মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:৩৭:০৭

মধ্যরাতের নাটক! হারতে হারতে যেভাবে ঘুরে দাঁড়ালেন সৌরভ গাঙ্গুলী

মধ্যরাতের নাটক! হারতে হারতে যেভাবে ঘুরে দাঁড়ালেন সৌরভ গাঙ্গুলী

স্পোর্টস ডেস্ক : প্রত্যাবর্তন কাকে বলে, ক্রিকেট জীবনেই দেখিয়ে দিয়েছিলেন সৌরভ গাঙ্গুলী। ভাবা যায়নি প্রশাসক হিসেবেও প্রত্যাবর্তনের অবিশ্বাস্য উদাহরণ তৈরি করবেন তিনি। হার-না-মানা মনোভাবে ছিনিয়ে নেবেন হাতের মুঠো থেকে বেরিয়ে যাওয়া ম্যাচও।

ভারতের বানিজ্য নগরীতে বেশ কিছু মনে রাখার মতো ম্যাচ রয়েছে প্রিন্স অফ ক্যালকাটার। কিন্তু রোববার রাতে বাইশ গজের বাইরে যে ভাবে ম্যাচ জিতলেন তা অভূতপূর্ব। কারণ, এই খেলায় ব্যাট বা বলকে হাতিয়ার হিসেবে পাননি। শাণিত ক্রিকেটবুদ্ধি আর অদম্য আত্মবিশ্বাসের জোরেই হারা বাজি পাল্টে দিলেন বাংলার মহারাজ।

রাজ্য সংস্থাগুলোর বেসরকারি বৈঠকে নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন ও অনুরাগ ঠাকুর নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া করেই এসেছিলেন। ঠিক ছিল, শ্রীনিবাসনের প্রার্থী সাবেক ক্রিকেটার ব্রিজেশ প্যাটেলকে প্রেসিডেন্ট করা হবে। আর অমিত শাহের পুত্র জয় শাহ হবেন সচিব।

শ্রীনিবাসন-অনুরাগ কেউই এখন লোধা সংস্কারের জেরে ক্রিকেট প্রশাসনে আসতে পারবেন না। কিন্তু, মাঠের বাইরে থেকে নিয়ন্ত্রণের সুযোগ ছাড়তে কোনও ভাবেই রাজি ছিলেন না শ্রীনিবাসন। তার উপর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলে ফের বোর্ডের প্রতিনিধিত্ব করার ব্যাপারে আগ্রহী তিনি। বোর্ড প্রশাসনে আসতে না পারলেও আইসিসিতে যেতে অসুবিধা নেই তার। 

এদিকে, বিজেপির হাইকমান্ড আবার প্রেসিডেন্ট বেছে নেওয়ার গোটা ব্যাপারটার তদারকির দায়িত্ব দিয়েছিল সাবেক বোর্ড প্রেসিডেন্ট অনুরাগকে। তা আগের বোঝাপড়া অনুসারে প্রেসিডেন্ট পদে ব্রিজেশ ছিলেন হট ফেভারিট। ছেলেভুলোনো পুরস্কারের মতো আইপিএলের চেয়ারম্যান হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয় সৌরভকে। 

কিন্তু অন্য কোনও পদে বসবেন না, সিএবি প্রেসিডেন্ট দাদা সাফ বুঝিয়ে দেন। নেওয়ার হলে প্রেসিডেন্ট পদই তিনি নেবেন, অন্য কিছু নয়। মনোমত বৈঠক না চলায় একসময় তিনি বেরিয়েও আসেন। রবিবারের সভাতেও পছন্দের পদ নিয়ে অনমনীয় ছিলেন। কোনও ভাবেই প্রেসিডেন্ট ছাড়া অন্য পদ নিতে চাননি। তা তিনি সভা ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময়ও বোঝেননি কোন জাদুবলে এরপর পাল্টে যাবে যাবতীয় সমীকরণ।

ঘটনা হল, নাটক শুরু হয় এরপরই। সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রতিনিধিরা হঠাৎই বিদ্রোহ করে বসেন শ্রীনির প্রার্থী ব্রিজেশের বিরুদ্ধে। তাদের যুক্তি, শ্রীনি ক্রিকেটদুনিয়ায় রীতিমতো কলঙ্কিত এক ব্যক্তি। গত কয়েক বছর ধরে বোর্ডের দুর্নামের জন্য তিনিই দায়ী। লোঢা সংস্কারের নেপথ্যেও শ্রীনির প্রতি অনাস্থাই ছিল কারণ। 

সেই শ্রীনির প্রার্থীকেই যদি বোর্ডের প্রেসিডেন্ট হিসেবে মেনে নেওয়া হয়, তবে তাতে অত্যন্ত খারাপ বার্তা যাবে। বোর্ডের সম্মানও ধূলোয় লুটিয়ে যাবে। উত্তর-পূর্ব ভারতের বিজেপি শাসিত রাজ্যের ক্রিকেট সংস্থার প্রতিনিধিরাই মূলত শ্রীনি-বিরোধী এই হাওয়া তোলেন। আর এই আবহেই প্রবল ভাবে চর্চায় ফিরে আসেন সৌরভ।

ব্রিজেশের তুলনায় সর্বোচ্চ পর্যায়ে অনেক বেশি খেলেছেন সৌরভ। দেশের সফলতম অধিনায়কদের মধ্যেও তিনি পড়েন। তার উপর গত পাঁচ বছর ধরে তিনি সিএবি প্রশাসনে রয়েছেন। ফলে, ক্রিকেট প্রশাসন সম্পর্কেও রীতিমতো ধারণা রয়েছে। তা ছাড়া সৌরভের ভাবমূর্তি স্বচ্ছ। কোনও রকম কালি তার গায়ে লাগেনি। 

শ্রীনির প্রার্থী বলে পরিচিত ব্রিজেশ সম্পর্কে যা একেবারেই বলা যাবে না। আর ব্রিজেশ প্রেসিডেন্ট হওয়া মানে কোথাও গিয়ে নেপথ্যে থাকা শ্রীনির চেহারাই ক্রিকেটপ্রেমীদের চোখে ভাসবে। বলা হবে, লোঢা সংস্কার পুরোটাই ফালতু। শ্রীনি-বিরোধী এই হাওয়া এক সময় এমন চেহারা নেয় যে উদ্বিগ্ন অনুরাগ ঠাকুর যোগাযোগ করেন বিজেপি হাইকমান্ডের সঙ্গে। 

এরপর সেখান থেকে আসরে নামেন বিজেপি সভাপতি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয় অনুরাগকে। সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রতিনিধিদের আবেগকে সম্মান জানাতেই এরপর সৌরভকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে মেনে নেওয়া হয়। স্বয়ং সৌরভ যদিও ব্যাপারটা জানতেনই না। তিনি বাইরে আসার সময় ব্রিজেশকেই ভাবী প্রেসিডেন্ট দেখে এসেছিলেন। 

যখন ফের সভায় প্রবেশ করেন, তখন দেখেন একশো আশি ডিগ্রি পাল্টে গিয়েছে সবকিছু। শ্বাসরুদ্ধকর থ্রিলারের মতোই চিত্রনাট্যে ঘটেছে অদ্ভুত মোচড়। আর তার জেরে বাংলার মহারাজ বসতে চলেছেন ভারতীয় ক্রিকেট সাম্রাজ্যের সিংহাসনে। সূত্র : এবিপি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে