বুধবার, ০৩ জুন, ২০২০, ০৮:২৮:০৩

গণস্বাস্থ্যের কিটে ত্রুটি নেই, ত্রুটি নমুনা সংগ্রহে: ড. বিজন কুমার শীল

গণস্বাস্থ্যের কিটে ত্রুটি নেই, ত্রুটি নমুনা সংগ্রহে: ড. বিজন কুমার শীল

নিউজ ডেস্ক : করোনাভাইরাস শনা'ক্তে ‘জিআর র‌্যাপিড ডট ব্লট’ কিটে ত্রুটি নেই বলে জানিয়েছেন এর উদ্ভাবক গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিজ্ঞানী ড. বিজন কুমার শীল। তিনি বলেন, ‘আমাদের কিটে কোনও ত্রুটি ধ'রা পড়েনি। ত্রুটি ধ'রা পড়েছে নমুনা সংগ্রহ করার পদ্ধতিতে। নমুনা সংগ্রহের বর্তমান পদ্ধতিতে লালা সংগ্রহটা ঠিকমতো হচ্ছে না। যার ফলে কিছু নমুনা থেকে ভাইরাস বের করে আনা যাচ্ছে না। নমুনা সংগ্রহ প্রক্রিয়াকে আরও সমন্বিত ও কার্যকর করার জন্য আমরা বলেছি, অ্যান্টিজেন পরীক্ষা যেন বন্ধ রাখে। 

আমরা বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছি সাময়িক বন্ধ রাখার জন্য। আমরা ইতোমধ্যে একটি সমন্বিত পদ্ধতি বের করেছি। সেটা কাল-পরশুর মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়কে (বিএসএমএমইউ) দেবো।’ বিএসএমএমইউ’তে গণস্বাস্থ্যের কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষা সাময়িকভাবে বন্ধ করা প্রসঙ্গে বুধবার (৩ জুন) তিনি এ কথা বলেন।

এর আগে মঙ্গলবার (২ জুন) গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের জিআর র‌্যাপিড ডট ব্লট কিটের প্রকল্পের কো-অর্ডিনেটর ডা. মুহিব উল্লাহ খন্দকার বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ড. কনক কান্তি বডুয়াকে একটি চিঠি দেন অ্যান্টিজেন টেস্ট বন্ধ রাখার জন্য।

ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ড. বিজন কুমার শীল বলেন, ‘আমরা যেভাবে নমুনা সংগ্রহ করেছি, বিএসএমএমইউতে সেভাবে হচ্ছে না। অনেকে নমুনা হিসেবে লালার বদলে কফ দিয়ে যাচ্ছেন। লালা আর কফ এক না। তাই আমরা বলেছি আপাতত একটু বন্ধ রাখুন। আমরা ইতোমধ্যে নতুন যে পদ্ধতি বের করেছি তাতে ৯০ শতাংশ সিমিলারিটি থাকবে। এটাই বিএসএমএমইউকে বলা হয়েছে। বলা হয়নি যে কিটে ত্রুটি আছে। বলা হয়েছে, লালা সংগ্রহটা ঠিকমতো হচ্ছে না। কেউ থুথু দিচ্ছেন, কেউ কফ দিচ্ছেন, যার ফলে সেখান থেকে ভাইরাসটা তুলে নেওয়া (এক্সট্রাক্ট) যাচ্ছে না। আমি নিজেই বঙ্গবন্ধু হাসপাতাল গিয়ে দেখে এসেছি। এজন্য বলে এসেছি, এটা বন্ধ রাখুন। আমরা নমুনা কালেকশন করার জন্য আরেকটা প্রটোকল দিচ্ছি। ’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কালকের মধ্যেই বিএসএমএমইউতে নতুন পদ্ধতি দিয়ে আসবো, যাতে কোনও অসুবিধা না হয়। নমুনা সংগ্রহ সবার ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৯০ ভাগ সিমিলার হয়। যেটা বর্তমানে ১০ ভাগ সিমিলার হচ্ছে না। আসলে কিটে কোনও ত্রুটি নেই। তারাও কিটের পরীক্ষা করছে, পাশাপাশি আমরাও পরীক্ষা করছি। আমরা বোঝাতে পারছি আমাদের কিটের কী অবস্থা।’

অ্যান্টিজেন টেস্ট সাময়িক বন্ধ রাখার বিষয়ে বিএসএমএমইউ’র উপাচার্যকে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিঠিএ বিষয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা বিএসএমএমইউকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেছি যে ৪০০ কিটের পরীক্ষা করেছেন, আর কত করবেন। আমাদের অন্তত সাময়িক অনুমতি দিন। ওষুধ প্রশাসনকেও চিঠি দিয়েছি যে আর কতদিন পরীক্ষা করবেন। আমাদের অ্যান্টিজেন কিটে কোনও ত্রুটি ধ'রা পড়েনি। সবকিছুর ইম্প্রুভমেন্ট হয়। আমরা তাদের বলেছি অ্যান্টিজেন বাকি রাখার জন্য। অ্যান্টিজেন টেস্ট করার সময় দরকার হয় থুথু, কিন্তু লোকে দিয়ে দেয় কফ। আমি যে করোনা পজিটিভ হয়েছি, সেটা আমাদের কিটেই সহজে ধরা পড়েছে। কারণ, আমি সঠিক নিয়মে লালা দিয়েছি। কিন্তু মানুষ থুথু না দিয়ে কফ, পানের পিক দিলে তো পরীক্ষা ভিন্ন হয়ে যায়। এখানে তো লুকানোর কিছু নেই। সুতরাং এটাকে আমরা আরও পারফেক্ট করছি। ’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার সত্য কথা বলতে ভালোবাসি। আমার সত্য গোপনে বিশ্বাস করি না। আমরা সাহসী সত্যবাদী। এই দেশে এটাই অসুবিধা, যারা সত্য কথা বলে, ন্যায়ের পথে থাকে, তাদের হয়রানি করা হয়।’

চিঠি দেওয়ার বিষয়ে ডা. মুহিব উল্লাহ বলেন, ‘মূল বিষয় হচ্ছে লালার নমুনা সংগ্রহে অসামঞ্জস্য থাকায় এটা আপাতত স্থগিত করতে বলেছি। এটাকে কেউ ভিন্নভাবে বুঝে নিয়ে বলছে কিটে ত্রুটি আছে। আসলে নমুনা সংগ্রহে একটু সমস্যা হচ্ছে। মানুষ লালার যে নমুনা দিচ্ছে সেখানে অনেক ক্ষেত্রে পানের ময়লা থেকে যাচ্ছে। আমাদের টেস্টের জন্য দরকার লালা। ফলে সেই লালাটা ফিউরিফাই করে আমরা পাচ্ছি না। 

এই জন্য আমরা বঙ্গবন্ধু হাসপাতালকে বলেছি, আপনারা আপাতত এই টেস্ট বন্ধ রাখুন। লালার স্যাম্পলটা কালেকশন করার প্রসিডিউর বলে দিচ্ছি, সেভাবে সংগ্রহ করলে কোনও সমস্যা হবে না। এটাই মূল ইস্যু। আর বাড়তি তাদের অনুরোধ করেছি যে, অ্যান্টিবডির টেস্ট যদি শেষ হয়ে যায়, সেটার রিপোর্ট যেন জমা দেয়।’

কী বিষয়ে গণস্বাস্থ্য চিঠি দিয়েছে, জানতে চাইলে বিএসএমএমইউ উপাচার্য ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এগুলো সব কনফিডেন্সিয়াল। আমরা সব বিষয়ে আগামী সপ্তাহে কথা বলবো। এতদিন যখন ধৈর্য ধরেছেন, আরও একটু ধৈর্য ধরুন। কারণ, তাদের সঙ্গে আমাদের কোনও ধরনের বিতর্কমূলক কিছু না হয় এমন চুক্তি আছে। তারা তো আমাদের সম্পর্কে অনেক কথা বলছেন, কিন্তু আমরা মুখ খুলছি না। শেষ তারিখে আমাদের যা বলার বলবো। আমার ইউনিভার্সিটি সাইন করেছে, আমি সাক্ষী। আমার রেজিস্ট্রার সাইন করেছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘তারা অনেক কথা বলতে পারেন, আমরা একাডেমিশিয়ান মানুষ। আমাদের গবেষকরা গবেষণা করছে। তারা মাঝে মাঝে হ'তাশ হয়ে যান। তারপর আমি তাদের বুঝ দিয়ে রাখি যে বিভিন্ন বিতর্ক থেকে আমাদের উত্তর করতে হবে। কারণ, এটার ভালো রেজাল্ট হলেও তো দেশকে এবং দেশের মানুষকে জানাবো। তোমাদের হ'তাশ হওয়ার কী আছে।’-বাংলা ট্রিবিউন

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে