মঙ্গলবার, ১০ জুলাই, ২০১৮, ০৭:২২:১২

ডিজিটাল যুগে বিশ্বকাপের আগাম ফল জানিয়ে দিচ্ছে ‘মেসিন’!

ডিজিটাল যুগে বিশ্বকাপের আগাম ফল জানিয়ে দিচ্ছে ‘মেসিন’!

স্পোর্টস ডেস্কঃ বিশ্বকাপ ফটুবল আসরে আপনার প্রিয় দল জার্মানির বিদায়ে হতাশ হয়েছেন? দুঃখ করবেন না। সান্তনা পেতে পারেন এই ভেবে যে জার্মানি যদি কোয়ার্টার ফাইনালে উঠত, তা হলে বিশ্বকাপ জিতত তারাই। এমনটাই দাবি করছেন রাশিয়ান বিজ্ঞানী এবং কম্পিউটার প্রযুক্তিবিদরা। চলতি বিশ্বকাপে তাঁদের গণনা বহু ক্ষেত্রেই অভ্রান্ত হিসেবে প্রমাণিত হচ্ছে। এমনকি শেষ ষোলোতে কারা যাবে, কোয়ার্টার ফাইনালে কারা উঠবে ইত্যাদি বিশ্লেষণে চমকে দেওয়ার মতো ভবিষ্যদ্বাণী করছেন তাঁরা। মুলত এটা ডিজিটাল যুগের সুবিধা ভোগের একটি পন্থাই বলা যেতে পারে। ডিজিটাল যুগে বিশ্বকাপের আগাম ফল জানিয়ে দিচ্ছে ‘মেসিন’!

সহজ ভাষায় বললে, অতীতের বড় সংখ্যক অভিজ্ঞতাকে একত্র করে একটি যন্ত্রের মধ্যে দিলে, সেগুলোকে বিশ্লেষণ করে যন্ত্রটি কেমন ভাবে ভবিষ্যতের ঘটনাবলিকে আগেভাগে অনুমান করতে পারবে, মেশিন লার্নিং সেই বিজ্ঞান নিয়ে কাজ করে। বর্তমানে বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থার রিসার্চ ল্যাবরেটরিতে বিজ্ঞানীরা মেশিন লার্নিংকে প্রয়োগ করছেন অভিনব এবং আপাত ভাবে অবিশ্বাস্য কিছু সমস্যার সমাধানে। হৃদরোগ আক্রমণ করার আগেই সতর্কবার্তা বা অপরাধ ঘটবার বেশ কিছু আগেই পুলিশকে আগাম সতর্কবার্তা দিতে হবে। মুশকিল আসান হিসেবে মেশিন লার্নিং! তা বলে বিশ্বকাপের ফলাফলকেও কি আগাম বলে দেওয়া সম্ভব?

বিনিয়োগ কোম্পানি গোল্ডম্যান স্যাক্‌স-এর অর্থনীতিবিদ এবং রাশিবিজ্ঞানীরা মিলে প্রতি বিশ্বকাপের সময়ে একটি প্রতিবেদন পেশ করেন। তাঁদের গণনা অনুসারে, বিশ্বকাপ জেতার সম্ভাবনা এ বার সব চেয়ে বেশি ছিল ব্রাজিলের। তবে গোল্ডম্যান স্যাক্‌স ফাইনালে ব্রজিলের বিরুদ্ধে জার্মানিকে বাজি ধরেছিল। সম্ভবত এই অঘটনের বিশ্বকাপ অনেক অঙ্কেরই গরমিল করে দিয়েছে। 

কিন্তু রাশিয়ান বিজ্ঞানের এই ধরনের মডেলের মজাটা হল, প্রতিটা খেলা শেষ হওয়ার পরেই সেই ফলাফলকে নিজের সিস্টেমের মধ্যে বিশ্লেষণ করে নিয়ে তার ভিত্তিতে নতুন করে গণনা শুরু করা যায়। এবং এই বার বার করে বাস্তবে ঘটে যাওয়া ফলাফল থেকে শিখতে শিখতে মডেলটি হয়ে ওঠে আরও বেশি নিখুঁত। আপাতত বিজ্ঞানীরা তাই ব্যস্ত নকআউটের ফলাফল দিয়ে মডেলকে আরও ‘শিক্ষিত’ করে তুলেছে। যাতে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে তুলনামূলক ভাবে বেশি ত্রুটিহীন ফলাফল দেওয়া যেতে পারে। তবে তাঁদের থেকেও বেশি চমকপ্রদ গণনা করেছেন জার্মানির বিজ্ঞানীরা।

জার্মানির ডর্টমুন্ডের একটি কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু গণিতবিদ ও কম্পিউটার বিজ্ঞানী মিলে অতীতের বিভিন্ন ফুটবল ম্যাচ নিয়ে নিয়মিত বিশ্লেষণ চালান। ফলস্বরূপ, ২০১৪ সালে তাঁরা নির্ভুল ভাবে বলে দিতে পেরেছিলেন যে জার্মানি বিশ্বকাপ জিতবে। শুধু তা-ই নয়, ২০১২ সালের ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের ফলাফলও নিখুঁত ভাবে মিলিয়ে দিয়েছিলেন তাঁরা। এমনকি কোন কোন দল ফাইনাল খেলবে সেটাও বলে দিয়েছিলেন হুবহু।

এ দিকে, ফিফার নিজস্ব রাশিবিজ্ঞানীরা আবার জার্মানিকে ফেভারিট বলেছিলেন। তিন দলের বিজ্ঞানীরাই জার্মানিকে একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গাতে রেখেছিলেন, অথচ তারা প্রথম রাউন্ডেই বিদায় নিয়েছে। এটাকে হয়তো গণনার একটা দুর্বলতা বলা যায়। র‌্যান্ডম ফরেস্টের বৈশিষ্ট্য হল, অব্যবহিত অতীতের ওপর অতিরিক্ত গুরুত্ব প্রয়োগ করে। ২০১৪ সালে জার্মানি বিশ্বকাপ জিতেছিল বলেই এ বারেও তাকে অত দূর এগোতেই হবে, এমন সিদ্ধান্ত সকলেই টেনেছেন। আবার কোনও দলই জাপানকে গুরুত্ব দেয়নি। কারণটাও একই। 

পূর্বেও ইতিহাস জাপানের উজ্জ্বল ভূমিকার কথা কিছু বলছে না। গোল্ডম্যান স্যাক্‌স তাই স্বীকার করেছে, ফুটবলের মতো সম্ভাব্যতার একটি শিল্পে এ রকম অতিরিক্ত অতীত নির্ভরতা ভুল পথে চালিত করতে পারে।

সারা পৃথিবী জুড়ে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, মেশিন লার্নিং-এর গবেষকেরা ভবিষ্যৎকে পড়ে ফেলার চ্যালেঞ্জে সামিল হয়েছেন। কিন্তু ফুটবলের মতো খেলায় অনিশ্চয়তার যে নিজস্ব সৌন্দর্য আছে, সেটাকে বাদ দিয়ে আগে থেকেই ম্যাচের ফলাফল আগাম মিলিয়ে দিলে তা বুকিদের লাভক্ষতির কাজে সহায়ক হতে পারে, কিন্তু ফুটবলপ্রেমীদের মন ভরাবে কি? অনিশ্চয়তার মধ্যেই হয়তো মানুষ সব থেকে বেশি নিশ্চিন্ত বোধ করে। ভবিষ্যৎদ্রষ্টার ভূমিকায় সে স্বস্তি পাবে তো?

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে