সোমবার, ১১ নভেম্বর, ২০১৯, ০৯:২৬:৩২

এসএসসিতে 'ফেল' করার পর যেভাবে ক্রিকেটার হয়ে ওঠেন নাঈম

এসএসসিতে 'ফেল' করার পর যেভাবে ক্রিকেটার হয়ে ওঠেন নাঈম

রায়হান মাসুদ : মোহাম্মদ নাঈম শেখের সাথে আমার যখন প্রথম যোগাযোগ হয়, সেটা ২০১৭-১৮ মৌসুমে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ চলাকালীন। লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জের হয়ে ১২ ম্যাচে ৪৬.৩৩ গড় ও ৮২ স্ট্রাইক রেটে করেছিলেন ৫৫৬ রান।

কিন্তু রানের হিসেবে নয়, নাঈম শেখের সাথে যখন কথা হয়েছিল তখন তিনি বলেন তিনি হতে চান 'ইম্প্যাক্টফুল' ক্রিকেটার। অর্থাৎ রানের খাতায় এগিয়ে থাকার চেয়ে ইনিংসে প্রভাব বিস্তার করে এমন ইনিংস খেলাটাই তার পছন্দ।

টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান হওয়ার কারণে শুরুটা ধীরে করা তার স্বভাবেই আছে কিন্তু তার ব্যাটিংয়ের ধরণ আগ্রাসী। ২০১৮-১৯ মৌসুমে নাঈম লেজেন্ডস অফ রুপগঞ্জের হয়ে ১৬ ম্যাচে ৩ সেঞ্চুরি ও ৫ ফিফটিতে ৮০৭ রান করেন ৫৩.৮০ গড় ও ৯৪.৩৮ স্ট্রাইক রেটে।

সাক্ষাৎকার নেয়ার খাতিরে তার সাথে যখন কথা হয় তখন তিনি বলেন, টপ অর্ডারের ব্যাটসম্যানদের সবচেয়ে বড় কাজ নিচের ব্যাটসম্যানদের জন্য ভিত্তি তৈরি করা, অর্থাৎ তাদের কাজ সহজ করে তোলা।

শুরুটা ২০১৮ অনুর্ধ্ব ১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ দিয়ে। বিশ্বকাপে দলে ঢোকার আগেই তাকে নিয়ে তোলপাড় ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওই টুর্নামেন্টের বড় রান সংগ্রাহকদের তালিকায় তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি নজর কাড়লেন ভারত-বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি সিরিজে এসে। সিরিজের শেষ ম্যাচে এসে দেখা গেলো তার আগ্রাসি ব্যাটিংয়ের স্বরূপটিও। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ খেলা টি-২০ স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যানদের ভিড়ে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের সবচেয়ে সফল ব্যাটসম্যান নাঈম

৩ ম্যাচে তিনি রান তুলেছেন মোট ১৪৩। গড় ৪৭.৬৬, স্ট্রাইক রেট ১৩৩.৬৪। শেষ ম্যাচেও দু'দলের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তার স্কোরটাই ছিল সর্বোচ্চ, ৮১ রান। ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ বিশ্বের যে কোনো কন্ডিশনে চ্যালেঞ্জিং।

বিশ্বের সেরা একটি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ ভারতে ক্রিকেটারদের শাণিত করে তোলে। আইপিএলে আটটি দল খেলে থাকে, যার মধ্যে প্রতি ম্যাচে একাদশে সাতজন ভারতীয় ক্রিকেটার আবশ্যকভাবেই প্রতিটি ম্যাচ খেলে থাকেন।

এই হিসেবে ভারতে টি-টোয়েন্টির আন্তর্জাতিক মানের একটি টুর্নামেন্টে যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে ৫৬ জন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটার খেলেন। এদের মধ্যে খেলেই সিরিজের শেষ ম্যাচে এসে নিজেকে মেলে ধরলেন নাঈম।

নাগপুরে তিনি ৮১ রানের একটি ইনিংস খেলে সবাইকে ছাপিয়ে গিয়েছেন রানের তালিকায়। যদিও প্রথম দুই ম্যাচে ভালো শুরু করলেও, ইনিংস লম্বা করতে পারেননি, কিন্তু সেরা পাঁচ ব্যাটসম্যানের তালিকায় আর কোনো বাংলাদেশী ক্রিকেটার নেই।

শ্রেয়াস আইয়ার ৩ ম্যাচে করেছেন ১০৮ রান। রোহিত শর্মা ৩ ম্যাচে করেছেন ৯৬ রান। শেখর ধাওয়ান সমান ম্যাচ খেলে তুলেছেন ৯১ রান। লোকেশ রাহুল করেছেন ৭৫ রান।

পরীক্ষায় ফেল করে ক্রিকেটে মনোযোগ: ২০১৬ সালে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পেরে নাঈম যোগ দেন ফরিদপুরের একটি ক্রিকেট কোচিং ক্লাবে। সেখান থেকেই তার ক্রিকেট যাত্রা শুরু।

নাইমের শৈশবের কোচ মোস্তফা বশির বলেন, "২০১২-১৩ সালের ঘটনা, তখন ফরিদপুরে যারা বল জোরে মারতে পারতো তাদের মধ্যে নাইম ছিল একজন, তখনও কোনো দলে ছিল না সে। পারিবারিক কারণেই খেলতে পারেনি, টেপ টেনিস বল দিয়ে ক্রিকেট খেলতো তখন।"

কোচ তার সাথে দেখা হওয়ার পর তাকে অনুশীলন করার পরামর্শ দেন। বশির বলেন, "২০১৭ সালে নারায়ণগঞ্জের সাথে একশো করার পর ম্যান অফ দা সিরিজ হয়, এরপর নাইম ডিভিশনাল দলে সুযোগ পায়।"

২০১৬-১৭ সালে জেলা দলে খেলার সুযোগ পান। বশির বলেন, শুরুতে নাঈমের পরিবার পড়ালেখা করানোর প্রতি বেশি আগ্রহী ছিল, কিন্তু মাধ্যমিকে যখন ব্যর্থ হন নাইম, এরপর আরো একাগ্রতার সাথে ক্রিকেটে মনোযোগী হন।

ফরিদপুর জেলার হয়ে সর্বোচ্চ রান করার পর এক বছর আগে ঢাকা বিভাগের হয়ে খেলে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হন। ২০১৬ সালে চ্যালেঞ্জ কাপে অংশ নিয়ে টুর্নামেন্টের সেরা ব্যাটসম্যান হওয়ার পর সরাসরি সুযোগ আসে বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-১৯ দলে।

২০১৮ সালে নিউজিল্যান্ডে যান বিশ্বকাপ খেলতে। ঘরোয়া লিগে টানা দুই মৌসুম ৫৫৬ ও ৮০৭ রান করার পর হাই-পারফরম্যান্স দলে ও বাংলাদেশ 'এ' দলে সুযোগ পান তিনি। আফগানদের বিপক্ষে 'এ' দলের সিরিজে শেষ ওয়ানডেতে খেলেন ১২৬ রানের ইনিংস।

নাঈম শেখ ভারত সফরের আগেও ডাক পেয়েছেন জাতীয় দলে। আফগানিস্তান ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম পর্বের পর তাকে দলে নেয় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচকরা।

ত্রিদেশীয় সিরিজের আগে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রস্তুতি টি-টোয়েন্টিতে বিসিবি একাদশের হয়ে ১৪ বলে ২৩ রান করেছিলেন নাঈম। সূত্র : বিবিসি বাংলা

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে