বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৯, ১১:৪৪:৫০

সৌদিতে যেতে আগ্রহী নারীরা বললেন 'আমাদের স্বামীরা কি আমাদের অ'ত্যা'চার করে না?'

সৌদিতে যেতে আগ্রহী নারীরা বললেন 'আমাদের স্বামীরা কি আমাদের অ'ত্যা'চার করে না?'

নিউজ ডেস্ক : অ'ত্যা'চা'র নি'র্যা'তনের মুখে সৌদি আরব থেকে হাজারো নারীর ফিরে আসার কাহিনী এমনকি মৃ'ত্যুর খবর জানার পরেও বাংলাদেশের বহু নারীর গন্তব্য এখনো সৌদি শ্রমবাজার।

যারা নি'র্যা'তিত হয়ে ফিরে এসেছেন তারা সবাই চান, সৌদি আরবে নারী শ্রমিক পাঠানো ব'ন্ধ করা হোক। কিন্তু বিদেশ যেতে ইচ্ছুক নারীরা ব'ন্ধ করাটাকে সমাধান মনে করছেন না। তারা চাইছেন নি'রা'প'দ অভিবাসন।

ঢাকার একটি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, বিদেশ যাবার আগে এক মাসের প্রশিক্ষণে আছেন এরকম অনেকে। আরবি ভাষার প্রাথমিক জ্ঞান, গৃহস্থালির কাজে ব্যবহৃত আধুনিক সরঞ্জামের ব্যবহার শিখছেন অনেকে। 

ক্লাসরুমে জিজ্ঞেস করলে দেখা যায় ৭০ থেকে ৮০ ভাগ নারী যেতে চাইছেন সৌদি আরবে। এর মধ্যে কেউ কেউ আছেন - যারা আগে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন এখন আবার যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

সাবিনা নামের একজন সৌদি আরবে চার বছর কাজ করে এসেছেন। বেতন এবং কাজের পরিবেশ ভাল পেয়েছিলেন বলেই আবার যাচ্ছেন। সৌদি আরবই তার পছন্দের দেশ।

অন্যদিকে কোনও প্রশিক্ষণ ছাড়াই দালালের মাধ্যমে সৌদি গিয়ে নি'র্যা'তনের শি'কা'র হয়ে ফিরেছেন ময়না। তিনমাসের মাথায় আবার তিনি বিদেশ যেতে চাইছেন। তবে সৌদি আরবে যাবেন না কখনোই। তার দাবি নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে সৌদিতে যেন কোনও নারীকে পাঠানো না হয়।

বিদেশে যেতে ইচ্ছুক এসব নারীর সঙ্গে কথা বলে বোঝা যায় বেশিরভাগই স্বল্প-শিক্ষিত ও হতদ'রিদ্র পরিবার থেকে আসা। অ'ভাব-অ'নট'নের সংসারে উন্নত ভবিষ্যতে স্বপ্ন নিয়ে তারা পরিবার-পরিজন ছে'ড়ে বিদেশ যেতে চান।

তাসলিমা ইসলাম নামের একজন বলছিলেন, "সমস্ত দেশ খোলা থাকুক, আমরা বাঁ'চতে চাই, খাবার চাই, পরনের কাপড় চাই, নিজের একটা অধি'কার চাই।" তাসলিমারও সৌদি আরবে কাজের অভিজ্ঞতা আছে। তিনি মনে করেন, সৌদিতে বাংলাদেশি দূতাবাসকে আরো তৎপর হতে হবে।

সরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যারা আসেন তাদের একটা বড় অংশেরই সৌদি আরবে যাবার আগ্রহ। এর মধ্যে অনেকেই জানান তাদের আত্মীয় স্বজন, পাড়া প্রতিবেশীরা তাদের নিয়ে যাচ্ছেন, ভরসা দিচ্ছেন।

সৌদি আরবে যেতে নারীদের কোনও টাকা লাগে না, পুরো খরচ বহন করে নিয়োগকারী। নি'র্যা'তিত হয়ে ফেরত আসা সবাই নারী পাঠানোতে আপ'ত্তি করলেও যারা বিদেশ যেতে ইচ্ছুক তাদের একটা বড় অংশ আর রিক্রু'টিং এজেন্সিগুলোও চান, সৌদি আরবে নারী পাঠানোর প্রক্রিয়া চালু থাকুক।

সৌদি যেতে ইচ্ছুক শিমু আক্তারকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, এত অ'ত্যা'চার নি'র্যা'তনের খবর আসছে, তারপরেও কেন সৌদি যেতে চান তিনি?

এর উত্তরে শিমু বলেন, "হ্যাঁ, আমরা শুনতেছি কিন্তু আমাদের স্বামীরা কি আমাদের অ'ত্যা'চার করে না? কেউ কি নিজের দেশ ছা'ইড়া, ছেলেমেয়ে রাইখা বিনা কারণে বিদেশ যায়? আমরা ব'ন্ধ হোক এটাও চাই না, আবার ওইখানে গিয়ে নি'র্যা'তনের শি'কা'র হই - এটাও চাই না।"

বিদেশগামী মেয়েদের নিয়ে কাজ করছেন খালেদা সরকার। তিনি বলছিলেন, বাংলাদেশের স্বল্প শিক্ষিত হত-দরিদ্র পরিবার থেকেই মেয়েরা মূলত সৌদি যাচ্ছেন। পরিবারে সম্পর্কের জটি'লতা, আর্থিক সং'কট এবং কর্মসংস্থানের অভাবেই নারীরা বিদেশে যাবার ঝুঁ'কি নিচ্ছে।

শিমু বলেন, "এটা কখনোই বন্ধ হবে না, বরং আমাদেরকে দেখতে হবে মানুষের অধিকার, মানবাধিকার এবং তাদের নিরাপত্তার জায়াগুলোকে আরো বলি'ষ্ঠ করতে হবে।"

এদিকে বাংলাদেশ থেকে এপর্যন্ত সোয়া ৩ লাখ ৩২ হাজার ২০৪ জন নারী সৌদি আরবে গিয়েছেন। ব্র্যাক মাইগ্রেশনের তথ্যে চলতি বছরে এ সংখ্যা ৫৩ হাজার ৭শ ৬২ জন। এরমধ্যে কেউ কেউ ফিরে এসেছেন ভ'য়ং'ক'র নি'র্যা'ত'নের অভিজ্ঞতা নিয়ে।

গত চার বছরে লাশ হয়ে ফিরেছেন ১৫৭ জন নারী। চলতি বছরের গত এগার মাসে সৌদি থেকে ৫৩ জন বাংলাদেশি নারী গৃহক'র্মীর মৃ'তদেহ এসেছে। এ অবস্থায় এখনো যারা যাচ্ছেন তাদের শেখানো হয় বি'প'দে পড়লে তারা কোথায় যাবে, কী করবে।

শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব মহিলা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উপাধ্যক্ষ শাহেল আরা বলেন, "আমরা ওদেরকে দূতাবাসের ফোন নাম্বার, যোগাযোগ করার মত কিছু নম্বর এবং মেসেজ ওদের দেই। এমনভাবে ওদের শেখানো হয় যাতে বিদেশে গিয়ে ওরা বি'প'দগ্র'স্ত না হয়। আমরা চাই না ওখানে গিয়ে তারা ক্রী'তদা'স হয়ে যাক।"

নারী শ্রমিকদের নিয়ে যারা কাজ করছেন তারা বলছেন, নিরাপদ অভিবাসন নারীর অধিকার। তবে সৌদিতে গৃহক'র্মী নি'র্যা'তনের বিষয়টি উ'দ্বেগজ'নক আর এক্ষেত্রে সরকারের পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়।

বাংলাদেশ নারী শ্রমিক কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুমাইয়া ইসলাম বলেন, তাদের সৌদি ভাষা যতোটুকু শেখানো হয় সেটা যথেষ্ট নয়। কারণ সেখানে কথ্য ভাষা ব্যবহৃত হয়। প্রশিক্ষণের মান আরো বৃদ্ধি করতে হবে। এক মাসের জায়গায় তিন মাস প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। আবাসিক করতে হবে।

তিনি বলেন, নারীকে শুধু আরবি ভাষা, হাঁড়িপাতিলের ব্যবহার না, তাকে সংকট মো'কাবে'লায় প্রশিক্ষিত করতে হবে। এছাড়া দুদেশের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জো'রদার করতে হবে। কেউ যদি ভায়োলেশন করে তাহলে নারী শ্রমিক পাঠানো বন্ধ করতে হবে।

নিরাপত্তা নিয়ে উ'দ্বে'গ থেকে সৌদি শ্রমবাজারে নারী-কর্মী ব'ন্ধের পক্ষে যেমন অনেকে আছে, আবার সুর'ক্ষা নিশ্চিত করে নারীদের পাঠানোর পক্ষেও মতামত দেখা যাচ্ছে। এক্ষেত্রে সৌদিতে থাকা বাংলাদেশিদের কথা হলো: নারী কর্মীদের নিরা'পত্তার স্বার্থে দূতাবাসকে আরো ত'ৎপর হতে হবে, এব! মক্কা, মদিনা, রিয়াদ বা জেদ্দা শহরের বাইরে নারী শ্রমিক না পাঠানোই সবচেয়ে ভাল। সূত্র : বিবিসি বাংলা

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে