এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর যে ১৮৭ জন পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য চাকরিতে যোগদান করেননি, তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা শুরু হতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে এর জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে বিভিন্ন মামলার আসামি পুলিশ কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। তবে বেশির ভাগ কর্মকর্তা দেশের বাইরে চলে গেছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
এর মধ্যে বেশির ভাগ ভারতে পালিয়ে গেছেন। এ ছাড়া দুবাই ও আমেরিকায় পালিয়ে গেছেন কেউ কেউ। পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হত্যা মামলা হয়েছে ডিবির সাবেক প্রধান আলোচিত কর্মকর্তা হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে। তাঁর বিরুদ্ধে রাজধানী, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ৪৯টি হত্যা মামলা হয়েছে।
মামলার দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন সাবেক আইজিপি আবদুল্লাহ আল মামুন। তাঁর বিরুদ্ধে ৪১টি মামলা হয়েছে। তৃতীয় স্থানে ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান। তাঁর বিরুদ্ধে ৩৭টি মামলা হয়েছে।
মামলার মধ্যে বেশির ভাগই হত্যা মামলা। সব মিলিয়ে কর্মকর্তা, কনস্টেবলসহ অন্তত ১০২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে সাবেক পুলিশ কর্মকর্তারাও রয়েছেন। মামলার আসামি হিসেবে তাঁদের গ্রেপ্তারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, বৈষম্যবিরোধী অন্দোলনের সময় মামলায় অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
তাঁদের নির্দেশে আন্দোলন দমনে থাকা পুলিশ সদস্যরা গুলি করেন। নির্দেশদাতাদের দায় এড়ানোর সুযোগ নেই।
১৮৭ জনকে বরখাস্ত করার প্রক্রিয়া শুরু
যে ১৮৭ জন পুলিশ সদস্য ঘোষণা দেওয়ার পরও পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করেননি, তাঁদের বরখাস্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর অংশ হিসেবে তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। শিগগিরই বিভাগীয় মামলা করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর বলেন, যাঁরা যোগদান করেননি তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা প্রক্রিয়াধীন।
পুলিশ সূত্র জানায়, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের থানাগুলোতে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে কর্মবিরতিতে চলে যান পুলিশ সদস্যরা। এরপর পুলিশের আইজি ও ডিএমপি কমিশনার নিয়োগ দেওয়ার পর পুলিশ সদস্যদের কাজে যোগদানের নোটিশ দেওয়া হয় সদর দপ্তর থেকে। ১৮৭ জন ছাড়া অন্যরা যোগ দেন। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ১৩৬ জন কনস্টেবল ও ৫১ জন কর্মকর্তা যোগ দেননি। যোগ না দেওয়া কর্মকর্তাদের আর যোগ দেওয়ার সুযোগও নেই। পলাতক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মামলা রয়েছে।
১৩৬ জন কনস্টেবলের মধ্যে সরাসরি গুলি করার অভিযোগও রয়েছে। সাবেক ও পুলিশে কর্মরত এমন অন্তত ১০২ জন হত্যা মামলার আসামি রয়েছেন। তাঁদের গ্রেপ্তার করা হবে। এরই মধ্যে সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক ও সদ্য সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
এ ছাড়া ডিবির ডিসি মশিউর রহমান, ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবদুল্লাহিল কাফী, যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান, সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানার সাবেক ওসি মঈন উদ্দিন শিপন ও এসি ইফতেখারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পলাতকদের বিরুদ্ধে যত মামলা
পলাতকদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচনায় রয়েছেন ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তাঁর বিরুদ্ধে রাজধানী, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ৪৯টি মামলা হয়েছে। গত মধ্য অগস্টে হারুন অর রশীদ আমেরিকায় চলে গেছেন বলে বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে। তবে তিনি অজ্ঞাত স্থান থেকে সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন।
পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, হারুন অর রশীদকে গ্রেপ্তারের জন্য সম্ভাব্য কয়েকটি স্থানে অভিযান চালানো হয়েছে। তবে তাঁকে পাওয়া যায়নি। গত ২ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় এক ব্যবসায়ীর কাছে চাঁদা দাবি ও মারধরের অভিযোগে হারুন অর রশীদ ও শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা কাউছার আহম্মেদ পলাশসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
ফতুল্লা থানার ওসি শরিফুল ইসলাম গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে। তবে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই আসামি (হারুন) পলাতক রয়েছেন।
অন্যদিকে সদ্য সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ৩৭টি মামলা করা হয়েছে। তিনিও পলাতক। তবে তিনি কোথায় আছেন সে বিষয়ে নিশ্চিত করতে পারেননি কেউ।
এ ছাড়া ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকারের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ২৯টি। এসবির সাবেক প্রধান মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ঢাকায় ১১টি মামলা করা হয়েছে। মনিরুল ইসলাম ভারতে পালিয়ে গেছেন বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা রয়েছে।
এ ছাড়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে ৪১টি, শহীদুল হকের বিরুদ্ধে সাতটি, বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে তিনটি, সিআইডির মোহাম্মদ আলী মিয়ার বিরুদ্ধে দুটি, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ব্যারিস্টার হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে পাঁচটি, সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার বিরুদ্ধে দুটি, ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার খন্দকার মহিদ উদ্দিনের বিরুদ্ধে দুটি, ঢাকা রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি সৈয়দ নূরুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুটি, সিটিটিসির অতিরিক্ত কমিশনার আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে পাঁচটি, অতিরিক্ত ডিআইজি প্রলয় কুমার জোয়ার্দারের বিরুদ্ধে পাঁচটি এবং ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে আটটি হত্যা মামলা হয়েছে।
এর বাইরে ডিএমপির সাবেক কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক, সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি জামিল আহমেদ, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন, পুলিশ সদর দপ্তরের বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া অতিরিক্ত আইজি লুত্ফুল কবীর, সাবেক ডিআইজি খালিদ হাসান ও রিপন সরাবের বিরুদ্ধে একটি করে মামলা হয়েছে। এসব মামলা হয়েছে ৫ আগস্ট ও এর আগে ছাত্র-জনতার ওপর পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনায়।