সোমবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৯, ০১:৩৩:৪৮

ভোলার সহিংস সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ সদর দফতরের ব্যাখ্যা

ভোলার সহিংস সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ সদর দফতরের ব্যাখ্যা

নিউজ ডেস্ক : ফেসবুকের একটি স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে ভোলায় পুলিশ ও জনতার মধ্যে সহিং'স সং'ঘ'র্ষে সাধারণ মানুষ হ'তাহ'তের ঘটনায় পুলিশ সদর দফতর থেকে নি'হ'তদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে ঘটনার একটি ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।

রবিবার (২০ অক্টোবর) রাতে সদর দফতর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ সমবেদনা জানানো হয়। একইসঙ্গে গু'জ'ব ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বি'ন'ষ্ট না করতে এবং কোনও অবস্থাতেই ধর্মীয় উপাসনালয়ে আ'ক্র'মণ না করতে সাধারণ জনগণকে অনুরোধ জানিয়েছে পুলিশ।

পাশাপাশি, গু'জ'বে কান না দিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় ও সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পুলিশকে সহায়তা করার জন্যেও অনুরোধ জানানো হয়েছে। এছাড়াও ঘটনাটি তদন্তে গঠন করা হয়েছে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘ভোলার বোরহান উদ্দিন উপজেলা ঈদগাহ মাঠে পুলিশের সঙ্গে সং'ঘ'র্ষে পুলিশসহ সাধারণ মানুষের হ'তাহ'তের ঘটনায় পুলিশ সমবেদনা জ্ঞাপন করছে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ঘটনার বিষয়ে যে কোনও প্রকার বি'ভ্রা'ন্তি এড়াতে পুলিশ সদর দফতর প্রকৃত ঘটনাটি জনসমক্ষে তুলে ধরার প্রয়োজন মনে করছে।’

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘গত ১৮ অক্টোবর নিজ ফেসবুক আইডি হ্যা'ক হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বিপ্লব চন্দ্র বৈদ্য (২৫) ওরফে শুভ নামে এক যুবক রাত ৮টা ৫ মিনিটে ভোলা জেলার বোরহান উদ্দিন থানায় জিডি করেন। জিডি নং-৪৪০। জিডি করার সময় থানায় অবস্থানের সময়েই বিপ্লব চন্দ্র বৈদ্য’র নম্বরে একটি কল আসে এবং তার কাছে চাঁদা দাবি করা হয়। 

বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে তিনি ওসিকে জানান। ওসি বিষয়টি ভোলা জেলার পুলিশ সুপারকে জানান। প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে সেদিন রাতের মধ্যেই বিপ্লব চন্দ্র বৈদ্য’র ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাককারী ও তার মোবাইলে কলকারী শরীফ এবং ইমন নামে দুই মুসলিম যুবককে পটুয়াখালী এবং বোরহানউদ্দিন থেকে আ'ট'ক করে পুলিশ। আ'ট'কের পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদেরকে বোরহান উদ্দিন থানায় নেওয়া হয়।’

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘ইতোমধ্যে শুভর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে দেওয়া কথিত ‘কমেন্টের’ জেরে এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা উ'ত্তে'জিত হতে থাকেন। ফেসবুকে ধর্মীয় মন্তব্যের অভিযোগে মন্তব্যকারীর ফাঁসি দাবি করেন স্থানীয় আলেম সমাজ। 

পরদিন রবিবার (২০ অক্টোবর) সকাল ১১ টায় বোরহানউদ্দিন উপজেলা সদরের ঈদগাহ মাঠে তারা প্র'তিবা'দ সভার ঘোষণা দিলে জেলা প্রশাসক, ইউএনও, থানার অফিসার ইনচার্জ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ আলেম সমাজের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে শনিবার (১৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বোরহান উদ্দিন থানায় দীর্ঘ সময় বিষয়টি আলোচনা হয়। 

আলেম সমাজের অভিযোগের ভিত্তিতে বিপ্লব চন্দ্র বৈদ্যকে আ'ট'ক দেখানো হয়। এ বিষয়ে উপযুক্ত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের নিশ্চয়তা পেয়ে প্রতিনিধিত্বকারী আলেম সমাজ তাদের পূর্বঘোষিত প্রতিবাদ কর্মসূচি বাতিলের ঘোষণা দেন।’’

পুলিশ সদর দফতরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘সমাবেশ বাতিলের ঘোষনা সত্ত্বেও পুলিশ সার্বক্ষণিক স'ত'র্ক থাকে। পরদিন সকাল থেকেই কিছু লোক ঈদগাহ ময়দানে সমবেত হতে থাকে। ময়দানের বিভিন্ন পয়েন্টে বসানোর জন্য ১৭টি মাইক নিয়ে আসা হয়। যে কোনও অ'প্রী'তিকর পরিস্থিতি এড়াতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সমবেত লোকজনকে সরিয়ে নিতে বললে উপস্থিত আলেমরা নিশ্চিত করেন, লোকজন কোনও রকম বিশৃঙ্খলা করবে না। 

এরইমধ্যে পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনায় এবং যেকোনও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে স্থানীয় পুলিশকে সহায়তা দিতে সকালেই বরিশাল থেকে রেঞ্জ পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি ভোলায় যান। অতিরিক্ত ডিআইজি এবং ইউএনওকে নিয়ে পুলিশ সুপার ঘটনাস্থলে গিয়ে উপস্থিত জনগণের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন। ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা করে প্রয়োজনীয় সকল আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করার বিষয়ে তাদেরকে আশ্বস্ত করেন। তাদের কথায় আশ্বস্ত হয়ে সমবেত লোকজন ঈদগাহ্ ময়দান ত্যাগ করেন।’

‘উপস্থিত জনগণের উদ্দেশে বক্তব্য শেষে পুলিশ সুপার ও অতিরিক্ত ডিআইজিসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা মাদ্রাসার একটি কক্ষে অবস্থান নেন। এরইমধ্যে অন্য একটি গ্রুপ ঈদগাহ ময়দানে প্রবেশ করে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষকে উ'ত্তে'জিত করতে থাকেন। এরপর একদল লোক বিনা উ'স্কা'নিতে মাদ্রাসার অফিস কক্ষে অবস্থানরত কর্মকর্তাদের ওপর আ'ক্র'মণ করে। আ'ক্র'ম'ণকারীদের একদল আ'গ্নে'য়া'স্ত্রে সজ্জিত হয়ে পুলিশ ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের ওপর আ'ক্র'ম'ণ চালায়। 

আ'ক্র'ম'ণকারীদের গু'লিতে ও হা'ম'লায় বরিশাল রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজিসহ পুলিশের তিনজন সদস্য মা'রা'ত্ম'ক আহ'ত হন। এমন পরিস্থিতিতে ইউএনও ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে আ'ত্ম'র'ক্ষা'র্থে ও সরকারি জানমাল রক্ষার্থে ও উ'ত্তে'জিত লোকজনকে নিবৃত্ত করার জন্য প্রথমে টিয়ার শেল ও পরে শটগান চালায় পুলিশ। 

প'রিস্থি'তির ভ'য়া'ব'হতা বেড়ে গেলে এক পর্যায়ে ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে পুলিশ গু'লি চালাতে বাধ্য হয়। আ'ক্র'ম'ণকারীদের গু'লিতে মা'রা'ত্ম'ক আ'হ'ত পুলিশ সদস্যকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার সিএমএইচে স্থানাস্তর করা হয়েছে। এই ঘটনায় নি'হ'ত ৪ (চার) জনের মধ্যে অন্তত দুই জনের মাথা ভোতা অ'স্ত্র দ্বারা থেঁতলানো বলে নিশ্চিত করেছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।’

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে ডিআইজি বরিশাল রেঞ্জকে প্রধান করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিতে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, এসবি, পিবিআই এবং জেলা পুলিশ হতে একজন করে মোট চারজন কর্মকর্তা সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। কমিটিকে সাত কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।’

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘সার্বিক ঘটনা পর্যালোচনায় এটি স্পষ্ট যে, পুলিশ ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে শুরু থেকে তৎপর থাকা সত্ত্বেও এবং আলেম সমাজ পুলিশের গৃহীত ব্যবস্থার প্রতি আস্থা রেখে কর্মসূচি স্থগিত করলেও কোনও একটি স্বা'র্থা'ন্বে'ষী মহল ধর্মকে পুঁজি করে একটি সামাজিক অ'স্থি'রতা তৈরির অ'পপ্র'য়াস চালিয়েছে। পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ঘটনাস্থলসহ সারাদেশে পুলিশকে স'ত'র্কা'বস্থায় রাখা হয়েছে।’

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে