বুধবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১১:৫৯:৩৩

এবার মমতার ‘ললিপপের’ জবাবে রিজভীর ‘আমলকি’!

এবার মমতার ‘ললিপপের’ জবাবে রিজভীর ‘আমলকি’!

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক: ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ-ভারতের ‘সম্পর্ক’ অনেকটা ফিকে হয়ে গেছে। হাসিনা-পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই ভারত অভিযোগ তুলেছে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন হচ্ছে। বিভিন্ন ইস্যুতে দুদেশের ঊর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দ কোনো না কোনো মন্তব্য করেই যাচ্ছেন। এটা অনেকটা রোজকার ‘দায়িত্ব’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

সম্প্রতি বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর প্রাক্তন এক সদস্য বলেছিলেন, চার দিনে কলকাতা দখল নিতে পারেন তারা। আবার বিএনপিনেতা রুহুল কবীর রিজভী সম্প্রতি বলছেন, বাংলা বিহার উড়িষ্যা ফেরত দেওয়ার কথা।

সোমবার (৯ ডিসেম্বর) বিধানসভায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ইস্যুতে পাল্টা মন্তব্য করলেন। বলেন, ‘‘আপনারা বলছেন যে আপনারা (বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা) দখল করে নেবেন। সেই ক্ষমতা নেই আপনাদের। আর আমরা বসে বসে ললিপপ খাব নাকি? সেটা মোটেও ভাববেন না। ভারতবর্ষ অখণ্ড। সকলের সঙ্গে অখণ্ড আমরা। বাংলাদেশের রাজনীতির সঙ্গে আমাদের কোনো যোগ নেই।”

এর জবাবে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) বলেছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাকি গোস্যা হয়েছে, কষ্ট পেয়েছেন। তারা বলছেন, বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যা দখল করতে এলে আমরা কি ললিপপ খাব? আমি বলে রাখি, আপনারা চট্টগ্রামের দিকে তাকালে তাহলে কি আমরা আমলকি চুষব?’’

তবে, বাংলাদেশ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী দলীয় বিধায়কদের মন্তব্য করা থেকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘‘কোনো অতিরিক্ত মন্তব্য করবেন না, যাতে প্ররোচনার পরিস্থিতি তৈরি হয়। একই বার্তা রাজ্যবাসীকেও।’’

এর আগে, বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনে যোগ দিয়ে মমতা বাংলাদেশে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনী মোতায়েন করার আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ‘নিরাপত্তা’ নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন।

বাংলাদেশে ভারতীয়রা আক্রান্ত হলে তার সরকার তা সহ্য করবে না বলেও জানিয়েছেন মমতা। তিনি বলেছেন, ‘‘যদি বাংলাদেশে ভারতীয়রা আক্রান্ত হয়, তবে আমরা তা সহ্য করব না। আমরা তাদের সেখান থেকে ফিরিয়ে আনতে পারি।’’

এর পাল্টা জবাবে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন, ‘‘বাংলাদেশে নয়, বরং ভারতে শান্তিরক্ষী মোতায়েন দরকার।’’ 

আসাম, কাশ্মীর, মনিপুর, পাঞ্জাবে সংখ্যালঘুদের ওপর ভারত নির্যাতন চালাচ্ছে উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘‘কাশ্মীর মনিপুর আসামে শান্তিরক্ষী নিয়োগ করে আগে নিজেদের সামলানোর আহ্বান ভারতের প্রতি। ধর্মীয় জনগোষ্ঠী মুসলিমরা প্রতিনিয়ত নির্যাতনের শিকার হচ্ছে ভারতে। যারা নিজের দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে তাদের বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলার কোনো অধিকার নেই। বাংলাদেশে কোনো বিভাজন নেই। বিভাজনের চেষ্টা করছে দিল্লী থেকে। বাংলাদেশের মানুষ কখনও বিভাজনের চেষ্টা মানেনি। ভারতের সুদূর প্রসারী আগ্রাসন চালানোর চেষ্টা সফল হবে না।’’

ভারতের রাজনীতিতে বাংলাদেশ এক জ্বলন্ত ইস্যু হয়ে উঠেছে। ঝাড়খণ্ড থেকে শুরু করে পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বিহার, আসাম থেকে শুরু করে ত্রিপুরা—সর্বত্রই বাংলাদেশ ইস্যুকে পুঁজি করে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে রাজ্যগুলোর স্থানীয় ও ভারতের জাতীয় পর্যায়ের রাজনৈতিক দলগুলো।

কিছুদিন আগেই ঝাড়খণ্ড বিধানসভা নির্বাচনের আগে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি সেখানে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী ইস্যু ব্যাপকভাবে প্রচার করেছে। তবে কোনো ফায়দা হয়নি। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই এবার বিহারে বিজেপির এক মন্ত্রী বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী ইস্যু তুলেছেন।

২০২৬ সালে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রতিবেশী বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহকে রাজনৈতিক পুঁজি করার চেষ্টা করছে বিজেপি। দলটির স্থানীয় শীর্ষ নেতারা একের পর এক বাংলাদেশ নিয়ে কূটনৈতিক ভব্যতার সীমা পেরিয়ে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সাবেক সভাপতি ও রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর মুখ যেন লাগামছাড়া। একের পর এক বেফাঁস মন্তব্য করে যাচ্ছেন তিনি।

তবে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস বিজেপির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ইস্যুকে রাজনৈতিক পুঁজি করার অভিযোগ এনেছে। দলের জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি এই অভিযোগ করেছেন।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে