বুধবার, ০৮ এপ্রিল, ২০২০, ০৭:৫১:১২

পানির দরে তরমুজ, নীরবে চোখের পানি ফেলছেন দরিদ্র কৃষকরা

পানির দরে তরমুজ, নীরবে চোখের পানি ফেলছেন দরিদ্র কৃষকরা

নিউজ ডেস্ক : করোনাভাইরাসের কারণে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে দেশের তরমুজ চাষিরা। তরমুজের ভরা মৌসুম হলেও বিক্রি করতে না পারায় লোকসান গুনতে হচ্ছে চাষিদের। করোনার লকডাউনের কারণে চ'রম বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া চাষিরা। পাইকার নেই। স্থানীয় বাজারেও তা উঠাতে পারছেন না লকডাউনের কারণে। কেউ কেউ বাজারে নিয়ে গেলেও ক্রেতা সং'কটে আবার বাড়িতে ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। 

এমন পরিস্থিতিতে দিশে'হারা হয়ে পড়েছেন তারা। চাষিরা জানান, মৌসুমের এ সময়টাতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা এসে তরমুজ কেনার জন্য তাদের বাড়িতে ভিড় জমাতেন। অথচ করোনার কারণে এখন একজন ক্রেতাও পাওয়া যাচ্ছে না। কৃষকের কাছে তরমুজ কিনতে আসাতো দূরে থাক তাদেরকে খুঁজেও পাওয়া যাচ্ছে না। 

উপায়ান্তর না পেয়ে তরমুজ চাষিরা নিজেরাই কোনমতে ঢাকায় নিয়ে এসে পাইকারদের কাছে নামমাত্র পানির দরে তরমুজ বিক্রি করছেন। এতে ছোট-বড় প্রতিটি তরমুজের দাম ধ'রা হয় ৩০-৪০ টাকা করে। তবে মাঝারি আকারের একটি তরমুজ ঢাকার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কিনতে সাধারণ ক্রেতাদের গুনতে হচ্ছে ২০০-২৫০ টাকারও বেশি। কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে কিনেও রাজধানীর ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছে এমন চড়া দামে। ফলে ভো'গান্তির রেশটা কৃষকের কাঁধেই রয়ে যায়।

দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে চাষিরা তরমুজ নিয়ে এসে রাজধানীর বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে ওয়াইজঘাটে নৌকায় সারি সারিভাবে সাজিয়ে রেখেছেন। সেখানেই কথা হয় বরিশালের ভোলা জেলার তরমুজ চাষি ইউসুফ ফরাজীর সঙ্গে। তিনি এলাকায় কোনো পাইকার না পেয়ে তিন হাজার তরমুজ নিয়ে হাজির হয়েছেন সদরঘাট এলাকায়। তিনি বলেন, ‘আমি খুব লোকসানের মধ্যে আছি। যে তরমুজের দাম ১৫০-২০০ টাকা, সেই তরমুজ বিক্রি করতে হচ্ছে ৩০-৪০ টাকায়। অথচ চাষাবাদ থেকে শুরু করে প্রতিটি তরমুজের পেছনে খরচ পড়েছে ১০০ টাকা।’ এ নিয়ে তিনি হতাশা প্রকাশ করেন।

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী কামাল হোসাইন। তিনি ভাড়া বাসায় থাকেন বসুন্ধরা এলাকায়। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন খবরে দেখি ক্রেতা না থাকায় চাষিরা তরমুজ বিক্রি করতে পারছে না। কিন্তু ঢাকায় তো তরমুজের বাজারে আ'গুন। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর বাজার থেকে বড় আকারের একটি তরমুজ কিনতে হয়েছে ৩০০ টাকা দিয়ে। ছোট আকারের একটি তরমুজ কিনতে গেলেও ১৫০ থেকে ২০০ টাকা লাগে। ’

জানা যায়, নভেম্বর মাস থেকে ডিসেম্বরে তরমুজের চাষাবাদ শুরু হয়। গাছে ফলন ধ'রা থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে তরমুজ পরিপক্ব হয়। উপকূলীয় এলাকায় বিভিন্ন প্রজাতির তরমুজের মধ্যে বিগফ্যামিলি, জাম্বু জাগুয়ার, ড্রাগন ও ব্লুাকটাইগার প্রজাতির তরমুজের ফলন ভালো হয়। তাই এগুলোর চাষাবাদও বেশি করেন চাষিরা। 

বিগত বছরের তুলনায় এবার ফলন ভালোই হয়েছে। অন্যান্য বছর তরমুজ পাকতে শুরু করলে শত শত ট্রাক অপেক্ষমাণ থাকতো উৎপাদিত এলাকায়। ট্রাকবোঝাই করে নিয়ে যাওয়া হতো ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায়। কিন্তু এবছর করোনাভাইরাসের ভয়ে লকডাউন থাকায় পাইকাররাও আসছেন না আর তরমুজও বিক্রি করতে পারছেন না কৃষকরা। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে তরমুজ চাষ করেছেন চাষিরা। আর সেই তরমুজ এখন নষ্ট হচ্ছে জমিতেই। এমন দৃশ্য দেখে নীরবে চোখের পানি ফেলছেন দরিদ্র কৃষকরা।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে