মঙ্গলবার, ১৪ জুলাই, ২০২০, ০৯:১৬:২৪

‘সুমন, আমি জেকেজির চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা বলছি, তুমি খুব কিউট...'

‘সুমন, আমি জেকেজির চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা বলছি, তুমি খুব কিউট...'

নিউজ ডেস্ক : ‘সুমন আমি জেকেজির চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা বলছি। তুমি খুব কিউ'ট। আমার প্রতিনিধি পাঠাচ্ছি। করোনা নমুনা সং'গ্রহ করতে সব ধরনের সহযোগিতা কর।’ সরকারের কাছ থেতে বিনা মূল্যে নমুনা সংগ্রহের অনুমতি নিয়ে বুকিং বিডি ও হেলথকেয়ার নামে দুটি সাইটের মাধ্যমে টাকা নেওয়া এবং নমুনা পরীক্ষা ছাড়াই ভু'য়া সন'দ জা'লিয়াতি করার অ'ভিযোগে গ্রে'প্তার জেকেজি হেলথকেয়ারের চেয়ারম্যান ও জাতীয়  হৃদেরাগ ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক ডা. সাবরিনা চৌধুরীর মোবাইল ফোন চেক করে এ ধরনের অনেক মেসেজ পেয়েছে পুলিশ। প্রতিটি মেসেজের শুরুতেই সাবরিনা নিজেকে জেকেজির চেয়ারম্যান দাবি করেন বলে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদকারী ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) হারুন অর রশিদ জানিয়েছেন।

হারুন অর রশিদ গতকাল  বলেন, তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে সাবরিনাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হয়েছে। এরই মধ্যে তিনি কিভাবে প্র'তারণার ফাঁ'দ পেতে করোনা নমুনা পরীক্ষা ছাড়াই ভু'য়া সনদ দিতেন সে বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন।

পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, ডা. সাবরিনাকে গতকাল সোমবার সকালে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে চার দিনের রি'মান্ডের আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম শাহিনুর রহমান তিন দিনের রিমা'ন্ড ম'ঞ্জুর করেন।

জাতীয়  হৃদেরাগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের রেজিস্টারের দায়িত্ব পালন করে আসা ডা. সাবরিনা জেকেজি হেলথকেয়ারের প্রধান নির্বাহী আরিফুল হক চৌধুরীর স্ত্রী। সে কারণে সাবরিনা আরিফ চৌধুরী নামেই তিনি পরিচিত। করোনাভাইরাস পরীক্ষা নিয়ে জা'লিয়াতির অ'ভিযো'গে এক মা'মলায় গ্রে'প্তার হয়ে সাবরিনার স্বামী আরিফুল বর্তমানে কারাগারে।

জানতে চাইলে ডিসি হারুন অর রশিদ গতকাল বলেন, অতি সম্প্রতি জেকেজির ব্যাপারে বিশদ তদ'ন্ত করতে গিয়েই উঠে আসে ডা. সাবরিনা ও তাঁর প্র'তারক স্বামী আরিফ চৌধুরীর নাম। এরপর গত রবিবার ডা. সাবরিনাকে  হৃদেরাগ হাসপাতাল থেকে তাঁর কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর তেজগাঁও থানার এক মা'মলায় তাঁকে গ্রে'প্তার দেখানো হয়।

তিনি বলেন, জেকেজির কোনো ট্রেড লাইসেন্স নেই। এর পরও কিভাবে প্রতিষ্ঠানটি করোনা নমুনা সংগ্রহের অনুমতি পেল তার তদ'ন্ত চলছে। সাবরিনার মোবাইল ফোন চেক করে সাতটি মেসেজ পাওয়া গেছে। প্রতিটি মেসেজে সাবরিনা বিভিন্ন মানুষকে ফোন করে কখনো জেকেজির চেয়ারম্যান, কখনো সমন্বয়ক আবার কখনো আহ্বায়ক পরিচয় দিয়ে প্র'তারণা করেছেন। তাঁকে সহযোগিতাকারী অনেক প্রভাবশালীর নাম জানা গেছে। 

তেজগাঁও থানা সূত্র জানিয়েছে, জেকেজির বিরু'দ্ধে মোট চারটি মা'মলা হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি প্র'তারণার এবং আরেকটি থানায় হা'মলা, ভা'ঙচুর ও পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভি'যোগে করা হয়েছে। প্রথম মা'মলাটি দায়ের করেন কামাল হোসেন নামে এক ভুক্তভোগী। সরকারি প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে প্র'তারণার মাধ্যমে টাকা আ'ত্মসাৎ, করোনাভাইরাস পরীক্ষার ভু'য়া প্র'তিবেদন দেওয়া ও জীবন বিপ'ন্নকারী রোগের সং'ক্রমণের মধ্যে দায়িত্বে অবহেলার অভি'যোগ আনা হয় এজাহারে। ওই মা'মলায় গত ২৩ জুন আরিফুলকে গ্রে'প্তারের পর জেকেজি কর্মীরা তেজগাঁও থানায় গিয়ে বি'ক্ষোভ করে। পরে পুলিশ বাদী হয়ে আরেকটি মা'মলা করে এবং তাতে জেকেজির ১৮ কর্মীকে গ্রে'প্তার করা হয়। আরিফের গ্রে'প্তারের খবর পেয়ে দুজন ব্যবসায়ী একই থানায় আরো দুটি মা'মলা করেন। এর একটিতে ১২টি ল্যাপটপ ভাড়া নেওয়ার নামে আ'ত্মসাৎ করা এবং অন্যটিতে দুটি আর্চওয়ে এবং ২০টি ওয়াকিটকি কিনে টাকা না দেওয়ার অভি'যোগ আনা হয়। এর মধ্যে আরিফকে তিনটি প্র'তারণার মা'মলায় গ্রে'প্তার দেখানো হয়েছে। আর সাবরিনাকে গ্রে'প্তার দেখানো হয়েছে প্রথম মা'মলায়। পুলিশ জানিয়েছে, তদ'ন্তে প্রমাণ পাওয়া গেলে  প্র'তারণার বাকি দুই মা'মলায়ও তাঁকে গ্রে'প্তার করা হতে পারে। এর আগে রাজধানীর কল্যাণপুরের একটি বাড়ির তত্ত্বাবধায়কের অভি'যোগের সত্যতা পেয়ে গত ২২ জুন জেকেজি হেলথকেয়ারের সাবেক গ্রাফিক্স ডিজাইনার হুমায়ন কবির হিরু ও তাঁর স্ত্রী তানজীন পাটোয়ারীকে গ্রে'প্তার করে পুলিশ। তাঁদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরে প্রতিষ্ঠানটির সিইও আরিফুলকে গ্রে'প্তার করা হয়।

মা'মলার বাদী কামালের অভি'যোগ, তাঁর বাড়ির মালিক ও স্ত্রীর জ্বর, সর্দি হওয়ায় কভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য অনলাইনের মাধ্যমে জেকেজির পক্ষে হুমায়ুনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তাঁরা দুজন ছাড়াও তাঁদের ছেলে, গাড়িচালক, গৃহপরিচারিকার নমুনা তিন দ'ফায় বিজয় সরনি মোড়ে হুমায়ুনের  লোক এসে নিয়ে যায়। এ জন্য ৪৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গ্রে'প্তারের দিনই জাতীয়  হৃদেরাগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল থেকে ডা. সাবরিনাকে বরখা'স্ত করার অফিস আ'দেশ জা'রি করা হয়। এর ঘণ্টাখানেক পর সরকারি কর্মচারী বিধিমালা ভ'ঙ্গের অভি'যোগে তাঁকে সাময়িক বরখা'স্ত করার কথা জানায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ওই আদেশে বলা হয়, ডা. সাবরিনা শারমিন হুসাইন সরকারি চাকরিতে কর্মরত থাকা অবস্থায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জেকেজির চেয়ারম্যান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি করোনা টেস্টের ভু'য়া রিপোর্ট দেওয়া এবং অর্থ আ'ত্মসাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। নতুন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর নমুনা পরীক্ষার জন্য  জেকেজিকে দায়িত্ব দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তখন এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হিসেবে ডা. সাবরিনার কথাই বলা হতো। কিন্তু জুনের শেষ দিকে জেকেজির দুর্নীতির খবর প্রকাশ পাওয়ার পর সাবরিনা দাবি করেন, এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গত দুই মাস ধরে তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই।

পুলিশের তদ'ন্তে উঠে এসেছে, ঢাকার তিতুমীর কলেজ মাঠে প্রথমে স্যাম্পল কালেকশন বুথ স্থাপনের অনুমতি মিললেও প্রভাব খাটিয়ে ঢাকার অন্য এলাকাসহ আরো অনেক জেলা থেকেও নমুনা সংগ্রহ করে জেকেজি। জেকেজির গুলশান কার্যালয়ে গত ২৪ জুন অভি'যান চালিয়ে আরিফসহ ছয়জনকে গ্রে'প্তার করে তাঁদের দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। তাঁরা এ বিষয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানব'ন্দি দেন।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে