সোমবার, ২৬ জুলাই, ২০২১, ০৮:২৩:৩২

আত্মীয়তার সুবাদে হেলেনার আ.লীগে পদ-পদবী লাভ

আত্মীয়তার সুবাদে হেলেনার আ.লীগে পদ-পদবী লাভ

আওয়ামী লীগের রাজনীতি না করেও জয়যাত্রা ফাউন্ডেশনের কর্ণধার হেলেনা জাহাঙ্গীরের পদ-পদবী মিলে অনেকটা আত্মীয়তার সুবাদে। কেন্দ্রীয় ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সখ্যতায় জেলা আওয়ামী লীগেও পদ পান তিনি।

সূত্র জানায়- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. আব্দুস সবুর খালাতো ভাই, কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মু. রুহুল আমিন তার জা (ভাসুরের স্ত্রী) এর বড় ভাই। এছাড়াও মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ার আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান কাইয়ূম হক তার আপন মামা।

কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার সদর উত্তর ইউনিয়নের কদমতলী গ্রামের ক্যাপ্টেন আব্দুল হক শরীফের মেয়ে হেলেনা আক্তার। দুই ভাই দুই বোনের মধ্যে দ্বিতীয় তিনি। ১৯৯০ সালে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ময়নামতি ইউনিয়নের চাঁদসার গ্রামের ঢাকাস্থ গার্মেন্টেস ব্যবসায়ী মো. জাহাঙ্গীর কবিরের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবন্ধ হয়ে হেলেনা জাহাঙ্গীর নামধারণ করেন। স্বামীর ব্যবসা দেখার পাশাপাশি নিজেও হয়ে উঠেন একজন নারী উদ্যোক্তা।

রাজধানীর অনেক নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে গঠিত সংগঠন ‘ইনার হুইল ক্লাব’ এর সদস্য হয়ে সখ্যতা গড়ে তোলেন বিভিন্ন রাজনৈতিক মহলে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ব্যবসায়ীক নেতা মরহুম আনিসুল হকের সাথে কাজ করে আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য বনে যান হেলেনা। মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে বাগিয়ে নেন কেন্দ্রীয় ও জেলা আওয়ামী লীগে পদ-পদবী। কুমিল্লা-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এড. আব্দুল মতিন খসরুর মৃত্যুতে আসনটি খালি হওয়ায় স্বামীর ঠিকানায় ওই আসন থেকে সংসদ নির্বাচন করার জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্রও সংগ্রহ করেছিলেন তিনি। যদিও স্বামী জাহাঙ্গীর কবির কোন রাজনীতি সংগঠনের সাথে যুক্ত নন।

বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মরহুম হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের সঙ্গে পৃথক ২টি ছবি সম্প্রতি ফেসবুকে ভাইরাল হয়। ছবি দুইটি সম্পর্কে হেলেনা জাহাঙ্গীর বলেন- ২০০০ সালে বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদের ছেলের বিয়েতে আমাদের সংগঠন ‘ইনার হুইল ক্লাব’ কে দাওয়াত করেছিলেন। সেই বিয়ের দাওয়াতে অতিথি হিসেবে গিয়ে ওই ছবি তোলা হয়েছিল। অপরদিকে ২০১৬ সালের নভেম্বরে আমার ছেলের বিয়েতে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ অতিথি হিসেবে আসার পর ছবি তুলি। তখন আমি কোন রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলাম না। ২০১৫ সালে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তৎকালীন আওয়ামী লীগ দলীয় মেয়রপ্রার্থী আনিসুল হকের সাথে কাজ করে আওয়ামী লীগের সাথে পথচলা শুরু করি। ২০১৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য এবং ২০২০ সালে কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির উপদেষ্টা হই।

এদিকে, নাম প্রকাশ না করা শর্তে হেলেনা জাহাঙ্গীরের স্বামীর বাড়ি স্থানীয়দের সাথে আলোচনা করে জানা যায়, গ্রামে তেমন না আসলেও স্বামী জাহাঙ্গীর কবির বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সহযোগিতা করে আসছেন। জয়যাত্রা ফাউন্ডেশনের নামে গত ২০১৮ সাল থেকে ২৫জন বৃদ্ধকে মাসিক এক হাজার টাকা করে ভাতা দিতেন হেলেনা জাহাঙ্গীর। প্রায় দেড় বছর তা পরিচালনা করার পর সেটিও বন্ধ হয়ে যায়। তবুও চলে ‘জয়যাত্রা ফাউন্ডেশন’ নামে সংগঠন।

হেলেনা জাহাঙ্গীর জানান- ‘জয়যাত্রা ফাউন্ডেশন দরিদ্র ভাতা, বয়স্ক ভাতা ও দেশের দুর্যোগে অসহায়দের পাশে দাঁড়ায়। প্রতিমাসে আমরা ৬০জনকে বৃদ্ধ ভাতা দিয়ে আসছি’।

যেটুকু জানতে পারলাম আপনি আপনার স্বামীর গ্রামে ২৫জনকে ভাতা দিতেন এবং তা এক বছর যাবৎ বন্ধ এমন প্রশ্নে তিনি বলেন- ‘সেখানে (স্বামীর গ্রামে) ৩০জনকে দিয়েছি, দাউদকান্দিতে ১০জন, রংপুরে ২০জনকে দিয়েছি। ফান্ড না থাকায় তা এখন বন্ধ আছে’।

কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মু. রুহুল আমিন জানান- আত্মীয়তার সুবাদে নয়, মূলত স্থানীয়দের অনেকের সুপারিশেই নেওয়া হয়েছিল হেলেনাকে। কারা সুপারিশ করেছিলেন এমন প্রশ্নে তিনি জানান- এতো কিছু মনে নেই, তবে আধা ঘন্টার জন্য আওয়ামী লীগ করেও অনেকে পদ-পদবী পায় আবার নির্বাচনও করতে আসে। যেটা অবশ্যই দুঃখজনক। -কালের কণ্ঠ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে