তবুও নাসিরের মন খারাপ
স্পোর্টস ডেস্ক: দিন দিনই বাংলাদেশ ক্রিকেটে নাসির হোসেন নিজেকে অপরিহার্য করে গড়ে তুলছেন। শেষ দিকে তার ব্যাট এবং বর্তমানে বল হাতে দারুণ কারিশমা তাকে নিয়ে যাচ্ছে অনন্য উচ্চতায়। মাঠে-মাঠের বাইরে ঠাট্টা-রসিকতায় মাতিয়ে রাখা নাসিরের সবসময়েই আত্মবিশ্বাসী মনোভাব। প্রচণ্ড চাপেও নির্ভার থাকার আশ্চর্য ক্ষমতা রয়েছে তার। নিজেকে প্রতিনিয়ত তুলে ধরছেন দুর্দান্ত এক অলরাউন্ডার হিসেবে। এরই প্রতিফলন র্যাঙ্কিংয়েও। অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে তাঁর বিরাট উল্লম্ফন। বছরের শুরুতেও ওয়ানডের অলরাউন্ডার র্যাঙ্কিংয়ে ছিলেন ৮১ নম্বরে। সর্বশেষ র্যাংঙ্কিংয়ে নাসির চলে এসেছেন ১৪ নম্বরে।
অথচ এমন একটা সুখবরেও নাসিরের মুখে ঝুলছে তালা! আগ্রহ নিয়ে শুধু খবরটাই শুনতে চাইলেন। শুনে-টুনে তোতা পাখির মতো বুলিটাই আওড়ালেন, ‘এ মুহূর্তে কিছু বলতে পারব না ভাই!’
গত বছরের শেষ দিকে দল থেকে বাদ পড়ার পর এ বছরটা গেল দুর্দান্ত!
ব্যাট হাতে অবশ্য বড় ইনিংস আসেনি এ বছর। ১৫ ম্যাচে করেছেন ১৮৭ রান। যদিও অনুযোগের সুরে বলতেই পারেন, ‘ব্যাটিংয়ের সুযোগ আর পেলাম কোথায়!’ সুযোগ পেয়েছেন মাত্র ৯ ইনিংসে। এপ্রিলে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে ভাগ্যে জুটেছিল মাত্র ১টি বল! সুযোগ মিললেও ব্যাটিং অর্ডারে একটু নিচে নামেন বলে বড় ইনিংস খেলাটা কঠিন। তারপরও দলের সংকটে ভরসাই জোগায় তাঁর ব্যাট।
ব্যাটিংয়ে অনেক ‘যদি-কিন্তু’ থাকলেও বোলিংয়ে পেয়েছেন যথেষ্ট সুযোগ। সে সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন নিয়মিতই। অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন ঠিকঠাক। বল আগে করতে হতো কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্যই। তবে এ বছর সিরিজগুলোয় ‘চালিয়ে যাওয়ার’ জন্য নয়, অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা নাসিরকে ব্যবহার করেছেন ‘বিশেষজ্ঞ’ বোলার হিসেবেই। মাশরাফি তাঁকে প্রায়ই দলের অন্যতম সেরা অফ স্পিনার হিসেবে স্বীকৃতি দেন। বিনয়ী নাসির অবশ্য তা মনে করেন না; বরং রসিকতার সুরে বলেন, ‘যে বনে বাঘ নেই, সেখানে বিড়ালই বাঘ!’ তবে দলের প্রয়োজনে যেকোনো ভূমিকায় নামতে তিনি প্রস্তুত। জিম্বাবুয়ে সিরিজের আগে বলেছিলেন, ‘দল যেভাবে চায়, সেভাবেই খেলার চেষ্টা করি।’নাসির হোসেন
পুরো ক্যারিয়ারে তাঁর উইকেট ১৯টি। এর ১৬টিই এ বছরের শিকার। ক্যারিয়ারের ৮৪ শতাংশ উইকেটই এসেছে এ বছর। বল হাতে কতটা দুর্দান্ত হয়ে উঠছেন নাসির, এই পরিসংখ্যানেই তা পরিষ্কার।
আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই দলের অন্যতম সেরা ফিল্ডার হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছেন। এ বছরও ধরে রেখেছেন নিজের ‘সুনাম’। ১৪ ক্যাচে বাংলাদেশের ফিল্ডারদের মধ্যে তিনিই সবার ওপরে। হাশিম আমলা, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও ডেভিড মিলারের সঙ্গে বিশ্বে তিন নম্বরে। ২০১১-এর ১৪ আগস্ট অভিষেকের পর এ পর্যন্ত বাংলাদেশের ফিল্ডারদের মধ্যে নাসিরই সবচেয়ে বেশি ক্যাচ ধরেছেন, ৩৩টি। দুই থাকা মাহমুদউল্লাহর এ সময়ে ক্যাচ ২১টি।
অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে এ বছরও যথারীতি সবার ওপরে সাকিব আল হাসান। ১৬ ওয়ানডেতে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের রান ৪২১, উইকেট ২৪টি। ক্যাচ নিয়েছেন ৩টি। বাংলাদেশ দলে এরপরই নাসির—রান ১৮৭, উইকেট ১৬, ক্যাচ ১৪।
১৫ নভেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/রাসেল/মাহমুদ