বুধবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১১:১৭:৩৬

কারাগারে প্রেরণ ভারতে গ্রেপ্তার ৫ আ.লীগ নেতাকে

কারাগারে প্রেরণ ভারতে গ্রেপ্তার ৫ আ.লীগ নেতাকে

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক: অবৈধভাবে অনুপ্রবেশসহ একাধিক অভিযোগে অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খানসহ ৫ আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতাকে কারাগারে পাঠিয়েছে মেঘালয় রাজ্যের একটি আদালত। গত রবিবার (৮ ডিসেম্বর) ভোররাতে কলকাতা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গতকাল মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পশ্চিম জৈন্তিয়া হিলস (পাহাড়) জেলার এমলারিয়াং বিচারক আদালত তাদেরকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

পাঁচ জনের মধ্যে রয়েছেন- সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিলেট জেলা পরিষদের অপসারিত সাবেক চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন খান, সিলেট মহানগর যুবলীগের সভাপতি আলম খান মুক্তি, সিলেট মহানগর যুবলীগের সহসভাপতি আব্দুল লতিফ রিপন, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য ইলিয়াছ আহমদ জুয়েল এবং সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার সিংচাপইড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ছাতক উপজেলা যুবলীগ নেতা সাহাব উদ্দিন সাহেল।

ইমিগ্রেশনের দায়িত্বে থাকা জোয়াই পুলিশ স্টেশনের সাব ইন্সপেক্টর জে কে মাজাও এসব তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘বাংলাদেশের ছয় নাগরিকসহ অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে ডাউকি পুলিশ স্টেশনে গত ১৬ আগস্ট একজন ট্রাক ড্রাইভার লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। ১৯ আগস্ট মামলা রুজু করা হয়। এই মামলায় গত রবিবার ৫ জনকে কলকাতা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ডাউকি থানায় তাদের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার চারটি ধারা এবং বিদেশি আইনের ১৪ নম্বর ধারায় অভিযোগ রয়েছে।

এর ভিত্তিতে তাদেরকে গতকাল মঙ্গলবার আমলারিয়াং জুডিশিয়াল আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাদেরকে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।’ 

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতে বলেন, ‘এজাহারে কারো নাম উল্লেখ না থাকলেও তদন্ত সাপেক্ষে এই ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ৪ জন পলাতক রয়েছেন। পরে আদালত শুনানি শেষে গ্রেপ্তারকৃতদের জোয়াই কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন।

জোয়াই আদালতের আইনজীবী রাম সিং জানান, তাদের বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশ, ছিনতাই, জাতীয় সড়কে ডাকাতি, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট, ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত ও মারধরের অভিযোগ আনা হয়েছে।  

জোয়াই অবস্থানরত সিলেটের একজন কয়লা ব্যবসায়ী জানান, পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বিধাননগর পৌরসংস্থার বাগুইআটি এলাকার একটি বাসা থেকে রবিবার সকালে ৫ জনকে স্থানীয় পুলিশের সহযোগিতায় গ্রেপ্তার করে মেঘালয় পুলিশ। বাগুইআটি কলকাতা মেট্রোপলিটন উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কেএমডিএ) আওতাধীন এলাকার একটি অংশ। রবিবার সকালে বাগুইআটির একটি ফ্ল্যাট বাড়ি থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে দুপুরে বারাসাত আদালতে নেওয়া হয়। তাদেরকে সোমবার রাতে জোয়াই থানা হেফাজতে নিয়ে আসা হয়।

মামলার পেছনের কারণ প্রসঙ্গে কলকাতায় অবস্থান করা সিলেট আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অল্প কয়েকটি স্থল সীমান্ত পারাপারের মধ্যে ডাউকি-তামাবিল অন্যতম। এদিক মূলত বাংলাদেশে কয়লা ও পাথর পরিবহনে ব্যবহৃত হয়। ডাউকি এলাকায় পাথর ব্যবসাকে কেন্দ্র করে স্থানীয়দের সঙ্গে তাদের কারো কারো বিরোধ রয়েছে বলে শুনেছি। যে কারণে সংক্ষুব্ধ হয়ে কেউ এ মামলার নেপথ্যে থাকতে পারে।’

ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা সিলেট সীমান্তের বিভিন্ন এলাকা দিয়ে মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলং যান। অভিযুক্তরাও একই সময়ে শিলং যান। শিলং শহরে তারা প্রথমে পুলিশ বাজার এলাকার একটি হোটেলে অবস্থান নেন। পরে শহরের একটি এলাকায় বাসা ভাড়া নেন। ডিসেম্বরে শীতের প্রকোপ বাড়ায় গত ৫ নভেম্বর তারা শিলং থেকে কলকাতায় স্থানান্তরিত হন।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, ‘তারা ভারতে প্রবেশের পর শিলংয়ের লাইমক্রা পুলিশ স্টেশনে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দেন এবং ভারতে অবস্থানের অনুমোদন পান। হয়রানির উদ্দেশে তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ অনুপ্রবেশ, ছিনতাই ও গাড়ি ভাঙচুরের মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে।’

জোয়াই আদালতে আসামীদের পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃত সবাই রাজনৈতিক নেতা। বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় তারা অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করতে বাধ্য হয়েছেন। আইনি প্রক্রিয়ায় আশা করি তারা শিগগির মুক্তি পাবেন।’

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে