মঙ্গলবার, ১১ আগস্ট, ২০২০, ১১:৩০:৫২

চীন-বাংলাদেশ নতুন অধ্যায়ের সূচনা : গ্লোবাল টাইমসে নিবন্ধ

চীন-বাংলাদেশ নতুন অধ্যায়ের সূচনা : গ্লোবাল টাইমসে নিবন্ধ

লি জিমিং : বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভে (বিআরআই) দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম স'ক্রি'য়ভাবে সাড়া দিয়েছে বাংলাদেশ। বৃহৎ জনগোষ্ঠী, একই রকম জাতীয় পরি'স্থিতি, অভিন্ন উন্নয়ন লক্ষ্য এবং উচ্চ মাত্রায় 'কমপ্লিমেন্টারি' শিল্প নিয়ে চীন ও বাংলাদেশ উভয়েই উন্নয়নশীল দেশ। বেল্ট এন্ড রোড উদ্যোগ একত্রে গড়ে তোলার জন্য আমরা প্রাকৃতিক অংশীদার।

২০১৬ সালের অক্টোবরে রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশে আসেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। এ সময় উভয় পক্ষ বিআরআইয়ের অধীনে সহযোগিতার জন্য সমঝোতা স্বারক স্বাক্ষর করে। কৌ'শলগত অংশীদারিত্বে সহযোগিতার জন্য দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে উন্নত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এতে উভয় দেশের জন্য 'বিজয়-বিজয়' ভিত্তিক সহযোগিতার নতুন এক সুযোগ আসে। তখন থেকেই, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে গ'তি পেয়েছে।

দ্রুত ত্বরা'ন্বিত হচ্ছে উন্নয়ন। একটানা বহু বছর বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার হলো চীন। আর বর্তমানে এই পারস্পরিক সুবিধাসম্বলিত সহযোগিতা ঐতিহাসিক এক নতুন উচ্চতায় উঠে গেছে। কোভিড-১৯ ম'হামা'রি মানবতায় এক বি'র'ল হতা'শা নিয়ে এসেছে। করোনা ভাইরাসের দ্রুত বিস্তারের ফলে বাংলাদেশও বিশাল চ্যালে'ঞ্জ মো'কাবি'লা করছে। চীন ও বাংলাদেশ একে অন্যকে 'সাপোর্ট' দিয়েছে। একে অন্যকে সাহায্য করেছে। এই স'ঙ্ক'টের ক'ঠি'ন সময়ে একে অন্যের সঙ্গে ইতিবাচক ভূমিকায় সাড়া দিয়েছে। সহযোগিতা, স্বাস্থ্য ও উন্নয়নের চলমান ধা'রায় একটি মডেল হিসেবে বিশদভাবে চিত্রিত করা হয়েছে বেল্ট এন্ড রোড উদ্যোগকে।

ঐক্যমত গঠনের পথ : বিআরআই হলো ঐকমত এবং সহযোগিতা গড়ে তোলার একটি পন্থা। ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের সময়ে, দুই দেশের শীর্ষ নেতারা সার্বিক পরি'স্থিতি সামাল দিয়েছেন এবং সহযোগিতার এক নিরেট ভিত্তি গড়ে তুলেছেন। ফেব্রুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাতে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে ঐতিহাসিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর জো'র দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া করোনা মহামা'রির বি'রু'দ্ধে চীনকে শ'ক্ত সমর্থন দেয়ার কথা বলা হয়েছে। সক্ষমতার অধীনে চীনকে সহযোগিতা প্রস্তাব করা হয়েছে।

২০ শে মে দুই দেশের নেতারা 'টেলিফোন কূটনীতি'র আশ্রয় নিয়েছেন। কোভিড-১৯ মহামা'রিকালে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে পারস্পরিক সমর্থনের ওপর গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করেছেন তারা। এই ম'হামা'রির প্রেক্ষাপটে বৈশ্বিক যে প্রতি'ক্রিয়া তার প্রতি তাদের যৌথ প্রতি'শ্রু'তি পুনরায় নি'শ্চিত করেছেন। এ ছাড়া তারা গু'রু'ত্বপূর্ণ কিছু ইস্যুতে একমত হয়েছেন। যেমন বিভিন্ন ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক যৌথ প্র'তিরো'ধ, নিয়'ন্ত্রণ ও সহযোগিতা চর্চার মতো ইস্যু রয়েছে।

জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষা : সব সময়ই হেলথ সিল্ক রোডের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে মেডিকেল সহযোগিতা। সাংহাইয়ের হুয়াশান হাসপাতালের সুপরিচিত সং'ক্রা'মক ব্যাধি বিশেষ'জ্ঞ ঝাং ওয়েনহংকে এপ্রিলে আমন্ত্রণ জানায় বাংলাদেশে অবস্থিত চীনা দূতাবাস। এর উদ্দেশ্য ছিল, বাংলাদেশের কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে অনলাইনে অভিজ্ঞতা বিনিময় করা। এটা হলো কোভিড-১৯-এর বি'রু'দ্ধে লড়া'ইয়ে চীনের অভি'জ্ঞতা শে'য়ারের একটি উত্তম সূচনা।

জুনে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে ফোনকলে কথা হয়। এর একটি গুরুত্বপূর্ণ ফল হলো, চীনা সরকার বাংলাদেশে মেডিকেল বিশেষজ্ঞদের পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। উদ্দেশ্য ওই টিমটি স্থানীয় চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনা করবেন এবং কীভাবে পে'শাদা'রী গাইডেন্সের অধীনে ম'হামা'রির বিরুদ্ধে অধিক টা'র্গে'টেড ব্যবস্থা নিতে পারে বাংলাদেশ সরকার, সে বিষয়ে একটি আনুষ্ঠানিক লিখিত প্রস্তাব জমা দেয়া।

বর্তমানে উভয় দেশই স'ক্রি'য়ভাবে করোনা টিকা নিয়ে গবেষণা ও উন্নয়ন সহযোগিতা নিয়ে প্রযু'ক্তিগত বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করছে। প্রাসঙ্গিক এসব প্রাকটিক্যাল পদক্ষেপ নিঃ'স'ন্দেহে চীন ও বাংলাদেশের মানুষের উপকারে আসবে। অবশ্যই উভয় দেশের মানুষের স্বাস্থ্যখাতে অপরিমিত অবদান রাখবে চায়না-বাংলাদেশ কমিউনিটি অব পাবলিক হেলথ।

সমৃদ্ধির অভিন্ন পথ : মহামা'রিকালে, চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে বেল্ট এন্ড রোড সহযোগিতামূলক প্রকল্পগুলো কখনো ব'ন্ধ হয়ে থাকে নি। এর মধ্যে রয়েছে পদ্মা সেতু প্রকল্প ও কর্ণফুলি নদীর টানেল নির্মাণ। মে মাসে পায়রায় দেশের বৃহত্তম ২৬৬০ মেগাওয়াটের কয়লা চালিত বিদ্যুতকেন্দ্রের একটি ইউনিটের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এটি চালু করার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে সেখান থেকে বাংলাদেশের জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুত সরবরাহ শুরু হয়েছে।

২রা আগস্ট কর্ণফুলি টানেল প্রজেক্টে বাম লাইন সম্পন্ন করার মধ্য দিয়ে একটি বড় সফলতা অর্জন করেছে। জুলাই মাসে বাংলাদেশের জন্য শতকরা ৯৭ ভাগ পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা অনুমোদন করেছে চীন। এর ফলে চীনে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানি ও বিদেশি বিনিয়োগের জন্য একটি নতুন স্বর্ণালি যুগের সূচনা হয়েছে।

অবকাঠামো খাতে বেল্ট এন্ড রোড সহযোগিতা সুস্পষ্টভাবে উভয় দেশের জনগণকে উপকৃত করেছে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সুবিধার দিক দিয়ে। বছরের দ্বিতীয় চতুর্ভাগে চীনের জাতীয় প্রবৃদ্ধি বেড়েছে শতকরা ৩.২ ভাগ। চীনের ন্যাশনাল ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিকসের তথ্য মতে, মাস থেকে মাসের হিসাবে এটা ছিল শতকরা ১১.৫ ভাগ।

বৈশ্বিক অর্থনীতির অ'বন'তিশী'ল পরি'স্থিতিতে, এটা খুশির খবর। এটা চীনের অর্থনীতির স্থি'তিশী'লতা প্রদর্শন করে। এসব কিছুর ফলে বাংলাদেশ সহ বিশ্বের অনেক দেশের কাছে নিঃ'স'ন্দেহে আ'স্থা ও আশা বহন করে এনেছে চীন। করোনা মহামা'রি পরবর্তী সময়ে কাজ ও উৎপাদন শুরুর ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা বিনিময়ে বাংলাদেশ ও চীন উভয় দেশের রয়েছে সং'ক'ল্প ও স'ক্ষ'মতা। 

এ ছাড়া বিআরআইয়ের অধীনে যৌথ উন্নয়ন ক'র্মকা'ন্ডকে সামনে এগিয়ে নেয়ার সক্ষমতা রয়েছে। জ'টি'ল এক পরি'স্থিতিতে জ'টিলতাকে কা'টিয়ে উঠে স্থিতিশীল উন্নয়ন অর্জনের মতো আস্থা ও প্রজ্ঞা রয়েছে বাংলাদেশ ও চীনের। এর ফলে ভবিষ্যতে অবিচল ও টেকসই সহযোগিতা নি'শ্চি'ত করবে।

চীন ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৪৫ তম বর্ষ এ বছর পালিত হচ্ছে। গত ৪৫ বছর ধ'রে চীন ও বাংলাদেশ একে অন্যের প্রতি সম্মান দেখিয়েছে। একে অন্যকে অ'নুধা'বন করেছে এবং সমর্থন দিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে তারা তাদের ঐতিহ্যগত বন্ধুত্বকে সামনে এগিয়ে নিয়েছে। একে অন্যের মূল উ'দ্বে'গে স'ক্রি'য়ভাবে সাড়া দিয়েছে।

চীন এবং বাংলাদেশ ব্যা'পক সম্ভাবনাময় বিআরআইয়ের পুরোপুরি সুবিধা নেয়া অ'ব্যাহ'ত রাখবে। এ উদ্যোগের যৌথ পদক্ষেপ অনুমোদন করবে। অনুমোদন করবে তাদের উন্নয়ন কৌ'শল। দুই দেশের উচ্চ মানের ল'ক্ষ্য, স্থি'তিশী'লতা এবং জনকেন্দ্রীকতাকে সামনে রেখে এগিয়ে যাবে দুই দেশ। তথ্যসূত্র : লেখক বাংলাদেশে নিয়োজিত চীনা রাষ্ট্রদূত। তার এ লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম গ্লোবাল টাইমসে।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে