স্পোর্টস ডেস্ক : বুধবার রাতে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের শুরুতে সেই সব সোনালী সাফল্যকে স্লান করতে পারেননি আমিনুল ইসলাম বিপ্লব।
অংকের হিসাবে আর পরিসংখ্যানে তার অভিষেকে ১৮ রানে ২ উইকেট হয়তো আহামরি কোনো কৃতিত্বও নয়। কিন্তু অন্যভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করলে এই তরুণের এই বোলিং ফিগার ও ৪ ওভারের স্পেলটি অনেক তাৎপর্যপূর্ণ। অনেক আশা জাগানো।
বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশে বাঁহাতি স্পিনারের ছড়াছড়ি। সেই এনামুল হক মনি, মোহাম্মদ রফিক, আব্দুর রাজ্জাক, ইলিয়াস সানি, মাঞ্জারুল ইসলাম রানা, সাকিব আল হাসান, মোশাররফ রুবেল, আরাফাত সানি, তাইজুল ইসলাম, সাঞ্জামুল ইসলাম, নাজমুল অপু- কত নাম।
পাশাপাশি নাইমুর রহমান দুর্জয়, সোহাগ গাজী, মেহেদি হাসান মিরাজ, নাইম হাসানরাও বারবার সাফল্য বয়ে এনেছেন। কিন্তু বারবরই একজন লেগ স্পিনারের হাপিত্যেশ ছিল। মাঝে তানভির হায়দার তারও আগে অলক কাপালি এবং প্রথম জীবনে মোহাম্মদ আশরাফুল মাঝে মধ্যে ঝলক দেখালেও একজন লেগ স্পিনারেরর অভাব ছিল সবসময়।
আজকাল প্রায় তিন ফরম্যাটেই একজন করে লেগ স্পিনারের ছড়াছড়ি সব দলে। কিন্তু বাংলাদেশ একমাত্র দল ছিল, যে দলে তিন-চারজন স্পিনারের ছড়াছড়ি থাকলেও একজন লেগব্রেক গুগলি বোলার ছিল না। অবশেষে আজ সেই লেগ স্পিনারের দেখা মিলল।
শরীয়তপুরের ২০ বছর বয়সী আমিনুল ইসলাম বিপ্লব আবির্ভাবে আহামরি কিছু করতে না পারলেও দেখিয়ে দিয়েছেন, তার সামর্থ আছে ভালো জায়গায় বল করার। অযথা তেড়েফুড়ে বাড়তি কিছু করার চিন্তা ও চেষ্টা না করে যতটা সম্ভব লক্ষ্য ও নিশানা ঠিক রেখে এক জায়গায় বল ফেলার চেষ্টাও ছিল এ তরুণের।
সাধারণত লেগ স্পিনারদের যে বড় সমস্যা থাকে, বিপ্লবের মধ্যে আজ প্রথম ম্যাচে তা দেখা যায়নি। বেশির ভাগ লেগি এক ওভারে দু থেকে তিনটি ভালো ডেলিভারি দিয়ে হঠাৎ একটি ‘লং হফ’ বা খাটো লেন্থে বল করে বসেন। আর তাতেই মার খান। কিন্তু বিপ্লব তা করেননি। খাটো লেন্থে বল ফেলেননি বললেই চলে। লেগস্পিনের পাশাপাশি ফ্লিপার ও গুগলিও ছুড়েছেন।
দ্বিতীয় উইকেটটি পেয়েছেন ফ্লিপারে। সবচেয়ে বড় কথা অধিনায়ক আর নিজে মিলে যে ফিল্ডিং সাজিয়েছেন, সেই অনুযায়ী বল করে গেছেন। কখনই মনে হয়নি ক্যারিয়ারের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলছেন জাতীয় দলের হয়ে। বার দুয়েক মিস ফিল্ডিং না হলেও হয়তো ১৪/১৫ রানের বেশি উঠত না তার স্পেল থেকে।
মোদ্দাকথা, যেমনটা চাওয়া ছিল, আজ শুরুতে তেমনটাই দেখা মিলল। সমালোচকরা বারবার ব্যাটসম্যান বিপ্লবকে লেগি মানতে চাননি। চাইলেও সেভাবে মূল্যায়ন করেননি। বারবার বলেছেন আরে, বিপ্লবতো আগে ব্যাটসম্যান। পরে লেগব্রেক বোলার। সে কী করবে? দরকার ছিল একজন জেনুইন লেগির। কিন্তু আমিনুল বিপ্লব দেখিয়ে দিলেন মূলত ব্যাটসম্যান হলেও আমার লেগস্পিনটাও মন্দ না। ভালোই।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে লেগস্পিনার মানেই ‘উইকেট টেকিং বোলার।’ জুটি ভাঙার অস্ত্র। ব্রেক থ্রু উপহার দেয়ার হাতিয়ার। খুব বাড়াবাড়ি হয়তো হবে না, বিপ্লবের মাঝে তা আছে। ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারলে আর এই শুরুর ভালো করাকে অনুপ্রেরণার প্রতীক ভেবে আগানোর চেষ্টা করলে ‘ব্যাটসম্যান ’ বিপ্লবই হয়তো একদিন নামি লেগস্পিনার হবেন।