সোমবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৯, ০১:২২:০৯

আমি তো মেহের আফরোজ শাওনকে দেখে অভিভূত মুগ্ধ হই!

আমি তো মেহের আফরোজ শাওনকে দেখে অভিভূত মুগ্ধ হই!

পীর হাবিবুর রহমান : অ'কা'ল প্র'য়া'ত জনপ্রিয় লেখক হ‌ুমায়ূন আহমেদ প্রসঙ্গ এলেই তার স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওনের প্রতি অনেকের চ'র'ম বি'দ্বে'ষপূর্ণ লেখা, অ'স'ভ্য মন্তব্য দেখি। একদল অ'ন্ধকে তাকে ধুয়ে মুছে স'মা'লো'চনায় ক্ষ'ত-বি'ক্ষ'ত করতে দেখি।

আত্মমর্যাদাশীল নারী হ‌ুমায়ূন আহমেদের প্রথম স্ত্রী গুলতেকিন বিচ্ছেদের ১৬ বছর পর ভালোবেসে বিয়ে করেছেন, এটাকে আমরা সবাই অভিনন্দিত করেছি। আমি অবাক হয়ে দেখেছি এখানেও অনেকে মেহের আফরোজ শাওনকে অপ্রাসঙ্গিকভাবে টেনে এনে স'মা'লো'চনা করেছেন।

কারণ কি? আমি বুঝি না। হ‌ুমায়ূনের বি'চ্ছে'দে বিয়েতে মৃ'ত্যুতে সকল অপ'রা'ধের অ'প'রা'ধী যেনো শাওন। তার মৃ'ত্যুদ'ণ্ড চাওয়ার বাকি রেখেছেন অনেকে। একদল নারীর কাছে শাওন যেনো সতীন, আর একদল পুরুষের যেনো পরাজয়ের গ্লা'নি, আ'র্তনা'দ!

আলোচিত লেখিকা তসলিমা নাসরীনও গুলতেকিনের বিয়ের সংবাদে মানুষের অভিনন্দনকে যেনো সইতে পারেননি! প্রশ্ন তুলেছেন তার ও বয়স গুলতেকিনের সমান প্রায়, কিন্তু তিনি বিয়ে করলে নাকি সবাই চিৎকার করে উঠতো। তসলিমা যতটা আলোচিত পরিচিত ততটা বড় গুণী লেখক কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। কিন্তু তার বিয়ে করার প্রেম করার অধিকার আছে।

তার স'মা'লো'চক বা বি'রো'ধীরা সরব হলেও তার বিশাল ভক্ত আছেন। তারা ভ'য়ে সরব হন না। তিনি বিয়ে করতেই পারেন, কে কি বলবে বুঝি না! তিনি তো অনেক বিয়ে কনেছিলেন। কেউ তো কিছু বলেনি! যা বলার তিনি নিজেই আত্মজীবনী 'ক' লিখে বলেছেন! তিনি নিশ্চয় বিয়ে করতে পারবেন, সব ইস্যুতে নিজেকে আলোচনায় না আনলেই হবে।

যাক মেহের আফরোজ শাওনকে নিয়ে লিখছিলাম। তার তো কোন অ'পরা'ধ আমি দেখি না! আর তার বয়সে আমার বা আপনার মেয়ে এমন ঘটনা ঘটালে মনের অবস্থা কেমন হতো ভেবেছেন? শাওনের মা তহুরা আলী ৯৬ সালে এমপি ছিলেন। বাবা মোহাম্মদ আলী প্রকৌশলী। ছাত্রলীগ দিয়ে জীবন শুরু, দুঃসময়ের বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অবিচল। ধণাঢ্য ব্যবসায়ী। আমার লেখার ভক্ত হিসেবে কয়েকবার ফোনে কথা বলেছেন। একবার প্রতিদিন অফিসে এসেছেন।

তাদের আদরের মেয়ে শাওন। অসাধারণ প্রতিভাবান। স্থপতি। অভিনয় গানে বিরল প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। নিজে বা পারিবারিক ভাবে বিয়ে করলে প্রতিভাবান রাজপুত্র পেতেন। হ‌ুমায়ূন শাওনের যখন বালিকা বয়স, তখন থেকে তার পিছনে লেগেছেন। চমকে দেয়া, আকর্ষণ গড়ে তোলার ক্যারিশমা তার ছিল। 

শাওনের কোমল কিশোরী মনকে তিনি তার জীবনের আলো হারিয়ে গেছে বলেই হোক, গুহার চিত্র আঁকার বাতি হবার আবেদন জানিয়েই হোক, সেন্ট মার্টিনের ঘরে তার শেষ জীবনের সাথী হবার আ'কু'তি জানিয়েই হোক, ধর্মমন্ত্রী থেকে নানা পরিচয়ে দিনের পর দিন ফোন করেই হোক জয় করেছেন।

আর হ‌ুমায়ূনের দাম্পত্য জীবনের ঝ'ড় কি আগে ওঠেনি? আ'গু'নের তাপে পুড়েনি? কত অভিনেত্রীও তো পাগল হয়েছিলেন তাকে বিয়ে করতে! বন্ধুর মেয়েও। অচেনা বালিকা ভক্ত তার বাড়িতে এসে ওঠেনি? বা ময়মনসিংহের সেই তরুণী? কে না! শাওনকে দেখেছি ধানমণ্ডির বাড়ি থেকে সার্কিট হাউজ রোডের ডিএফপির ফ্লোরে নাটকের শ্যুটিংকালে শীলাদের সঙ্গে আড্ডায়।

শাওনকে বিয়ে করার আগে হ‌ুমায়ূন আলাদা চার বছর নিঃস'ঙ্গ জীবন কাটাননি? সন্তান ভাই-বোনকে খোঁজ নিয়েছে? হা'র্ট অ্যা'টা'ক হলেও শাওন আর অন্য-প্রকাশের মাজহারই ছুটে গেছে। মৃ'ত্যুতে পাশে থেকেছেন যেমন।

মানুষের জীবনে অনেক কিছু ঘটে, জনপ্রিয়দের জীবনের ঘটনা বাইরে আসে, খবর হয়। হ‌ুমায়ূন শাওনেরও হয়েছে। শাওনকেই কেনো অ'পরা'ধী করে আ'ক্র'ম'ণ করতে হবে। হ‌ুমায়ূন বেদনা থাকলেও বৈধভাবে গুলতেকিনের সাথে মর্যাদার দাম্পত্য জীবনের ইতি ঘটিয়েছেন। 

কেউ কারো সম্পর্কে অসম্মান দেখাননি। অনেকে তো বাড়িতে দো'জ'খ বানিয়ে, ব'হুগা'মী জীবন কাটিয়ে, একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে চাকর-বাকর থেকে পথে পথে নোংরা অভিযোগ করে একখাটে ঘুমাতে যান। সেটাও তাদের ব্যক্তিগত জীবন। কারো রান্নাঘর বা বেডরুমে উঁকি দেয়া সভ্যতা ভদ্রতা নয়।

শাওন তো কাউকে তিন বছর প্রেমে ঝুলিয়ে হঠাৎ ছেড়ে আরেকজনকে লোভে বিয়ে করেননি। কাউকে শয্যায় রেখে, উঠে গিয়ে আরেকজনের গলায় ঝুলে পড়েননি! অনেকে অনেক অ'পরা'ধ করেও বি'ত'র্কের ঊর্ধ্বে থাকেন।

মেহের আফরোজ শাওন নিজের পরিচয়ে পরিচিত হয়ে সততার সঙ্গে তার প্রেমের পুরুষকে বিয়ে করেছেন। হ‌ুমায়ূনসহ সবাই সুখী হবার অধিকার রাখেন, শাওন না কেনো? এখানে একটি সরল সৎ মেয়ে ৫৬ বছর বয়সের মানুষকে বিয়ে করে অ'কা'লেই হা'রি'য়েছে। তবু তাকে নিয়ে স'মা'লো'চনা আ'ক্র'মণে কারো বুক কাঁ'পে না?

আমি শাওনের ধৈর্য্য কারো নোং'রা আ'ক্র'ম'ণের জবাব না দেয়া এবং দুটি ছোট শিশুকে নিয়ে নিজের মতোন আনন্দে থাকার চিত্রপট দেখে অবাকই নই, অভিভূত মুগ্ধ হই। শাওন প্রেম বিয়ে করার অধিকার রাখলেও করেননি। এটা তার একান্ত নিজের ইচ্ছে। তার দুঃ'খ য'ন্ত্র'না কাউকে দেখতে দেন না। এটা তার ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট। তিনি বিয়ে করবেন নাকি হ‌ুমায়ূনের ছায়াসঙ্গী হয়েই বাকি জীবন রবীন্দ্রনাথের গান গেয়ে কাটিয়ে দেবেন, সেটা তার বিষয়।

শাওন বলেছেন, তিনি বান্ধবীর বাবাকে বিয়ে করেননি। বন্ধুর কন্যার সাথে বন্ধুত্ব হয়েছিল। শীলাও তো তার মায়ের বয়সী একজন শিক্ষককে ঘর ভেঙ্গে বিয়ে করেছেন! সেই শিক্ষকও তার স্ত্রীকে ডি'ভো'র্স দিয়েছেন।

তো কি হয়েছে? কারও সাথে কারও না হলেও, প্রেমহীন জীবনে জোর করে থাকতে হবে? ভালোবাসলে, একজনকে ছাড়া অন্যজন অচল মনে করলে এক হতে পারবে না? এটা হয় না। এটা প্রতিটি মানুষের সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়। সবার স্বাধীনভাবে সুখী হবার, আইন মেনে সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার রাখেন।

শাওন শীলা সবাই তা করেছেন। শাওনকে যারা আ'ক্র'ম'ণ করেন তাদের বলবো, সে তো হিসেব কষে এটা করেনি, হিসেব কষলে এভাবে আ'ত্মব'লি'দান প্রেমের জন্য কেউ দিতে পারে? শাওন দিয়েছে। তার দিকে যখন তার বাবা মা তাকান, তখন তাদের বুকটা কেমন মো'চ'ড় দিয়ে ওঠে? সবাই সুখী হোক, অনন্দময় জীবনযাপনে থাক সততার সাথে।

আমরা পাহাড়, সাগর, নদী, উড়ে যাওয়া পাখি, ফুলের বাগান, সবুজ বৃক্ষরাজি, বৃষ্টি জোছনা, গোধূলি সন্ধ্যা ও সুখী যুগল দেখে মুগ্ধ হই। আসুন মানুষকে সুখী হতে দেখে আনন্দিত হই।

লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে