মঙ্গলবার, ১৪ মার্চ, ২০২৩, ০৯:২৬:৩১

‘শুধু টেস্ট দিয়ে হয়রানি করবেন না’

‘শুধু টেস্ট দিয়ে হয়রানি করবেন না’

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেছেন, ‘বড় ডাক্তার হয়ে অপ্রয়োজনীয় বড় বড় টেস্ট দিয়ে রোগীদের হয়রানি করবেন না। অসুস্থ ও অসৎ প্রতিযোগিতা পরিহার করতে হবে।’ তিনি  চিকিৎসাসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও সেবার মনোভাব নিয়ে দায়িত্বশীল আচরণ করার জন্যও জোর তাগিদ দেন। 

রাষ্ট্রপতি এবং বিশ্ববিদ্যালয় আচার্য আবদুল হামিদ ডাক্তার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিএসএমএমইউ’র সেবাদান পদ্ধতি সহজ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেও নির্দেশ দেন। রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বিএসএমএমইউ’র আউটডোরে প্রায়শই সকালে ল্যাবরেটরি বিভাগ খোলা হয় না বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এর ফলে রোগীদের রিপোর্ট সংগ্রহে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।’

প্রতিষ্ঠানের কাছে জনগণের প্রত্যাশা অনেক। জাতির পিতার নামে প্রতিষ্ঠিত এ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনও ধরণের অবহেলা, দায়িত্বহীনতা ও প্রশাসনিক দুর্বলতার সুযোগ নেই। চিকিৎসার নামে সাইনর্বোডসর্বস্ব ও দালান-নির্ভর সব ধরনের প্রতারণা বন্ধ করতে প্রশাসনিক উদ্যোগের সাথে চিকিৎসকদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান আবদুল হামিদ। 

তিনি বলেন, কিছুসংখ্যক অসাধু ও প্রতারক চিকিৎসকের জন্য যাতে চিকিৎসার নামে গোটা চিকিৎসক সমাজের সুনাম ক্ষুণ্ণ না হয়, সেদিকেও সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। পত্র-পত্রিকায় প্রায়ই দেখা যে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা হাসপাতাল ক্লিনিকগুলো রোগীদের জিম্মি করে ব্যবসা করে। অনেক সময় দালালদের খপ্পরে পড়েও রোগীরা, বিশেষ করে গ্রাম থেকে আসা রোগীরা চরম হয়রানির শিকার হন। 

বিএসএমএমইউ আচার্য বলেন, চিকিৎসা গবেষণাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার লক্ষ্যে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে Institutional Review Board  (ওজই) গঠন করা হয়েছে। দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। রাষ্ট্রপতি বলেন, আমাদের দেশের রোগব্যাধির ধরন উন্নত ও পশ্চিমা দেশগুলোর চেয়ে ভিন্ন। 

তাই আমাদের নিজস্ব গবেষণাকর্মই কেবলমাত্র পারবে এদেশের বৈচিত্র্যপূর্ণ রোগগুলোর কার্যকর ও সুলভ চিকিৎসা পদ্ধতি উদ্ভাবন করে এদেশের রোগীদের সত্যিকারের সমাধানটি সহজলভ্য করতে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “আমি আশা করি, আপনারা উদার মন নিয়ে জনসাধারণের মাঝে ‘ভালো’ ডাক্তারের পাশাপাশি ‘বড়’ মানুষ হিসেবেও বিবেচিত হবেন”।

বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ এই সমাবর্তনে ‘সমাবর্তন বক্তা’ হিসেবে বক্তব্য রাখেন ভারতীয় ইউনিভার্সিটি সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রাজ-বর্ধন আজাদ। বিশ্ববিদ্যালয় আচার্য তাকে ক্যাম্পাসের স্বাগত জানিয়ে বলেন, বিএসএমএমইউ ক্যাম্পাসে এর প্রধান বক্তা হিসেবে তার উপস্থিতি দেশের গণমানুষকে আরও ভালো সেবা প্রদানের দিকে স্নাতকদের নির্দেশনা দিবে। 

ডিগ্রিপ্রাপ্ত গবেষক, চিকিৎসক ও নার্সদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, মনে রাখবেন—ডিগ্রি অর্জনের পিছনে আপনাদের মা-বাবা, অভিভাবক ও শিক্ষকদের যেমন অবদান রয়েছে, তেমনি রয়েছে এ দেশের খেটে খাওয়া মানুষেরও বড় অবদান। তাই যাদের কারণে আপনাদের রুটিরুজি তাদের প্রতি আপনাদের আরো যত্নবান হওয়া উচিত।

তিনি বলেন, বেসরকারি খাতে থাকা হাসপাতাল-ক্লিনিক গুলোকে অবশ্যই গুণে-মানে সমৃদ্ধ হতে হবে। চিকিৎসার প্রয়োজনীয় সকল সুযোগ-সুবিধা থাকতে হবে। হাসপাতালে নার্সদের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতি বলেন, হাসপাতালে একজন রোগী সার্বক্ষণিক সেবা ও সাহচার্য পায় নার্সদের কাছ থেকে। একজন নার্সের সুন্দর ব্যবহার ও উৎসাহব্যঞ্জক কথা রোগীর হাসপাতালে অবস্থানকে আরামদায়ক ও তার আরোগ্য ত্বরান্বিত করে। 

তিনি নার্সদের রোগীর সেবায় আরও আন্তরিক হওয়ার তাগিদ দেন এবং একই সাথে নার্সদের কর্মপরিবেশ উন্নয়ন, উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা ও তাদের যথাযথ সামাজিক মর্যাদা প্রদানও জরুরি। দেশে অনেক স্বনামধন্য চিকিৎসক, চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান থাকা সত্ত্বেও প্রতি বছর প্রায় ২৫ লাখ বাংলাদেশি চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাচ্ছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, তাই আমাদের ভাবতে হবে আসল সমস্যাটা কোথায়। রোগীর আস্থা অর্জনে একজন ডাক্তারকে সবার আগে ভালো শ্রোতা হতে হবে। 

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, রোগী ও তাদের আত্মীয়-স্বজনদেরও মনে রাখতে হবে যে, ডাক্তাররা আল্লাহ বা ভগবান নন। তারাও মানুষ। তারা কেবল চিকিৎসা সেবা দিতে পারেন। তাই রোগীর কিছু হলেই ডাক্তারদের দায়ী করবেন আর হাসপাতাল ভাংচুর করবেন—এটাও কাম্য নয়। এজন্য ডাক্তার, রোগী ও আত্মীয়স্বজনদের আরও বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে।-বাসস 

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে