বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৯, ০৭:০১:৫৮

ধর্মীয় দৃষ্টিতে বিয়ে করে সঠিক কাজটি করলেন গুলতেকিন

ধর্মীয় দৃষ্টিতে বিয়ে করে সঠিক কাজটি করলেন গুলতেকিন

নিউজ ডেস্ক: দ্বিতীয় বিয়ে করার পর গুলতেকিন খান ও যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আফতাব আহমদকে নিয়ে আমাদের সমাজে বিত'র্ক হবে তা স্বাভাবিক। কিন্তু বেশিরভাগই তাদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। ইসলাম, খ্রিস্টান, ইহুদি এই তিন ধর্মেই বিধবাদের সম্মান দেওয়া হয়েছে। তাদের জীবন নিরাপদে, সুন্দরভাবে পার করার জন্য আবারো বিয়ের অনুমতি দিয়েছে। বিধবাদের ঠিকমতো দেখাশুনা করার দায়িত্ব সমাজের উপর দেওয়া হয়েছে। একইসাথে বিধবাদের য নেওয়ার বিনিময়ে সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে বড় পুরষ্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। অথচ আমরা দ্বিতীয় বিয়ে নিয়ে অহে'তুক সমালো'চনা ও বিষয়টি এখনো ঘৃ'ণার চোখে দেখি যার কোনো সুযোগ নেই ধর্মতেও।

এমনকি বেশিরভাগ পুরুষ দ্বিতীয় বিয়ে করার সময় বিধবাদের কথা চিন্তাও করে না। রাসুল (সা:)এর মাত্র একজন স্ত্রী ছিলেন কুমারী, আর বিভিন্ন সময়ে ৮ জন স্ত্রী হয়েছিলেন বয়স্ক বিধবা। আল্লাহ বিধবাদের প্রতি খুবই সদয় আচরণ করার কথা বলেছেন। তিনি কুরআনে বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা স্ত্রী রেখে মা'রা যায়, তাদের স্ত্রীরা চার মাস দশ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। যখন সেই সময় (ইদ্দত) পার হবে, তখন যদি তারা গ্রহণযোগ্য-সুন্দরভাবে নিজেদের ব্যাপারে কিছু করতে চায়, তাহলে তোমাদের কোনো গুনাহ হবে না। তোমরা যা কিছুই করো, আল্লাহ তার সব জানেন। [আল-বাক্বারাহ ২৩৪]

তারপর ইদ্দত পূরণ করার পর বিধবা ইচ্ছে করলে আবার বিয়ে করতে পারেন।ধর্মে এও বলা হয়েছে এতে বাঁ'ধা দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।

গুলতেকিন ও আফতাবের বিয়ে সম্পর্কে তাদেরই দেয়া স্ট্যাটাসের দুটি লাইন ধর্মীয় সৌন্দর্যের প্রতীক হয়ে ধ'রা দিয়েছে। ‘তিনি (গুলতেকিন) আমাকে তার সামনে বসালেন এবং আমার হাতে হাত রেখে বললেন’, ‘প্রত্যেকেরই মৃ'ত্যুর স্বাদ পেতে হবে। কিন্তু আমি তোমাকে ছেড়ে যেতে চাই না। আমি নিঃশ্বা'স নিতে চাই। তবে নিশ্চিত নই ভবিষ্যৎ কোন নিয়তিতে গাঁথা।’ আফতাব আহমেদ জবাবে বললেন, আমি চেষ্টা করব তোমাকে বাঁ'চাতে কিন্তু তোমাকে বিয়ে করা ছাড়া এটা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।’ এ সময় একটু বিরতি নিয়ে গুলতেকিন বললেন, তুমি কি আমাকে বিয়ে করবে? এবং আমি অনুমান করতে পারি, আমরা দুজনেই কোনো কারণ ছাড়া এক সঙ্গে হতে পারব না।

বরং বিধবাদের জীবন নিরাপদে, সুন্দরভাবে পার করার জন্য আবারো বিয়ের অনুমতি দিয়েছে। বিধবাদের ঠিকমতো দেখাশুনা করার দায়িত্ব সমাজের উপর দেওয়া হয়েছে। একইসাথে বিধবাদের যতœ নেওয়ার বিনিময়ে সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে বড় পুরষ্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

চার মাস দশ দিন কেন?

চার চান্দ্র মাস এবং দশ দিন হচ্ছে ১২৬ দিন, অর্থাৎ ঠিক ১৮ সপ্তাহ। ১৮ সপ্তাহে একটি বাচ্চা পুরোপুরি মানব আকৃ'তি নেয়। এসময় তার চোখ, কান, নাক, মাথা, হাত, পা ইত্যাদির গঠন সম্পূর্ণ হয়, দাঁত, নখ তৈরি হয়। লিভার, পরিপাকত'ন্ত্র সম্পূর্ণ হয়ে হজমি র'স নিঃ'সরণ হয়।এই সময় ছেলে বা মেয়ে অনুসারে যৌ'না'ঙ্গ, জ'রা'য়ু সম্পূর্ণ তৈরি হয় এবং বাচ্চা কী হবে তা পরিষ্কারভাবে নির্ণয় করা যায়। গ'র্ভপা'ত হওয়ার সম্ভা'বনা এই সময়ের পর থেকে একেবারেই কমে মাত্র ৩% হয়ে যায়। এছাড়া এই দশ দিনেই বাচ্চার মধ্যে রুহ ফুঁকে দেওয়া হয়।

একারণে চার মাস দশ দিন অপেক্ষা করলে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, বিধবা গ'র্ভব'তী কিনা এবং বাচ্চা জী'বিত কিনা। এর আগে বিয়ে করে ফেললে যদি বাচ্চা জন্ম হয়, তাহলে বাচ্চার বাবা কে, তা নিয়ে সম'স্যা সৃষ্টি হতে পারে। যদি বিধবা সত্যিই গর্ভ'ব'তী হন, তাহলে তাকে বাচ্চা জন্ম দেওয়া পর্যন্ত ইদ্দত পালন করতে হবে। তাই চার মাস দশ দিন অপেক্ষার পর তিনি প্রায় নিশ্চিত হতে পারেন যে, তাকে গ'র্ভকা'লীন পুরো সময়টাই অপেক্ষা করতে হবে, কারণ এর পরে বাচ্চা হা'রা'নোর সম্ভাবনা কম, যদি না আল্লাহ অন্য কিছু ইচ্ছা করেন।

অনেক পরিবারে কেউ বিধবা হলে, সে যদি অত্যন্ত সুন্দরী হয়, বা অনেক সম্পদশালী হয়, এবং তার উপর বাচ্চা না থাকে, তাহলে তাকে বিয়ে করার জন্য পাত্রের লাইন লেগে যায়। আর আগেকার মুসলিম আরব সমাজে বিধবাদের বিয়ে করাটা একটা স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল। তখন বিধবাদেরকে কোনো ধরনের ‘ভ'য়ঙ্ক'র প্রাণী’ মনে করতো না। তাই এই সময়টাতে কেউ যেন বিয়ের আকা'ঙ্খায় মজনু হয়ে সী'মাল'ঙ্ঘন করে না ফেলে, সে জন্য এই আয়াতে সাবধান করে দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে কোনো ধরনের গোপন বিয়ের কথা দেওয়া পুরোপুরি নি'ষিদ্ধ। 

কারো বিয়ে করার যতই ইচ্ছা থাকুক, আগে ইদ্দ'ত পার হবে, তারপর বিয়ের কথা দেওয়া যাবে। এর আগে পর্যন্ত সরাসরি না বলে বিয়ের ব্যাপারে ইঙ্গিত দেওয়া যেতে পারে, যেন বিধবা বুঝতে পারে তার জন্য পাত্র তৈরি আছে। পাত্রও যেন বুঝতে পারে বিধবা বিয়ে করার প্রস্তাব একেবারেই বাতিল করে দেবে না। সুতরাং, চার মাস দশ দিন অপেক্ষা করার পর বিফ'লে যাওয়া সম্ভাবনা কম। কিন্তু কোনো ধরনের পাকা কথা দেওয়ার আগে ইদ্দত পার করতে হবে। আল্লাহ এই ব্যাপারে পরিষ্কারভাবে সা'বধা'ন করে দিয়েছেন।

কিন্তু এর পরেই আল্লাহ আবার নমনীয় হয়ে বলেছেন যে, তিনি অনেক ক্ষ'মা করেন, অনেক সহনশীল। তিনি জানেন বিয়ে করার চিন্তা মাথায় আসলে মানুষের কী অবস্থা হয়। শুধু সী'মা পার না করলেই চলবে। আল্লাহ হচ্ছেন হালিম যার অর্থ রাগ করার পরেও যিনি অনেক ভালোবাসেন, অনেক সহ'নশীল। যেমন, মা সন্তানের উপর বার বার রাগ করলেও, তার সন্তানের প্রতি ভালোবাসা চলে যায় না। আল্লাহ এই ভালোবাসা এবং সহানুভূতির সর্বোচ্চ পর্যায় ধারণ করেন। তার বান্দারা বার বার পাপ করে, তিনি বান্দাদের উপর রাগ করেন, কিন্তু তারপরেও তিনি বান্দাদের অনেক ভালোবাসেন।

এছাড়া বিয়ে করে ফেলার পর যখন স্বামী বা স্ত্রীর মাথায় হাত পড়ে ‘হায় হায়’ অবস্থা হয়, তখনকার পরিস্থিতি সম্পর্কেও দিকনির্দেশনা দেয়া আছে।

কুরআন বলছে, ‘স্ত্রীদের স্প'র্শ করার আগে অথবা মোহর ঠিক করার আগে যদি তালাক দিয়ে দাও, তাহলে তোমাদের কোনো পাপ হবে না। কিন্তু তাদেরকে খরচপত্র দাও, স্বচ্ছলরা তাদের সামর্থ অনুসারে এবং গরীবরা তাদের সামর্থ অনুসারে। যথাযথ খরচপত্র দাও। যারা ইহসান করে, তাদের জন্য এটা কর্তব্য। [আল-বাক্বারাহ ২৩৬]

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে