এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক: বাংলাদেশ সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ ব্রহ্মচারীর জামিন শুনানি এগিয়ে আনার জন্য চট্টগ্রামে এলেন সুপ্রিম কোর্টের বিজ্ঞ আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ। করেছেন তিনটি আবেদন। কিন্তু ওকালতনামা না থাকায় আদালত সব আবেদন নামঞ্জুর করেছেন।
বুধবার (১১ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক সাইফুল ইসলাম উভয় পক্ষের শুনানি শেষে এই আদেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের সহকারী সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট মো. রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী।
পিপি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের বিজ্ঞ আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ আসামিপক্ষে তিনটি আবেদন করেছেন আদালতে। এর মধ্যে একটি চিন্ময়ের মামলা শুনানি করার জন্য, আরেকটি জামিন শুনানির তারিখ ২ জানুয়ারি থেকে এগিয়ে আনার জন্য। অপর আবেদনটি করেছেন নথি উপস্থাপনের জন্য।
রায়হানুল ওয়াজেদ বলেন, চট্টগ্রাম আদালতে মামলার পক্ষে যেকোনো পিটিশন দায়েরের জন্য চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য এমন কারোর ওকালতনামা লাগবে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের বিজ্ঞ আইনজীবীর সাথে চট্টগ্রাম বারেরও কোনো আইনজীবী ছিলেন না, আসামিরপক্ষে ওকালতনামা নেই এবং ফাইলিং আইনজীবীরও লিখিত অনুমতি নেই। সেহেতু আদালত তার আবেদন ‘নট মেইন্টেইনেবল’ বলে নামঞ্জুর করেছেন।
আদালত সূত্র জানায়, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রবীন্দ্র ঘোষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার বেলা ১১টায় চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে শুনানি শুরু হয়। শুনানির শুরুতে রবীন্দ্র ঘোষ বলেন, আমি জানি এই বারের একজন আইনজীবী (সাইফুল ইসলাম আলিফ) মারা গেছেন। এটা বলার সঙ্গে সঙ্গেই খুনের শিকার আইনজীবী আলিফকে শহীদ না বলায় এজলাসে উপস্থিত আইনজীবীরা সবাই একসাথে প্রতিবাদ করেন। এ সময় এজলাসে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়।
পরবর্তী সময়ে আদালত অ্যাডভোকেট রবীন্দ্র ঘোষের কাছে জানতে চান, তার পক্ষে চট্টগ্রাম বারের কোনো আইনজীবীর ওকালতনামা আছে কি না বা মামলা পরিচালনার জন্য আসামিপক্ষের আইনজীবীদের অনুমতি আছে কি না। এ সময় তিনি নেই বলে জানালে আদালত আইন মেইনটেইন করে তাকে আসতে বলেন।
শুনানি শেষে আদালত প্রাঙ্গণে বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট কফিল উদ্দিন বলেন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আদালতকে বলেছেন, চিন্ময়ের মামলাটির তারিখ এগিয়ে আনার জন্য এবং তিনি নথি উপস্থাপন করবেন। আমরা বলেছি, ওনার এ ধরনের আবেদন দেওয়ার আইনগত অধিকার নাই। কারণ ওনার কোনো ওকালতনামা নেই এবং যিনি এই মামলা ফাইল করেছেন তার পক্ষ থেকে তাকে কোনো পাওয়ার দেওয়া হয়নি।
কফিল উদ্দিন বলেন, শুনানি করার জন্য অথবা নথি উপস্থাপনের জন্য অবশ্যই চট্টগ্রাম বারের একজন আইনজীবীর ওকালতনামা দিতে হবে অথবা এনগেজড কোনো আইনজীবীকে বলতে হবে যে, সুপ্রিম কোর্ট থেকে যিনি এসেছেন তাকে তিনি ক্ষমতা দিয়েছেন। তাই আদালত এটা রিজেক্ট করে দিয়েছেন।
এদিকে চিন্ময়ের পক্ষে সুপ্রিম কোর্ট থেকে আইনজীবী আসার খবরে বুধবার বেলা ১১টা থেকে আদালত চত্বরে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়। সকাল থেকে আদালতের প্রবেশমুখ থেকে শুরু করে আশপাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি ছিল অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশি।
গত ৩১ অক্টোবর চট্টগ্রাম মহানগরের চান্দগাঁও মোহরা ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ খান বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ ব্রহ্মচারীসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা করেন। এ মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরে মামলার বাদী ফিরোজ খানকে বিএনপি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
!এরপর ২৫ নভেম্বর চট্টগ্রামে ফেরার পথে শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে বহিষ্কৃত ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ ব্রক্ষ্মচারীকে তুলে নিয়ে যায় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পরদিন তাকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। ওই দিন কোতোয়ালী থানায় হওয়া রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে তোলা হলে আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করেন। আর এ সময় চিন্ময় কৃষ্ণ ব্রহ্মচারীর ভক্ত ইসকন সদস্যরা আদালত চত্বরে কুপিয়ে তরুণ আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে কুপিয়ে হত্যা করে।
এ ঘটনায় চট্টগ্রাম বারের আইনজীবীরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। পরে গত ৩ ডিসেম্বর ফের জামিন শুনানি হলে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ চিন্ময় কৃষ্ণের পক্ষে কোনো আইনজীবী না থাকায় শুনানি পিছিয়ে আগামী ২ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন।