নিউজ ডেস্ক : নভেল করোনাভাইরাসে আ'ক্রা'ন্ত হওয়ার উপসর্গ থাকায় সারা দেশে বিভিন্ন স্থানে আরো বেশ কিছু রোগীকে করোনা আইসোলেশন সেন্টার ও হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে। সিলেটে এক স্পেনপ্রবাসী, যশোরের চৌগাছায় এক তরুণী, শরীয়তপুরে এক নারী ও সিরাজগঞ্জের তাড়াশে এক শ্রমিককে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে একই পরিবারের পাঁচজনকে ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়া নোয়াখালী ও যশোরে ৯ বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। স্থানীয় অফিস, নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন বিস্তারিত।
সিলেট : শরীরে জ্বর নিয়ে সিলেট শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি হয়েছেন এক স্পেনপ্রবাসী। তিনি প্রায় তিন মাস আগে দেশে আসেন। শনিবার সকালে তাঁর শরীরে জ্বর দেখা দেয়। রাতেই হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার সুশান্ত কুমার মহাপাত্র বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, তাঁর রক্তের নমুনা আইইডিসিআরে পাঠানো হবে। এখানে কোয়ারেন্টিনে এখন পর্যন্ত ২০ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ১৭ জনই ছাড়পত্র পেয়েছেন। বাকি তিনজনের শারীরিক অবস্থাও ভালো।
নতুনভাবে কোয়ারেন্টিনে ৮৫ জন : সিলেট বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় হোম কোয়ারেন্টিনে যুক্ত হয়েছেন ৮৫ জন। আর কোয়ারেন্টিন থেকে মুক্তি পেয়েছেন ২৬৮ জন। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেটের বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান এ তথ্য জানান।
এদিকে সিলেট নগরের সড়ক জীবাণুমুক্ত করতে মাঠে নেমেছে সিলেট মহানগর পুলিশ। গতকাল নগরের বিভিন্ন স্থানে সড়কে জলকামান দিয়ে জীবাণুনাশক ছিটানো হয়। মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গণমাধ্যম) জেদান আল মুসা জানান, পর্যায়ক্রমে নগরের সব সড়কে এ কার্যক্রম চালানো হবে।
গাজীপুর : গাজীপুরে ৪৭ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে জ্বর-কাশি ও গলাব্যথা নিয়ে এক যুবক তিন দিন ধরে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি রয়েছেন। চিঠি দেওয়ার পরও গত তিন দিনেও তাঁর নমুনা সংগ্রহের জন্য আসেনি আইইডিসিআর টিম।
হাসপাতালের পরিচালক ডা. খলিলুর রহমান জানান, টেলিফোনে আইইডিসিআরের টিমের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাদের সারা দেশে যেতে হচ্ছে বলে আসতে একটু দেরি হচ্ছে। আতঙ্কি'ত হওয়ার মতো কোনো লক্ষণ তাঁর শরীরে নেই।
সিভিল সার্জন মো. খায়রুজ্জামান জানান, জেলায় হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা এক হাজার ৪৯৬ জনের মধ্যে ৫৫৮ জনকে বাড়ি যাওয়ার ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।
রংপুর : করোনাভাইরাসে আ'ক্রা'ন্ত সন্দেহে শিশুসহ এক পরিবারের পাঁচ সদস্যকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতাল। গত শনিবার রাতে তাঁদের রংপুর মেডিক্যালে পাঠানো হয়।
রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. ফরিদুল ইসলাম জানান, ‘ওই পাঁচজনকে করোনা আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। রক্ত-কফসহ অন্যান্য নমুনা নেওয়া হবে।’
অন্যদিকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজে করোনাভাইরাস শনাক্তে মেশিন এলেও গতকাল পর্যন্ত কিট এসে পৌঁছেনি। তবে পিসিআর মেশিন স্থাপনের কাজ চলছে। কার্যক্রম শুরু হতে আরো কয়েক দিন লাগবে।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. আমিন আহাম্মেদ জানান, রংপুর বিভাগের আট জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ১০৪ জনসহ মোট এক হাজার ৭৬১ জন হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন।
করোনাভাইরাসের সং'ক্রমণ রোধে রংপুরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর পাশাপাশি মাঠে কাজ করছে র্যাব। বিদেশফেরত প্রবাসীরা হোম কোয়ারেন্টিনের নিয়ম-কানুন মানছে কি না সে বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছে সেনাবাহিনী।
শরীয়তপুর : জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২১ বছর বয়সী এক নারীকে করোনা আ'ক্রা'ন্ত সন্দেহে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। গতকাল সকালে ওই নারীর রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠানো হয়। ওই নারী উপজেলার ফকিরকান্দী এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে কাজ করে সংসার চালান।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সিভিল সার্জন এস এম আব্দুল্লাহ আল মুরাদ বলেন, এক নারী শনিবার সন্ধ্যায় জ্বর-কাশি নিয়ে জাজিরা হাসপাতালে এলে সন্দেহভাজন হিসেবে তাঁকে আইসোলেশন কেন্দ্রে রাখা হয়েছে।
এ ছাড়া শরীয়তপুরে গেল ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে পাঁচজনকে হোম কোয়ারেন্টিনের আওতায় আনা হয়েছে। আর ১৪ দিন পূর্ণ হওয়ায় ৪০ জনকে মুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। জেলায় এখন হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন ২৭৮ জন।
রাজশাহী : করোনাভাইরাস আ'ক্রা'ন্ত সন্দেহে নাটোরের বাসিন্দা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে গত শনিবার রাতে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিলে তাঁকে হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়। এর আগে এই হাসপাতাল থেকে তাঁকে রাজশাহীর রোগ সংক্রমণ হাসপাতালের করোনা চিকিৎসার জন্য আইসোলেশনে পাঠানো হয়। শ্বাসকষ্টের জন্য সেখান থেকে তাঁকে হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রামেক হাসপাতালের উপপরিচালক সাইফুল ফেরদৌস। এ ছাড়া মান্দার এক রোগীকে সকালে রাজশাহী রোগ সং'ক্রমণ হাসপাতালের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। পরে ওই রোগীও হোম কোয়ারেন্টিনে গেছেন।
চৌগাছা (যশোর) : করোনাভাইরাসে আ'ক্রা'ন্ত সন্দেহে এক তরুণীকে যশোর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসোলেশনে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি চৌগাছা পৌর এলাকার রবিউল ইসলামের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। তাঁর স্থায়ী ঠিকানা রংপুরের পীরগঞ্জে। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পৌর মেয়র ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) ওই বাড়িসহ পাঁচটি বাড়ি লকডাউন করেছেন।
নোয়াখালী : নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার দক্ষিণ চর মজিদ গ্রামে জ্বর ও সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত এক ব্যক্তির বাড়িসহ চারটি বাড়ি লকডাউন করেছে উপজেলা প্রশাসন। গতকাল ওই চারটি বাড়িতে লাল পতাকা উত্তোলন করে বাড়িগুলো পুলিশের নজরদারিতে রাখা হয়। এ সময় হ্যান্ড মাইকে আশপাশের লোকজনকে প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে চলতে বলা হয়। পরে ওই ব্যক্তির শরীরের নমুনা পরীক্ষার জন্য চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে পাঠানো হয়।
জয়পুরহাট : জয়পুরহাটে করোনাভাইরাস সন্দেহে জ্বর, সর্দি-কাশি, গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্টের তিন রোগীকে আক্কেলপুর উপজেলার গোপীনাথপুর আইএসটি আইসোলেশন সেন্টারে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁদের তিনজনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য গতকাল আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে। তাঁদের মধ্যে একজনের পরিবারের তিন সদস্যসহ প্রতিবেশী ১৫ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। জেলার সিভিল সার্জন ডা. সেলিম মিঞা এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জেলায় বর্তমানে হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন ১৯৯ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ২৪ জন প্রবাসীর হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত ও মেয়াদ শেষ হওয়ায় ৩৪ জন প্রবাসীকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।
তাড়াশ-রায়গঞ্জ (সিরাজগঞ্জ) : নির্মাণ শ্রমিক কাইয়ুম আলী দুই দিন আগে ঢাকা থেকে বাড়িতে ফেরার পর সর্দি ও জ্বরে আক্রান্ত হন। প্রতিবেশীরা সন্দেহ করেন যে তিনি করোনাভাইরাসে আ'ক্রা'ন্ত। অবশেষে তাঁকে পরিবারসহ হোম আইসোলেশনে রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।