অবিশ্বাস্য ঐতিহাসিক ক্যাচ
অগ্নি পান্ডে, বেঙ্গালুরু: ইতিহাসে তিনি সহজেই ঢুকে পড়তে পারেন। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে এখনও পর্যন্ত যে সব ঐতিহাসিক ক্যাচের উল্লেখ রয়েছে তার মধ্যে সহজে জায়গা করে নিতে পারেন আমাদের বঙ্গসন্তান। অবিশ্বাস্য! অবর্ণনীয়! অননুকরণীয়! কোনও বিশ্লেষণেই ব্যাখ্যা করা যায় না। করার কথাও নয়। এমন ক্যাচ সচরাচর দেখা তো যায় না। তা–ও আবার ধরছেন এক ভারতীয় ক্রিকেটার।
উইকেটকিপারকে কখনও ফরোয়ার্ড শটলেগে উড়ে গিয়ে ঝাঁপিয়ে ক্যাচ নিতে আগে কখনও কেউ কি দেখেছেন? সাধারণত উইকেটকিপার তাঁর ডানদিক কিংবা বাঁদিকে অনেকটা ঝাঁপিয়ে ক্যাচ নিয়ে থাকেন। এমনকী সামনে ঝাঁপিয়েও ক্যাচ নিতে দেখা যায়। কিন্তু একজন উইকেটকিপারকে নিজের জায়গা থেকে উড়ে গিয়ে ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে ক্যাচ নিতে দেখা বিরলতম দৃশ্যের মধ্যেই পড়ে।
এমনই অসাধ্যসাধন কাণ্ড করে ফেললেন ভারতের উইকেটকিপার ঋদ্ধিমান সাহা। তা–ও আবার কার ক্যাচ? যাঁর ব্যাটে আগুনের স্ফুলিঙ্গ সবসময় জ্বলছেই। শততম টেস্ট খেলতে নামা সেই এবি ডি’ভিলিয়ার্সের। তিনি শততম টেস্টে শতরানের দিকে এগোচ্ছেন। ঠিক ১৫ রান দূরে তাঁকে থামিয়ে দিলেন ঋদ্ধিমান। রবীন্দ্র জাদেজার বলে এবি–র ব্যাট–প্যাড ক্যাচ উঠল। উড়লেন ঋদ্ধি। ফরোয়ার্ড শট লেগে যেখানে ফিল্ডার দাঁড়ায় সেখানে বাঁ হাত বাড়িয়ে দস্তানাবন্দী করলেন অবিশ্বাস্য ক্ষিপ্রতায়! ম্যাচের মোড় আগে থেকেই ঘুরছিল ভারতের দিকে। ঋদ্ধির ক্যাচ প্রথম দিনেই ম্যাচের রাশ ভারতের হাতে এনে দিল। শাবাশ ঋদ্ধি। টেস্টের তুখোড় বিজ্ঞাপন এই ক্যাচ।
বাকিটা তো সেই নয়া টেস্টের পুরনো স্ক্রিপ্ট। সেই জোড়া স্পিনের দাপটে কুপোকাত দক্ষিণ আফ্রিকা। সেই অশ্বিন–জাদেজার যুগলবন্দী। দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিন সকাল থেকেই বেঙ্গালুরু আকাশ পরিষ্কার। কিন্তু স্যাঁতসেঁতে ভাব থাকার জন্য ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলি বিপক্ষকেই প্রথমে ব্যাট করতে পাঠান খানিকটা চমকে দিয়েই। পরিবেশ, আবহাওয়া দেখার পরই ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট ঠিক করে লেগ স্পিনার অমিত মিশ্রকে বসিয়ে সিম বোলার স্টুয়ার্ট বিনিকে এগারোয় রাখা হবে। ইশান্ত যে ফিরছেন সেটা ঠিকই ছিল। বাদ গেলেন উমেশ যাদব। পাঠিয়ে দেওয়া হল রনজি খেলতেও।
শুরু থেকেই ভারতীয় পেসারদের আঁটোসাঁটো বোলিংয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানরা চাপে পড়েন। তারপর শুরু হয় অশ্বিন–ম্যাজিক। এক ওভারে পরপর দুটো উইকেট তুলে নিয়ে প্রথমেই প্রোটিয়াদের ব্যাকফুটে ঠেলে দেন তামিল ইঞ্জিনিয়ার। সত্যি, অশ্বিনকে খেলতে দক্ষিণিআফ্রিকার ব্যাটসম্যানদের নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে। কিছুতেই অশ্বিনের স্পিন ধরতে পারছেন না হাসিম আমলারা। মোহালি থেকে অশ্বিনকে যোগ্য সঙ্গত দিচ্ছেন ‘স্যর জাদেজা’। যেন জুটিতে লুটি।
দেশের হয়ে শততম টেস্ট খেলতে নামা এবি ডি’ভিলিয়ার্সের ওপর ভরসা ছিল। তিনি টানবেন দলকে। ভরসা ছিল অধিনায়ক হাসিম আমলার ওপরেও। কিন্তু ভারত সফরে আমলার ব্যাট এখনও পর্যন্ত জ্বলে ওঠেনি। শনিবার চিন্নাস্বামীতে বরুণ অ্যারনের যে ডেলিভারিতে বোল্ড হলেন প্রোটিয়া অধিনায়ক তা স্বপ্নের বটেই। বল সিমে পড়ে কাট করল। ছিটকে দিল আমলার অফস্টাম্প। কিছুই করার ছিল না আমলার। ওপেনার এলগারকে নিয়ে দলকে টানার চেষ্টা করছিলেন ডি’ভিলিয়ার্স। কিন্তু লাঞ্চের পরে ‘স্যর’ জাদেজা যখন ভয়ঙ্কর হয়ে উঠলেন তখন এলগারের ফিরে যাওয়ারই কথা। যেতেও হল। এমনিতেই লাঞ্চের আগে তিন উইকেট খুইয়ে চাপে ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। লাঞ্চের পর একদিকে দলকে ভরসা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন ডি’ভিলিয়ার্স। তিনিও পারলেন না অশ্বিন–জাদেজা জুটির সামনে। এই দুই স্পিনার একাই খেয়ে ফেললেন প্রোটিয়াদের। অবশ্য ডি’ভিলিয়ার্স তার মধ্যে ভারতের বিরুদ্ধে টেস্টে হাজার রান করে ফেলেন। চা–বিরতির কিছুক্ষণের মধ্যেই গুটিয়ে গেল দক্ষিণে আফ্রিকা ২১৪ রানে। বিরাট–বাহিনীর চোখে আবার টেস্ট জয়ের স্বপ্ন। পিচ থেকে তেমন টার্ন না পেলেও শুধু জায়গায় বল রেখে, ফ্লাইটের হেরফের করে দুই ভারতীয় স্পিনারের বাজিমাত। অশ্বিন ধারাবাহিক এদিনও ৭০ রানে ৪ উইকেট নিয়ে। জাদেজা তো মোহালির ফর্ম ধরে রেখেছেন ৫০ রানে ৪ উইকেট নিয়ে। দিনের শেষে ভারত বিনা উইকেটে ৮০। মুরলী বিজয়ের ২১ রানের মাথায় সহজ ক্যাচ ফেলে দিয়েছেন ইমরান তাহির। তারপর বিজয় (২৮) ও ধাওয়ান (৪৫) আর কোনও সুযোগ না দিয়ে ব্যাট করছেন। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী দু’দিন বৃষ্টি না হলে প্রথম দিনেই অ্যাডভান্টেজ ভারত।
১৫ নভেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/পিবি/পিপি