজাতকের বাবা হিসেবে দাবি করেছেন। একই সঙ্গে ওই ছাত্রীকে বিয়ে করার বিষয়টি দুই পরিবার জানতো বলেও দাবি করেন তিনি।

রনি বলেন, ‘ওর (ওই ছাত্রী) মাকে জানিয়ে ২০১৭ সালের ৮ এপ্রিল আমরা বিয়ে করি। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা পড়াশোনা করতে থাকি। বিষয়টি আমার ঘনিষ্ঠজনেরা জানতো।’

যোগাযোগ করা হলে রনির বাবা রশিদ মোল্লা বলেন, ‘দেড় বছর আগে শুনেছিলাম, আমার ছেলে আমাকে না জানিয়ে বিয়ে করেছে। প্রথমে মন খারাপ হলেও পরে মেনে নিই। বউকে বাড়ি নিয়ে আসতেও বলি। ছেলে কেন যেন কখনো মেয়েটিকে বাড়িতে নিয়ে আসেনি।’

এ ব্যাপারে ওই ছাত্রীর মা বলেন, ‘বিয়ের আগে তারা আমাকে জানিয়েছিল। পরে আমরা মেনে নিই। আমার মেয়ে বারবার বলছে, সে বাচ্চাটিকে মেরে ফেলতে চায়নি। সে ভয় পেয়ে গিয়েছিল। কী করতে হবে, বুঝতে পারেনি। তাই এ রকম করেছে।’

রনি মোল্লার কয়েকজন সহপাঠী বলেন, সন্তান জন্ম দেওয়া ছাত্রী ও রনি মোল্লার বাড়ি পাবনায়। তারা দুজন একই কলেজ (পাবনার শহীদ বুলবুল কলেজ) থেকে পড়াশোনা করেছেন। কলেজে পড়ার সময় থেকেই দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার কিছুদিন পর তাকে বিয়ে করেন রনি।

গত শনিবার দুপুর ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা হলের একটি কক্ষের তালাবদ্ধ ট্রাঙ্ক থেকে একটি নবজাতককে উদ্ধার করা হয়। পরে নবজাতককে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক নবজাতককে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত পৌনে ১০টার দিকে নবজাতকটির মৃত্যু হয়।

সন্তান জন্ম দেওয়া ওই ছাত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিজেকে রনি মোল্লার স্ত্রী হিসেবে স্বীকার করেন। ওই ছাত্রী বলেন, ‘আমরা বিবাহিত। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে সেভাবে কাউকে জানানো হয়নি। অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর ডাক্তার দেখিয়েছি কয়েকবার। ডাক্তার বলেছিলেন, ২০ মার্চ বাচ্চা ডেলিভারি হওয়ার সম্ভাব্য তারিখ।’

ওই ছাত্রী আরও বলেন, ‘শনিবার সকাল থেকে আমার ব্যথা শুরু হয়। রক্তপাত হতে থাকে। এতে ভয় পেয়ে যাই আমি। আমার দ্বিতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা চলছে। এ অবস্থায় কী করব, ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না। রনি মোল্লার ফোনও বন্ধ পাই। পরে সন্তান প্রসব হয়ে যায়। নবজাতকের নাড়ি ভেতর থেকে ছিঁড়ে যায়। আমি ভয় পেয়ে তাকে ট্রাঙ্কে লুকিয়ে রাখি।’

এ ব্যাপারে রনি মোল্লা বলেন, ‘ঘটনার দিন (শনিবার) সকালে আমি টিউশনিতে যাই। সে (ওই ছাত্রী) হয়তো আমাকে ফোন করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু ফোন বন্ধ থাকায় যোগাযোগ হয়নি। সন্ধ্যায় খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যাই। সেখানে গিয়ে পরিচয় দিলেও কেউ বিশ্বাস করেনি।’

সারা দিন মুঠোফোন বন্ধ থাকার কারণ জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্র বলেন, ‘আমার ফোনটাতে সমস্যা আছে। চার্জ থাকে না। তাই বেশিরভাগ সময় ফোনটা বন্ধ থাকে।’

গতকাল রবিবার দুপুরে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নবজাতকের মরদেহ ওই ছাত্রীর বাবার কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ সময় সংশ্লিষ্ট হলের প্রাধ্যক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা উপস্থিতি ছিলেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, বাচ্চা জন্ম দেওয়া ওই ছাত্রী সুস্থ আছেন।

বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মুজিবর রহমান বলেন, মৃত্যুর সনদে নবজাতকটির ‘স্বাভাবিক মৃত্যু’ হয়েছে বলে উল্লেখ করা করা হয়েছে। পরে ওই ছাত্রীর বাবা স্বাক্ষর করে নবজাতকের মরদেহ গ্রহণ করেন।

এদিকে ঘটনা তদন্তে চার সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। কমিটির প্রধান রাবেয়া খাতুন বলেন, ‘আমরা তদন্তের কাজ শুরু করে দিয়েছি। আশা করছি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্তের কাজ শেষ করে প্রতিবেদন জমা দিতে পারব।’

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে