নিউজ ডেস্ক : বিদ্যমান আইন অনুযায়ি ৫ কোটি টাকা মূল্যের দেওয়ানি মামলার নিষ্পত্তির এখতিয়ার রয়েছে হাইকোর্টের। তবে দেওয়ানি মামলা নিষ্পত্তিতে বর্তমান আইনে বিদ্যমান বিচারিক এখতিয়ার বাড়িয়ে সংশোধন আনা প্রস্তাবিত ‘দ্য সিভিল কোর্টস (সংশোধন) বিল-২০২১’ সংসদে পাসের অপেক্ষায় রয়েছে। সংসদে বিলটি পাস হলে ৫ কোটি টাকা মূল্যের দেওয়ানি মামলার নিষ্পত্তি করতে যেতে হবে না আর হাইকোর্টে। জেলা জজই নিষ্পত্তি করবেন মামলাটি।
বিলটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও যাচাই-বাছাই শেষে তা সংসদে পাসের জন্য উত্থাপন করতে আইন মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করেছে সংসদের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি।
বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) সকালে একাদশ জাতীয় সংসদের ‘আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি’র ১৪তম বৈঠক বিলটির উপর আলোচনা শেষে তা তা পাসের জন্য সংসদে উত্থাপনের সুপারিশ করা হয়।
কমিটির সভাপতি আবদুল মতিন খসরুর সভাপতিত্বে সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটির সদস্য আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক, মোস্তাফিজুর রহমান, মো. শামসুল হক টুকু, মো. শহীদুজ্জামান সরকার, শামীম হায়দার পাটোয়ারী, গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার এবং খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন অংশগ্রহণ করেন।
বৈঠকে প্রস্তাবিত ‘দ্য সিভিল কোর্টস (সংশোধন) বিল-২০২১’এর উপর বিস্তারিত আলোচনা শেষে বিলটির প্রয়োজনীয় সংশোধনীসহ সংসদে উত্থাপনের সুপারিশ করে কমিটি।
‘দ্য সিভিল কোর্টস (সংশোধন) বিল- ২০২১’ সংসদে পাশ হলে উক্ত আইনের আওতায় বিচারাধীন মামলার ক্ষেত্রে উদ্ভূত জটিলতা দূর করতেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ কমিটি। বৈঠকে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) দেওয়ানি মামলা বিচারের ক্ষেত্রে নিম্ন আদালতের বিচারকদের আর্থিক বিচারিক এখতিয়ার বাড়িয়ে আইন সংশোধন আনা ‘দ্য সিভিল কোর্টস (সংশোধন) বিল-২০২১’ সংসদে উত্থাপন করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। পরে করলে তা তিন দিনের মধ্যে পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দিতে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।
এ বছর ১১ জানুয়ারি সংশোধিত ‘দ্য সিভিল কোর্টস (সংশোধন) অ্যাক্ট, ২০২১’ এর খসড়া মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে উত্থাপন করা হলে তা নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। ওইদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার ভার্চুয়াল বৈঠকে খসড়া বিলটি অনুমোদন দেয়া হয়।
বিলটি সংশোধনের ফলে, একজন সহকারী জজ দুই লাখ টাকা মূল্যমানের (সম্পত্তি বা অর্থে যে অংকের টাকা নিয়ে বিরোধ) মামলা নিষ্পত্তি এখতিয়ার বাড়িয়ে ১৫ লাখ টাকা করা হয়েছে।
একইভাবে জ্যেষ্ঠ সহকারী জজের বিচারিক এখতিয়ার চার লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫ লাখ টাকা এবং আপিল শুনানির ক্ষেত্রে জেলা জজের এখতিয়ার পাঁচ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে পাঁচ কোটি টাকা করে বিলটির সংশোধন আনা হয়।
পাঁচ কোটি টাকার কম মূল্যমানের কোনো মামলায় যুগ্ম-জেলা জজ আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে কোনো আপিল বা কার্যক্রম হাইকোর্ট বিভাগে বিচারাধীন থাকলে তা জেলা জজ আদালতে স্থানান্তরের বিধানও রাখা হয়েছে বিলটিতে।
বর্তমানে পাঁচ কোটি টাকার কোনো আপিলের শুনানি হাইকোর্ট করলেও সংশোধিত আইনটি পাস হলে জেলা জজই সেই আপিল শুনানি করতে পারবেন বলে বিলে বিধান রাখা হয়েছে।
২০১৬ সালে আইন করে সিভিল কোর্টগুলোর বিচারিক এখতিয়ার বাড়ানো হলেও হাইকোর্ট তা স্থগিত করে দেয়। ফলে নতুন করে আইন সংশোধন করা হচ্ছে।
বিলে ২০১৬ সালের ওই সংশোধন রহিত করে একটি ধারা সংযোজন করা হয়েছে।
সরকার ২০১৬ সালেও টাকার অংকে বিচারিক এখতিয়ার একই পরিমাণ বাড়িয়ে আইন সংশোধন করেছিল। কিন্তু একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ওই গেজেটের কার্যকারিতা স্থগিত করে দেয়।
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে আইনমন্ত্রী ২০১৬ সালের সংশোধনী উচ্চ আদালতে বাতিল হওয়ার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, প্রশাসনিক জটিলতাসহ বিচারপ্রার্থী জনগণের অসুবিধার কথা মাথায় রেখে সরকার আইনটি সংশোধন আবশ্যক মনে করছে।-সময়নিউজ