সোমবার, ১৬ এপ্রিল, ২০১৮, ০৮:০৩:০২

‘নিজেকে এই সমাজের অংশ মনে করতে লজ্জা লাগছে’

‘নিজেকে এই সমাজের অংশ মনে করতে লজ্জা লাগছে’

৮ বছরের শিশু আসিফা বানুকে সাতদিন আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন করে খুন করা হয়। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি করা জম্বু-কাশ্মীমের কাঠুয়ায় এই ভয়াবহ ঘটনা দাগ কেটেছে অনেকের মনেই।  শারীরিক নির্যাতন এমন ঘটনা অনেকের ক্ষোভ বাড়িয়ে দিয়েছে। এমন নৃশংস ঘটনার প্রতিবাদে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কড়া নিন্দা জানিয়েছেন অনেকেই। কাঠুয়া জেলার রাসানা গ্রামের ৮ বছরের শিশু কন্যার  শারীরিক নির্যাতন ও খুনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন ভারতের ক্রিকেটাররা।

জম্মু-কাশ্মীরের কাঠুয়া শারীরিক নির্যাতন কাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ করলেন ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলি। সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন কোহলি।

৮ বছরের আসিফা বানুকে পাথর ছুড়ে হত্যার আগে  শারীরিক নির্যাতন করে স্থানীয় একটি মন্দিরের তত্ত্বাবধায়ক সাঞ্জি রাম, পুলিশ কর্মকর্তা দীপক খাজুরিয়া ও সুরেন্দ্র বর্মা, সাঞ্জি রামের বন্ধু পরভেশ কুমার ওরফে মন্নু, রামের নাবালক ভাতিজা ও ছেলে বিশাল জঙ্গোত্র ওরফে শম্মা। গত জানুয়ারিতে ন্যাক্কারজনক এই ঘটনা ঘটলেও অভিযুক্তদের এখনও বিচারের আওতায় আনা হয়নি।

ভিডিওতে তীব্র নিন্দা করে কোহলি জানান, ‘এগুলো খুবই বিরক্তিকর ঘটনা। এরকম একটা ঘটনা দেখা এবং তারপরও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্লিপ্ত থাকা কাপুরুষতা। সেই সমস্ত মানুষের পুরুষ বলে পরিচয় দিতেই লজ্জা করা উচিত।’

মুসলিম বাখেরওয়াল সম্প্রদায়ের শিশু আসিফাকে অপহরণ করে এক সপ্তাহ আটকে রেখে ধর্ষণের পর পাথর ছুড়ে হত্যা করা হয়। জানা যায়, আসিফাকে শারীরিক নির্যাতন পাশাপাশি ওই সাতদিন তাকে মাদক দিয়ে অজ্ঞান করে রাখা হয়েছিল। অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়েছে, রাসানা অঞ্চল থেকে সংখ্যালঘু যাযাবর সম্প্রদায়ের মানুষদের তাড়িয়ে দেয়ার জন্যই পরিকল্পিতভাবে শিশুটি অপহরণের পর শারীরিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। এই বর্বরোচিত শারীরিক নির্যাতন ও হত্যার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত মন্দির তত্ত্বাবধায়ক সাঞ্জি রাম তদন্ত কর্মকর্তাদের ঘটনার তদন্ত প্রভাবিত করতে নাকি চার লাখ ভারতীয় রূপি ঘুষও দিয়েছেন।

এমন ঘটনায় ধিক্কার জানিয়ে কোহলি বলেন, ‘আমার একটাই প্রশ্ন আছে। ঈশ্বর না করুন, যদি আপনাদের বাড়ির কারও সঙ্গে এরকম হতো, আপনারা কি চুপ করে দেখতেন? নাকি সাহায্যের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়তেন? বিষয়টাকে আপনারা এই জায়গা থেকে দেখুন। তাহলে আপনারা এভাবেই চুপচাপ দেখতেন, নাকি প্রতিবাদ করতেন? সকলে নীরব থাকেন এবং ভাবেন, এটা খুব স্বাভাবিক ঘটনা-এ কারণেই আমার মনে হয় এই ধরনের ঘটনা ঘটছে। একটা বাচ্চার উপর এমন নির্যাতন হলেও, আমরা অপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা করি। পুরুষরা যদি মনে করে এটা তাদের কুকর্মের এবং সেটা করে পার পেয়ে যাওয়ার সুযোগ বাড়াচ্ছে এবং যারা ক্ষমতায় রয়েছেন, তারা যদি আড়াল করার চেষ্টা করেন, তাহলে সেটা ভয়ঙ্কর। আমি স্তম্ভিত।’

ভারতীয় অধিনায়ক আরও যোগ করেন, ‘একজন মেয়ে ছোটখাট পোশাক পরলেই নাকি এরকম হতে পারে! এটা ওই মেয়েটির জীবন, তার সিদ্ধান্ত, তার পছন্দ। পুরুষ কেন নিজেকে সব সময় বাঁচিয়ে চলে? এমন ঘটনা মনকে চঞ্চল করে দেয়। এবার নিজেদের চিন্তাভাবনা গুলো বদলানোর সময় এসেছে। নিজেকে এই সমাজের অংশ মনে করতে লজ্জা লাগছে। দয়া করে নিজেরা নিজেদের সম্মান দিন।’

কোহলির আগে দিল্লির ওপেনার ও অধিনায়ক গৌতম গম্ভীর, হায়দ্রাবাদের ওপেনার শিখর ধাওয়ান, কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের অধিনায়ক রবীচন্দ্রন অশ্বিনরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। গৌতম গম্ভীর জানান, ‘কাঠুয়ার ঘটনায় ভারতের শুভবুদ্ধি ধর্ষিত হয়েছে। মিস্টার সিস্টেম, আপনার কি সাহস আছে এই ঘটনায় দোষীদের শাস্তি দেওয়ার? আমি আপনাকে চ্যালেঞ্জ করছি।’ ক্ষুব্ধ ধাওয়ান টুইট করেছেন, ‘ঈশ্বর আসিফাকে শান্তি দিন। যারা এই ঘৃণ্য কাজ করেছে, প্রকাশ্যে তাদেরও তিলে তিলে মারা উচিত। যাতে ওরা বুঝতে পারে, যার উপর এই নারকীয় অত্যাচার হয়, সে কতটা যন্ত্রণা ভোগ করে।’ এদিকে অশ্বিন লিখেছেন, ‘কোথায় যাচ্ছে দেশ। নষ্ট হচ্ছে সম্প্রীতির বাতাবরণ। আসিফার মতো দু’টো ফুটফুটে মেয়ের বাবা হিসেবে ঘটনাটা শোনার পর থেকেই হৃদয় জ্বলছে।’

তীব্রভাবে এই ঘটনার প্রতিবাদ করেছেন সাবেক ক্রিকেটার বিনোদ কাম্বলি। তিনি চিঠির ন্যায় লিখেছেন, ‘প্রিয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি রাতারাতি মুদ্রা বদলে ফেলতে পারেন। রাতারাতি ট্যাক্স আদায়ের সিস্টেম পরিবর্তন করতে পারেন। আপনি সরকারও বদলে দিতে পারেন রাতারাতি। এখন যদি আপনি এই জঘন্য  শারীরিক নির্যাতন সংস্কৃতি পরিবর্তন করতে না পারেন,   যদি সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারেন, তবে আমিও কিন্তু রাতারাতি আমার ভোট বদলে ফেলব! ২০১৯ কিন্তু বেশি দূরে নয়…।
এমটি নিউজ/এপি/ডিসি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে