বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৫, ০২:৫৩:১৪

আঘাত পাল্টা আঘাতের নাটকীয়তায় ভারত-দ.আফ্রিকার ৩য় টেস্ট

আঘাত পাল্টা আঘাতের নাটকীয়তায় ভারত-দ.আফ্রিকার ৩য় টেস্ট

অগ্নি পান্ডে, নাগপুর থেকে: খেলা শুরুর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার এক সাংবাদিক মজা করে বলছিলেন, ‘আমাদের স্পিনার হারমারের নাম বদলে হার্মলেস রাখা উচিত। কারণ, ওর স্পিন ভারতের কাছে একেবারেই ক্ষতিকারক নয়।’ ভুল প্রমাণ করে দিলেন দক্ষিণ অাফ্রিকার অফস্পিনার হারমার। জামঠার বাইশ গজে তিনি দেখিয়ে দিলেন তিনিও হতে পারেন ‘হার্মফুল’, ক্ষতিকারক। প্রতিপক্ষ ভারতীয় দলে যিনি সবচেয়ে ভাল স্পিন বোলিং খেলতে পারেন সেই চেতেশ্বর পুজারাকে যে বলে আউট করলেন তৃতীয় টেস্টের প্রথম দিনে, সেই বল আচ্ছা আচ্ছা ব‍্যাটসম‍্যান খেলতে পারতেন কি না তা নিয়ে বড় তর্কসভা হতেই পারে। ঠিক তেমনই অভিজ্ঞ মর্নি মর্কেল যে ডেলিভারিতে ফর্মে থাকা ওপেনার মুরলী বিজয়কে ফেরত পাঠালেন তা এক কথায় ‘আনপ্লেয়েবল’। দু’দুটো ডেলিভারি এক ধাক্কায় কাত করে দিয়ে গেল বিরাট কোহলির টসে জিতে আগে ব‍্যাট করতে নামা ভারতীয় দলকে। অনেকে বলতেই পারেন, কেন মর্নি মর্কেলের বাকি দুটো ডেলিভারি নয় কেন? কোন দুটো ডেলিভারি? যে দুটো ডেলিভারিতে লাঞ্চের পর ফিরে গিয়েছিলেন অজিঙ্কা রাহানে ও অধিনায়ক বিরাট কোহলি। কিন্তু নয়, তার কারণ হল, মর্কেলের যে অফ কাটারে রাহানে গুডলেংথে স্পটে পড়া বল শরীর থেকে অনেকদূরে ড্রাইভ করতে গিয়ে ব‍্যাট–প‍্যাডের মাঝখানে সুয়েজ খালের মতো ফাঁক তৈরি করে অফস্টাম্পে গলিয়ে দিলেন, সেখানে মর্কেলের সফলতার চেয়ে মনে হয় রাহানের ভুলটাই সবচেয়ে বড়। ঠিক সেরকমই মর্কেলের আরেকটি ডেলিভারি পড়ল ‘করিডর অফ আনসার্টেনিটিতে’। ভারত অধিনায়ক ভুল করে খোঁচাটা দিয়েই জমা হয়ে গেলেন উইকেটকিপার ভিলাসের দস্তানায়। যে ভুল বেশিরভাগ ব‍্যাটসম‍্যান করে থাকেন হামেশাই। কল‍্যাণীর কিউরেটর সুজন মুখার্জির সঙ্গে জামঠার কিউরেটর কার্লেকারের অালাপ আছে কি না জানা নেই। তবে তাঁদের তৈরি পিচের চরিত্র খানিকটা হলেও একইরকম। প্রথম দিনেই ভারতের ১০টি ও প্রোটিয়াদের ২টি উইকেট পড়ল! প্রথম দিনেই পিচ থেকে বলের সঙ্গে মাটি উঠে এল! আগে কখনও ভারতের মাটিতে েদখা যায়নি লাঞ্চের আগেই বিদেশি দলের অধিনায়ককে তিন স্পিনার ব‍্যবহার করে ফেলতে! বিরল দৃশ‍্য আই সি সি চেয়ারম‍্যানের শহরে। ডেল স্টেনবিহীন হাসিম আমলার এছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না। জামঠার বাইশ গজ ফেটে চৌচির। যা দেখে দিনের শুরুতে পিচ রিপোর্ট করতে গিেয় সানি গাভাসকার বলে ফেলেন, ‘দেখে মনে হচ্ছে কোল্ড ক্রিম লাগবে।’ এ কথা তো সানিই পারেন বলতে। টসে জিতে ভারত ভেবেছিল স্পিনে কাঁপু দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে বড় টার্গেট ঝুলিয়ে দিতে। কিন্তু জামঠার বাইশ গজে খেলতে গিয়ে ভারতীয় ব‍্যাটসম‍্যানরাও যে কেঁপে যাবেন তা কেউ ভাবতে পারেননি। বেঙ্গালুরুতে ওপেনার শিখর ধাওয়ান খানিকটা রানের মধে‍্য ফিরেছিলেন। নাগপুরে প্রথম ইনিংসে আবার ব‍্যর্থ। আরেক ওপেনার মুরলী বিজয় সত্যি ছন্দে আছেন। কিন্তু তাকে ফিরতে হয়েছে দুরন্ত এক বলে। মর্কেলের বলটি দেরিতে কাট করে ঢোকে। বুঝতে পারেননি বিজয়। পুজারা ধরে ছিলেন ইনিংস। কিন্তু হারমারের বলটি সত্যি ভারতীয় ইনিংসের অন‍্যতম সেরা ডেলিভারি। অধিনায়ক বিরাট কোহলি শুরুই করেছিলেন নিজের পরিচিত ছন্দে নয়। সাবলীল কোহলি ছিলেন না। আসল কারণ, জামঠার পিচ। তবে নিজের ভূলেই মর্কেলের রিভার্স সুইংয়ে খোঁচা না দিলেই পারতেন। রাহানে সম্পর্কে আগেই লেখা হয়েছে। লাঞ্চের সময় ভারতের ৮৫ রানে ২ উইকেট ছিল। তারপর রিভার্স সুইংয়ে মর্কেল ঘায়েল করে দেন ভারতীয় ব‍্যাটিং লাইন আপকে। যা চা–বিরতিতে গিয়ে দাঁড়ায় ৬ উইকেটে ১৪৯! কাঁপুনি ধরিয়ে দেন মর্কেল ও সাইমন হারমার। খানিকটা হলেও টেস্ট অভিষেক মাঠে রুখে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন বাংলার ঋদ্ধিমান সাহা ও সৌরাষ্ট্রের রবীন্দ্র জাদেজা। মূলত এই দুই ব‍্যাটসম‍্যানের জন‍্যই ভারত ২০০ রানের গণ্ডি অতিক্রম করে। জাদেজা অবশ‍্য তার ৩৪ রানের ইনিংসটা আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারতেন, রাবাদার বলে ইনসাইড এজ না হলে। ঋদ্ধি ফিরে গেলেন শর্ট মিড উইকেটে ডুমিনির অবিশ্বাস‍্য ক‍্যাচে। হারমারে বলে ৩২ রান করে। ভারত শেষ পর্যন্ত গুটিয়ে গেল ২১৫ রানে। কিন্তু মজার বিষয় হল, তারপর দিনের শেষ ৯ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকা ২ উইকেটে ১১। এটাই চেয়েছিল ভারতীয় দল। সত্যি কাঁপছে প্রোটিয়ারা। অশ্বিন ও জাদেজার বলে ফিরে গেছেন যথাক্রমে ওপেনার ভ‍্যানজিল ও নৈশপ্রহরী তাহির। ক্রিজে অপরাজিত থাকা প্রোটিয়া অধিনায়ক আমলার মুখ পাংশু হয়ে রয়েছে। তাহলে কি নাগপুরেও তিন দিনে শেষ? সেই প্রহর গোনা শুরু হয়ে গেল প্রথম দিন থেকেই। ২৬ নভেম্বর,২০১৫/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে