মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০২০, ০২:৫৮:৪৪

করোনাভাইরাস নিয়ে বি চৌধুরীর পরামর্শ

করোনাভাইরাস নিয়ে বি চৌধুরীর পরামর্শ

নিউজ ডেস্ক: মাত্র ১৭/১৮ দিনে চীনের নতুন ছোঁ'য়াচে করোনা ভাইরাস রোগ চীন তো বটেই সারা পৃথিবীতে আত'ঙ্ক সৃষ্টি করেছে। আমাদের দেশে আতঙ্কি'ত হওয়ার মতো কিছু হয়নি এটা যেমন সত্য এবং এটাও সত্য চীনের সঙ্গে বিভিন্ন কারণে আমাদের যাতায়াত এবং যোগাযোগ উপে'ক্ষা করার মতো নয়। এ ছাড়া পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছ'ড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মালয়েশিয়া এবং থাইল্যান্ডে এই ভাইরাস রোগী শনা'ক্ত করা হয়েছে।

করোনাভাইরাস কী : করোনাভাইরাস সংক্ষেপে সিওভি। এটি নতুন ভাইরাস। যা মনুষ্য সমাজে আগে কখনো ছিল না। চীনের ইউনান প্রদেশের একটি বাজারে যেখানে বন্য পশু এবং মাছ বিক্রি হতো সেখান থেকেই প্রথম মানুষ সং'ক্র'মণ হয়। এভাবে জন্তু-জানোয়ার থেকে মানুষের দেহে এই নতুন ভাইরাস প্রবেশ করে। তারপর এটা বিদ্যুৎ গ'তিতে মানুষ থেকে মানুষের মধ্যে (ছোঁ'য়াচে রোগ) ছ'ড়িয়ে পড়েছে। আশ্চ'র্য হওয়ার কিছু নেই। ইবো'লা, এইচ'আই'ভি সং'ক্র'মণের মতো এটাও মানব সমাজের ওপর একটি নতুন ভাইরাসের আ'ক্র'মণ। এর ফলে এই ভাইরাস ও রোগ সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দ্রু'তগতিতে এর সমাধান খুঁ'জছে। বর্তমানে চীনের সমস্ত পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের সব প্রদেশে এটা এপেডিমিক পর্যায়ে ছ'ড়িয়ে গেছে অত্যন্ত দ্রু'তগতিতে।

অন্য দেশে : চীনেই এটা থে'মে থাকেনি। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে এর সং'ক্র'মণ চলছে। দেখা গেছে, চীন থেকে যারা অন্যান্য দেশে গেছেন তাদের মধ্যে এই রোগ দেখা যাচ্ছে। হংকং, তাইপে, কোরিয়া, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপাইন ও থাইল্যান্ডে। এ ছাড়াও ফ্রান্স এবং যুক্তরাষ্ট্রে এই রোগী শনা'ক্ত করা গেছে। সবক্ষেত্রেই যারা সম্প্রতি চীন ঘু'রে এসেছেন তাদের মধ্যে এ রোগ ধ'রা পড়েছে।  গত ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রকাশিত চীনের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায় শনা'ক্ত করা দুই হাজার রোগীর মধ্যে ৫৬ জন মা'রা গেছেন (শতকরা ২ দশমিক ৮ ভাগ)। এখনো গু'রুতর অসু'স্থ ৩০০ জন (শতকরা ১৫ ভাগ) ১৬/১৭ দিনে এই অবস্থা। পরিস্থি'তি উদ্বে'গজনক এতে কোনো সন্দে'হ নেই।

এ রোগের উপস'র্গ ও লক্ষ'ণ : করোনাভাইরাস এটি শ্বা'সনালি সং'ক্র'মক ভাইরাস। সুতরাং এর গুরুত্বপূর্ণ তিনটি উপস'র্গ হচ্ছে : জ্বর, কাশি এবং শ্বা'সক'ষ্ট। গুরু'তর শ্বাসক'ষ্ট একটি মা'রাত্ম'ক উপ'সর্গ। যার মানে হচ্ছে রোগটি নিউমো'নিয়ায় দিকে যাচ্ছে। বিশেষ করে বৃদ্ধ এবং শিশুদের নিউমো'নিয়া অত্যন্ত মা'রা'ত্মক পরি'ণতির দিকে নিয়ে যেতে পারে। শেষ পর্যায়ে লিভার এবং কিডনি বিক'ল হয়ে যেতে পারে।

চিকিৎসা : এ রোগের এখন পর্যন্ত খুব ভালো চিকিৎসা বের হয়নি। প্রথমত রোগী থেকে সং'ক্র'মণ যাতে না ছ'ড়াতে পারে সেজন্য তাকে আলা'দা রাখতে হবে। এর জন্য সং'ক্রা'মক হাসপাতালে (ইন'ফেক'শাস হসপিটাল) তাকে ভর্তি করতে হবে। এই হাসপাতালে ছোঁ'য়াচে রোগের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসক ও সেবক/ সেবিকার মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসের বিরু'দ্ধে যেসব ওষুধ ব্যবহার করা হয়েছে তার মধ্যে প্রো'টিএইচ ই'নহি'বিট'র, যথা লো'পেনা'ভির এবং রে'টোনা'ভির এজে'ন্ট। (নিউমো'নিয়া রোগীদের জন্য) এক্স'পেরিমে'ন্টাল জ'ন্তুদের ওপরে ই'ন্টারফে'রন ব্যবহার করা হয়েছে। মানুষের ওপর ব্যবহারের ফলাফল এখনো জানা যায়নি এবং এই রোগের বিরু'দ্ধে এখনো কোনো ভ্যাক'সিন আবিষ্কার হয়নি। তবে চেষ্টা শুরু হয়েছে।

রোগ নিরা'ময়ের চাইতে রোগ প্রতিরো'ধ সহজ ও সস্তা : এখন পর্যন্ত রোগ প্রতিরো'ধের পু'রোপু'রি ব্যবস্থা সম্পর্কে আমরা জানি না। তবে এটা জানা যায়, মানুষ থেকে মানুষে এ রোগ সং'ক্র'মিত হয়। আমরা এখন এও জানি যার ভিতরে এই জীবা'ণু প্রবেশ করেছে তার থেকে সুস্থ মানুষের মধ্যে এ জীবা'ণু প্রবেশ করার পর ১০/১২ দিন পর রোগের উপ'সর্গ প্রকাশ পায়। কিন্তু উপ'সর্গ প্রকাশ করার আগে থেকেই জীবা'ণু তার ভিতরে প্রবেশ করার কারণে তিনি ছোঁ'য়াচে হয়ে যান। প্রথম পর্যায়ে তাই তিনি একজন সুস্থ মানুষ হিসেবে সমাজে বিচ'রণ করতে পারেন।

সাধারণত নিঃ'শ্বাসের মাধ্যমে মানুষ থেকে মানুষে সং'ক্র'মিত হয়। তাদের হাঁচি, কাশিতে অজ'স্র জীবা'ণু বের হয়। সুস্থ মানুষ নিঃশ্বাসে অথবা ভেজা চোখের মাধ্যমে সং'ক্র'মিত হতে পারে। হাতে বা আঙ্গুলে জীবা'ণু থাকলে তা নাক, চোখ স্প'র্শ করার ফলে হাতের মাধ্যমে এ রোগ ছ'ড়াতে পারে দ্রু'তগ'তিতে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষ সারা দিনে ২০/২৩ বার তার হাত বা আঙ্গুল মুখে, চোখে, নাকে লাগায় প্রতি ঘণ্টায়। সুতরাং জাগ্র'ত অবস্থায় ১৮ ঘণ্টায় ৩৬০ বার মুখম লে চোখ বা নাকে হাত দেয়। এক) সেই জন্য বার বার হ্যা'ন্ড লোশন সাবান দিয়ে হাত ধো'য়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। দুই) মা'স্ক বা মু'খো'শ পরা আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে মা'স্কের বড় অসুবিধা এতে চোখ ঢে'কে রাখা যায় না। মা'স্কের আশপাশে ঢি'লা থাকে এবং মা'স্ক বারবার বদ'লানো যায় না। এর জন্য বড় এবং টাই'ট মা'স্ক ব্যবহার করা প্রয়োজন। 

কোথা থেকে রোগ ছ'ড়ায়
এক) রোগীর বাড়ি থেকে।

দুই) যেখানে অনেক জনসমা'গম হয়। যেমন : জনসভা, ধর্মীয় সভা, বাচ্চাদের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতালের আউ'টডোর, ব্যক্তিগত ও সরকারি সামাজিক আয়োজন। পার্টি সেন্টার পার্ক, সিনেমা হল ইত্যাদি। চীনের অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষি'তে ইউনান প্রদেশে এসব স্থান সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে। গণপরিবহন, উড়োজাহাজ, রেলগাড়ি ইত্যাদি। এগুলো আমাদের মনে রাখতে হবে। এয়ারপোর্ট, সমুদ্রবন্দর, রেল স্টেশন, হাসপাতাল, আউটডোর ইত্যাদি জনবহুল স্থানে স্ক্যা'ন করতে হবে।

চীনে ব্যবহৃত জ্বর দেখার স্ক্যা'নার জোগা'ড় করতে হবে। এটা শুধু কপালের কাছে লাগালেই গাণিতিক অক্ষরে স্প'ষ্টভাবে দেখা যাবে, যা ভাই'রাসের প্রথম উপস'র্গ জ্বর। টিভি, রেডিও, সংবাদপত্রকে তাদের যোগ্য ও প্রত্যা'শিত ভূমিকা পালন করতে হবে। কেমন করে আ'ত্মর'ক্ষা করতে হবে তা শি'খিয়ে দিতে হবে। কেউ যেন ভ'য় না পায় সেটাও দেখতে হবে।বিডি-প্রতিদিন

-অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী
সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্প ধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে