মিরপুর স্টেডিয়ামে এক রাজকীয় প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখলেন আমির
স্পোর্টস ডেস্ক: ২০১০ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে চলাকালীন টেস্টে তৎকালীন পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান বাট ও আরেক বোলার মোহাম্মদ আসিফের সাথে স্পট ফিক্সিংয়ে জড়ানোর অভিযোগ উঠে ফাস্ট বোলার মোহাম্মদ আমিরে। ফলাফল, ৫ বছরের জন্য নির্বাসিত হলেন ক্রিকেট থেকে। স্পট ফিক্সিং কেলেঙ্কারি তাঁর সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ারের অনেকটা সময় কেড়ে নিয়েছে। সর্বোচ্চ পরিসরের ক্রিকেটে তিনি ছিলেন না অনেক দিনই। দীর্ঘ পাঁচ বছর পর আন্তর্জাতিক আবহে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) মাধ্যমে মাঠে নেমে রাজকীয় এক প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখলেন আমির। দারুণ উত্তেজনা ও নাটকীয়তা পরিপূর্ণ এক ম্যাচ দিয়ে আজ মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে পর্দা উঠলো বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) তৃতীয় আসরের। এই আসরে মোহাম্মদ আমির খেলেন চিটাগাং ভাইকিংসের হয়ে। মাঠে নামার আগেই চিটাগাং কর্তৃপক্ষকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছিলেন আমির। আর মাঠে শুরুটা করতে চেয়েছিলেন সেটাই করেছেন আমির। নিজের প্রথম ওভারে ধারাবাহিকভাবে গুড লেংথে বল বল ফেলে রংপুরের ওপেনার লেন্ডল সিমন্সকে ভীষণ চাপে রাখলেন মোহাম্মদ আমির। সৌম্যর বাউন্ডারির পর এক সিঙ্গলে প্রান্ত বদল হলো। আমিরের সঙ্গে ৭ বলের লড়াই শেষে অষ্টম বলে হার মানলেন সিমন্স। প্রতিরোধ ভেঙে পড়ল তাঁর। মিড অফে তামিম ইকবালের হাতে সহজ ক্যাচ দিয়ে আমিরকে উপহার দিলেন বিপিএলে তাঁর প্রথম উইকেট।
পরের বলেই সৌম্যর ‘প্রাইস’ উইকেটটা হাতে পেয়ে গেলেন আমির। ‘হাতে পেয়ে গেলেন’ কথাটা বলার কারণ আমির তাঁর দ্বিতীয় উইকেটটি ‘উপহার’ হিসেবে পেলেন আম্পায়ারের কাছ থেকে। এলবির শিকার হয়ে সৌম্য ফিরলেন ঠিকই, কিন্তু টেলিভিশন রিপ্লেতে দেখা গেল বল লেগ স্টাম্পের বাইরেই চলে যেত।
বিরস বদনে সৌম্য ফিরলেও উদ্বাহু উল্লাসে ফেটে পড়লেন পাকিস্তানের এই বাঁ হাতি পেসার! প্রতিপক্ষের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান তো বটেই, এ আনন্দ নিজেকে প্রমাণ করারও। বিপিএল শুরুর আগে পাকিস্তানের এক সংবাদমাধ্যমকে আমির বলেছিলেন, ‘২২ তারিখ (আজ) রংপুরের বিপক্ষে সর্বোচ্চটাই দেওয়ার চেষ্টা থাকবে। নিজেকে প্রমাণ করতে হবে।’
আমির নিজেকে প্রমাণের সুযোগটা আজ দারুণভাবেই নিলেন। প্রথম স্পেলে জোড়া আঘাতে ২ উইকেট তুলে নেওয়ার পর তৃতীয় ওভারে ১৭ রান খরচ করেও নিজেকে সামলে নিলেন দারুণভাবে। শেষ ওভারে রংপুরকে আবারও দিলেন জোড়া আঘাত। পরপর দুই বলে তুলে নিলেন ২ উইকেট। যার একটি পাকিস্তানের টেস্ট অধিনায়ক মিসবাহর।
৪-১-৩০-৪—আমিরের বোলিং পরিসংখ্যানটা কিন্তু প্রমাণ করল আরও অনেক কিছুই। স্পট ফিক্সিং কেলেঙ্কারির ঝড়ে এলোমেলো হয়ে যাওয়া জীবনেও যে নিজেকে হারিয়ে ফেলেননি, প্রমাণ তো হল সেটাও। স্বদেশি মোহাম্মদ হাফিজের মন্তব্যটাও হয়তো তাঁর মাথায় ছিল। পারফরম্যান্স দিয়ে জবাব দিয়ে দিলেন তাঁকেও।
মনে করিয়ে দিলেন সেই কথাটাও, ‘অপরাধকে ঘৃণা কর, অপরাধীকে নয়।’ নতুন জীবনের যে সংগ্রামটা আমির শুরু করেছেন, আজকের পারফরম্যান্সের পর তিনি চোখ রাখতে পারেন সুদূরেই।
২২ নভেম্বর,২০১৫/এমটি নিউজ২৪/আল-আমিন/এএস
�