স্পোর্টস ডেস্ক : ২০ বছরে বাংলাদেশ যা পারেনি; দেড় বছরে সেটা করেছে আফগানিস্তান! আপাতদৃষ্টিতে দুটি দেশের কোনো তুলনা হয় না। আফগানিস্তান হলো দীর্ঘ যুদ্ধে ক্ষতবিক্ষত একটি দেশ। গুলি-বোমার শব্দ আর বারুদের গন্ধে যাদের প্রতিটি মুহূর্ত কাটে। অন্যদিকে বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর শীর্ষে আছে বাংলাদেশ। ক্রিকেট এদেশে ব্যাপক জনপ্রিয়। আছে সম্ভাবনাময় অনেক ক্রিকেটার। এত কিছু থাকার পরেও ২০ বছর ধরে টেস্ট খেলা বাংলাদেশ যা পারেনি, সেটা করে ফেলেছে মাত্র দেড় বছর আগে টেস্ট মর্যাদা পাওয়া আফগানিস্তান।
গতকাল সোমবার বাংলাদেশকে বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে আফগানিস্তান টেস্ট দলের ১২ জন সদস্য দেশে ফেরার বিমানে উঠেছে। বাকী তিনজনের সঙ্গে যোগ দিয়েছে টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে আসা ১৪ জন ক্রিকেটার। পাঠক, ব্যাপারটা এখন নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি দেড় বছরে টেস্ট-ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টির জন্য আলাদা দল গঠন করতে পেরেছে। ১৯৯৯ সালে টেস্ট মর্যাদা পাওয়া বাংলাদেশ ২০ বছরেও সেটা পারেনি!
এই কারণে ঘুরে ফিরে একই মুখ দেখা যায় তিন ফরম্যাটে। সৌম্য-লিটন-সাব্বিররা স্বল্প দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটের জন্য পারফেক্ট চয়েজ হলেও তাদেরকে আনা হয় টেস্টে। বারবার ব্যর্থ হয়ে মন ভেঙে যায় এই তরুণদের। বাংলাদেশের ক্রিকেটার ব্যবস্থাপনা আগেও দুর্বল ছিল, এখনো আছে। বারবার বলেও ঘরোয়া ক্রিকেটকে আন্তর্জাতিক মানের করে তোলা যায়নি। টেস্টে সফল দেশ বাকি দুই ফরম্যাটে সাফল্য আসবে, এটা বুঝতে বাংলাদেশের ক্রিকেট কর্তাদের সময় লেগেছে 'মাত্র' ২০ বছর; আফগানিস্তানের কাছে ২২৪ রানে হারের পর।
আরও একটা পরিসংখ্যান দেওয়া যাক। বাংলাদেশের মাটিতে শুধু টেস্ট আর টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতেই মোট ২৯ জন আফগান ক্রিকেটার এসেছেন। বাংলাদেশও অতীতে বিশাল বহর নিয়ে সফরে গেছে। কিন্তু পরিচিত মুখ ব্যতীত বাকীদের বসে থাকতে হয়েছে সাইডবেঞ্চে। আবু জায়েদের কথাই ধরা যাক। পুরো বিশ্বকাপ বসে থেকে বাদ পড়লেন শ্রীলঙ্কা সফরে। এভাবেই প্রতিভা নষ্ট হয় এদেশে। আর আফগানরা গর্ব করে বাংলাদেশি সাংবাদিকদের বলে, 'আমাদের হাতে আরও ১০ জন রশিদ খান আছে। কারণ আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেট শক্তিশালী।'
বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেট মানে নামকাওয়াস্তে খেলা। প্রায় সব ম্যাচ আগে থেকেই ফিক্স হয়ে থাকে। সাবেক কোচ চন্দিকা হাথুরুসিংহে তো এসব কারণেই ঘরোয়া ম্যাচ দেখতেন না। বিপিএলের ৬ আসর হয়ে গেছে, প্রচুর নামীদামী বিদেশি তারকা এসেছে। কিন্তু একজন ক্রিকেটারও কি উপহার দিতে পেরেছে এই ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট? পারেনি। আশ্চর্যের বিষয় হলো, টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার ২০ বছর পরেও এসব অভিযোগ শুনতে হয়! অন্যদিকে গুলি-বোমার শব্দে অনুশীলন করা আফগানিস্তানের পাইপলাইন কতটা শক্তিশালী! কারণ তারা টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পরেই বুঝেছে, তাদের কী করতে হবে।
বাংলাদেশের জাতীয় দলের শীর্ষ পাঁচ তারকার কেউ একজন অসুস্থ হলে বা ছুটিতে থাকলেই পুরো দলের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। নির্বাচকদের কপালে ভাঁজ পড়ে; সমর্থকেরা দিশেহারা হয়ে যান। অথচ পার্শবর্তী দেশ ভারতের একটি 'বি-টিম' আছে। দুর্বল দলের বিপক্ষে শীর্ষ খেলোয়াড়দের বিশ্রাম দিয়ে তার চোখ বন্ধ করে সেই 'বি-টিম' নামিয়ে দিতে পারে। শীর্ষ পাঁচ তারকা একে একে অবসরে গেলে বাংলাদেশের ক্রিকেটের কী অবস্থা হবে তা ভাবলে এখন শিউরে উঠতে হয়!